মিয়ানমার সীমান্তে বিদেশিরা নিষিদ্ধ

মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় বিদেশিরা যাতে না যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্সের কক্সবাজার অফিস ও শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো আপত্তি নেই।


তবে তিনি শরণার্থী শিবিরের বাইরে টেকনাফ বা সীমান্ত এলাকায় যাবেন এমনটা সরকার প্রত্যাশা করে না। ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল মঙ্গলবার এ খবর জানায়। এদিকে ইউএনএইচসিআরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্সের সাম্প্রতিক সীমান্ত এলাকা সফর নিয়ে গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোরালো আপত্তি তোলে। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে সতর্ক করার পাশাপাশি জানানো হয়, প্রয়োজনে তাঁকে এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জানানো হবে। গতকাল ক্রেইগ স্যান্ডার্সকে সীমান্তে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে ইউএনএইচসিআরের ঢাকা কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। ওই কার্যালয়ের মুখপাত্র জিং সং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
পরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিকে টেকনাফ সীমান্তে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিনি টেকনাফ সীমান্তে কেন যাবেন? তিনি কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর অফিস এবং শরণার্থী শিবিরে যেতে পারেন। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।'
ওই কূটনীতিক আরো বলেন, 'শুধু ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি নন, সব বিদেশির জন্যই সীমান্ত এলাকায় যাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ কিছু নির্দেশনা আগে থেকেই ছিল। আমরা চাই না, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে কোনো বিদেশি যাক। তা ছাড়া এখন সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা অস্থির। মিয়ানমার থেকে আসা তিন-চার লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি অবস্থান করছে। তাদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।'
ওই কূটনীতিক দাবি করেন, অন্য বিদেশিদের জন্য যে নিয়ম ইউএনএইচসিআরের ক্ষেত্রেও তা অনুসরণ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের ওই সংস্থাটির প্রতিনিধির ব্যাপারে আলাদা করে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে যা কিছু করা হচ্ছে তা স্বাভাবিক নিয়মে নিরাপত্তার স্বার্থেই করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবিক। সীমান্তে তাদের চিকিৎসা সেবা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন করে শরণার্থী নিতে বাংলাদেশ অপারগ। বাংলাদেশ এসব বিষয় তার বন্ধুরাষ্ট্রদের জানানো শুরু করেছে। ঢাকা আশা করছে, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে চলমান সংকট নিরসন হবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
সীমান্তে যেতে চান চার ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূত : ইউরোপের চার দূত মিয়ানমার সীমান্তে যেতে চান। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের প্রধান উইলিয়াম হানাসহ সুইডেন, ডেনমার্ক ও যুক্তরাজ্যের দূতরা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তাঁদের ইচ্ছার কথা জানান। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সীমান্তে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে ইউরোপীয় দূতদের জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.