স্মরণ-ক্ষণজন্মা পণ্ডিত আহমদ শরীফ by হাসান ফকরী
কিংবদন্তিতুল্য গবেষক, শিক্ষক, লেখক পণ্ডিত অধ্যাপক আহমদ শরীফ। সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস বিষয়ে তিনি লিখে গেছেন অজস্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ। আহমদ শরীফ রচিত প্রবন্ধ-গবেষণামূলক মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টিরও বেশি। সম্পাদনা করেছেন মধ্যযুগীয় সাহিত্যবিষয়ক ৪৫টি গ্রন্থ। বাংলা একাডেমীর প্রথম প্রকাশনা গ্রন্থ আহমদ শরীফের লাইলী মজনু প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে।
চিন্তা ও কর্ম, যুক্তি ও মানবতাবাদের আলোয় এক অন্তহীন অনুসন্ধানের সূত্রে গ্রথিত ছিল আহমদ শরীফের জীবন। তিনি তাঁর চিন্তাধারায় মৌলিকতা, যুক্তিবাদিতা ও আধুনিকতার স্ফুরণ ঘটিয়েছিলেন। তিনি অদৃষ্টবাদ-ভাববাদের বিরুদ্ধে যুক্তিবোধ ও মানবতাবোধের শাণিত কলম চালিয়েছেন আমৃত্যু। স্বৈরাচার, সামরিকতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ও শ্রেণীবৈষম্যের বিপক্ষে দ্রোহী পণ্ডিত আহমদ শরীফ ছিলেন স্বাধিকার-সচেতন সাহসী কলমযোদ্ধা।
১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সুচক্রদণ্ডি গ্রামে আহমদ শরীফের জন্ম। তাঁর বাবার নাম আবদুল আজিজ, যিনি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ভাই। পিতৃব্য সাহিত্যবিশারদের কাছে থেকে পুত্রস্নেহে তিনি লালিত-পালিত হয়েছেন, বেড়ে উঠেছেন তাঁর দুর্লভ অমূল্য পুঁথির ভান্ডার ও সাময়িক পত্রপত্রিকার মধ্যে।
পুঁথি সাহিত্যবিশারদ আবদুল করিমের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আহমদ শরীফ যেমন জ্ঞানতৃষ্ণা লাভ করেছিলেন, তেমনি নিজের নিরলস অধ্যবসায়ে অর্জন করেছিলেন এক বিস্ময়কর মনীষা। এই মনীষার জন্য তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তিনি সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৩ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি দেয়।
আহমদ শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৬৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে তাঁর পেশাজীবন শুরু। ১৯৫০ সালের শেষের দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে একটানা ৩৪ বছর অধ্যাপনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ অধ্যাপনা জীবনে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানসহ সিন্ডিকেট সদস্য, সিনেট সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সভাপতি ও কলা অনুষদে চার মেয়াদের নির্বাচিত ডিন ছিলেন। ১৯৮৪-৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রথম ‘কাজী নজরুল ইসলাম প্রফেসর’ পদে কর্মরত ছিলেন।
আহমদ শরীফ শুধু শিক্ষক-গবেষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রবর্তী ব্যক্তিত্বও। আহমদ শরীফের সময়ে দেশের ভেতরে যত প্রতিক্রিয়াশীলবিরোধী এবং প্রগতিশীল ও বৈপ্লবিক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, এর প্রায় প্রতিটিতেই তিনি সক্রিয় ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অঙ্কুরোদয়ে আহমদ শরীফের ভূমিকা অগ্রনী। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত ‘নিউক্লিয়াস’ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অতি ঘনিষ্ঠ।
১৯৬৮ সালে লেখক-শিল্পীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদসভার অন্যতম সংগঠক ও বক্তা ছিলেন আহমদ শরীফ। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লেখক-বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীনতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরিচালক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর যেকোনো অগণতান্ত্রিক আচরণ বা স্বৈরাচারমূলক আইন অগ্রাহ্য করে আহমদ শরীফ বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সব সময়ই জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৭৪ সালে মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে তিনি মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সহায়তা কমিটি গঠন করেন। ১৯৭৬ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদ প্রতিরোধের একুশে’ উদ্যাপন কমিটির নেতৃত্ব দেন।
শুধু দেশ নয়, বিশ্বের সব শোষিত-মেহনতি মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম দরদ। ইরান, ইরাক, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের যেকোনো দেশ সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তি কর্তৃক যখন আক্রান্ত হয়েছে, তখনই আহমদ শরীফ আক্রান্ত দেশের যন্ত্রণাকাতর মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের নিন্দা জানিয়ে সব স্বাধীনতাকামী মানুষকে প্রতিকার-প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আফ্রো-এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার মানুষের দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা এবং কুসংস্করাচ্ছন্নতার জন্য দায়ী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।’
শোষণ-নিপীড়নহীন কুসংস্কারমুক্ত সাম্যবাদী বিশ্ব গড়ার যে সংগ্রাম চলছে, আহমদ শরীফ ছিলেন তারই পতাকাবাহী। তাঁর অক্লান্ত সাধনা, দুর্জয় সাহস এবং অমিত শক্তির কথা মনে হলে আমাদের বিস্মিত হতে হয়। অত্যাচারী শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তিনি যেমন ছিলেন প্রতিবাদী, তেমনি মুক্তচিন্তা আন্দোলনের পথিকৃত্। তিনি বিশ্ব ও জাতীয় পরিসরে বিপ্লবী শক্তির উত্থান কামনা করতেন। আহমদ শরীফ বিশ্বাস করতেন গণমানুষের মুক্তিতে; বিশ্বাস করতেন গণমানুষের মুক্তি সম্ভব সংগ্রামে।
