কোচিংবাণিজ্য by একরামুল হক শামীম

কোচিংবাণিজ্য নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু যে বাণিজ্যের শিকড় অনেক গভীরে, নানাবিধ স্বার্থ যেখানে জড়িত তার মূলোৎপাটন কি এতই সহজ! ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কোচিংবাণিজ্য বন্ধের দাবিতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছিল।


এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগ একটি রুল জারি করেন। কোচিংবাণিজ্য বন্ধ করে কেন সরকারি পরিপত্র জারি হবে না তাই জানতে চাওয়া হয় সেই রুলে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৪ জুন 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিংবাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা-২০১২' চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা এখন থেকে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে ও প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াতে না পারলেও অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানো যাবে। ফলে এটি স্পষ্ট যে কোচিং বন্ধ হচ্ছে না। কেবল কোচিংয়ের ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। অভিভাবকদের সম্মতিসাপেক্ষে টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারবেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পিছিয়ে থাকা বা দুর্বল শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য বিষয়প্রতি শিক্ষকরা মহানগর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা, উপজেলাসহ অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নিতে পারবেন। এজন্য প্রতি বিষয়ে কমপক্ষে ১২টি করে ক্লাস নিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নীতিমালা অনুযায়ী কোচিংবাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। শিক্ষকরা একদিকে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরের শিক্ষার্থীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন, অন্যদিকে যারা শিক্ষকতা পেশায় জড়িত নন তারা তাদের কোচিং পড়ানো ইচ্ছামতো অব্যাহত রাখতে পারবেন। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নীতিমালাটি কেবলই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিংবাণিজ্য বন্ধে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলোর কোচিংবাণিজ্য বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নীতিমালার ইতিবাচক দিক হলো এতে কোচিংবাণিজ্য বন্ধে প্রাথমিক পদক্ষেপটা নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে সামনে এর সম্প্রসারণ সম্ভব হবে। কোচিংবাণিজ্যের কথা উঠলেই শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর প্রসঙ্গ আসে। বেতন-ভাতা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। কোচিংয়ে পড়ানোকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে দেখে থাকেন শিক্ষকরা। ফলে শিক্ষকদের আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে হুট করে কোচিং পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়াও কঠিন কাজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার মাধ্যমে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর কোচিং পড়ানো বন্ধ হলে প্রভাবিত হয়ে নম্বর কমবেশি দেওয়ার ঘটনা কমবে। এমনিতেই প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় কোচিং বা প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের বেশি মার্কস দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত হলেও তার কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নীতিমালা না মানলে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা কোথায় নালিশ করলে এ বিষয়ে প্রতিকার পাবে তা স্পষ্ট নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে দিতে পারে। কোচিংবাণিজ্য বন্ধে শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের ভূমিকা জোরালো হওয়া উচিত। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদেরও উচিত ক্লাসে অধিক মনোযোগী হওয়া।
 

No comments

Powered by Blogger.