আহমদ শরীফ জীবনে কোনো দিন চাপের মুখে নতি স্বীকার করেননি। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন অপশক্তির কাছে নতি স্বীকার না করতে। শিখিয়েছেন অন্যায়কে ঘৃণা করতে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যেমন ছিলেন আপসহীন; সমাজকর্মে, প্রবন্ধ-চিন্তায় ও গবেষণাকর্মে তথা মননশীল চর্চায় তেমনি প্রতিবাদী ছিলেন। জীবিত অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও আমরা তাঁকে পাই মূঢ়তা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এক অসীম লড়াকু মানুষ হিসেবে। ক্ষণজন্মা এই মনীষী ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কথা ও কর্মে অবিচল, অটল, আপসহীন দৃঢ় মনোভাবের ঐহিক জীবনবাদী আহমদ শরীফ সব রকম মেকি প্রথা-সংস্কার-শৃঙ্খল ছিন্ন করে ১৯৯৫ সালে লিপিবদ্ধ করা ‘অসিয়তনামা’র মাধ্যমে মানবকল্যাণে মরণোত্তর চক্ষু ও দেহ দান করে গেছেন। সেই অসিয়তনামায় উল্লেখ ছিল, ‘চক্ষু শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণপ্রতীক। কাজেই গোটা অঙ্গ কবরে কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাই তো বাঞ্ছনীয়।’
উপমহাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অসামান্য পণ্ডিত, বিদ্রোহী, অসাম্প্রদায়িক, যুক্তিবাদী, দার্শনিক, প্রগতিশীল, মানবতাবাদী, মুক্তবুদ্ধি ও নির্মোহ চিন্তার ধারক ড. আহমদ শরীফের জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।
১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সুচক্রদণ্ডি গ্রামে আহমদ শরীফের জন্ম। তাঁর বাবার নাম আবদুল আজিজ, যিনি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ভাই। পিতৃব্য সাহিত্যবিশারদের কাছে থেকে পুত্রস্নেহে তিনি লালিত-পালিত হয়েছেন, বেড়ে উঠেছেন তাঁর দুর্লভ অমূল্য পুঁথির ভান্ডার ও সাময়িক পত্রপত্রিকার মধ্যে।
পুঁথি সাহিত্যবিশারদ আবদুল করিমের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আহমদ শরীফ যেমন জ্ঞানতৃষ্ণা লাভ করেছিলেন, তেমনি নিজের নিরলস অধ্যবসায়ে অর্জন করেছিলেন এক বিস্ময়কর মনীষা। এই মনীষার জন্য তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তিনি সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৩ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি দেয়।
আহমদ শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৬৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে তাঁর পেশাজীবন শুরু। ১৯৫০ সালের শেষের দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে একটানা ৩৪ বছর অধ্যাপনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ অধ্যাপনা জীবনে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানসহ সিন্ডিকেট সদস্য, সিনেট সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সভাপতি ও কলা অনুষদে চার মেয়াদের নির্বাচিত ডিন ছিলেন। ১৯৮৪-৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রথম ‘কাজী নজরুল ইসলাম প্রফেসর’ পদে কর্মরত ছিলেন।
আহমদ শরীফ শুধু শিক্ষক-গবেষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রবর্তী ব্যক্তিত্বও। আহমদ শরীফের সময়ে দেশের ভেতরে যত প্রতিক্রিয়াশীলবিরোধী এবং প্রগতিশীল ও বৈপ্লবিক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, এর প্রায় প্রতিটিতেই তিনি সক্রিয় ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অঙ্কুরোদয়ে আহমদ শরীফের ভূমিকা অগ্রনী। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত ‘নিউক্লিয়াস’ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অতি ঘনিষ্ঠ।
১৯৬৮ সালে লেখক-শিল্পীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদসভার অন্যতম সংগঠক ও বক্তা ছিলেন আহমদ শরীফ। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লেখক-বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীনতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরিচালক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর যেকোনো অগণতান্ত্রিক আচরণ বা স্বৈরাচারমূলক আইন অগ্রাহ্য করে আহমদ শরীফ বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সব সময়ই জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৭৪ সালে মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে তিনি মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সহায়তা কমিটি গঠন করেন। ১৯৭৬ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদ প্রতিরোধের একুশে’ উদ্যাপন কমিটির নেতৃত্ব দেন।
শুধু দেশ নয়, বিশ্বের সব শোষিত-মেহনতি মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম দরদ। ইরান, ইরাক, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের যেকোনো দেশ সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তি কর্তৃক যখন আক্রান্ত হয়েছে, তখনই আহমদ শরীফ আক্রান্ত দেশের যন্ত্রণাকাতর মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের নিন্দা জানিয়ে সব স্বাধীনতাকামী মানুষকে প্রতিকার-প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আফ্রো-এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার মানুষের দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা এবং কুসংস্করাচ্ছন্নতার জন্য দায়ী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।’
শোষণ-নিপীড়নহীন কুসংস্কারমুক্ত সাম্যবাদী বিশ্ব গড়ার যে সংগ্রাম চলছে, আহমদ শরীফ ছিলেন তারই পতাকাবাহী। তাঁর অক্লান্ত সাধনা, দুর্জয় সাহস এবং অমিত শক্তির কথা মনে হলে আমাদের বিস্মিত হতে হয়। অত্যাচারী শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তিনি যেমন ছিলেন প্রতিবাদী, তেমনি মুক্তচিন্তা আন্দোলনের পথিকৃত্। তিনি বিশ্ব ও জাতীয় পরিসরে বিপ্লবী শক্তির উত্থান কামনা করতেন। আহমদ শরীফ বিশ্বাস করতেন গণমানুষের মুক্তিতে; বিশ্বাস করতেন গণমানুষের মুক্তি সম্ভব সংগ্রামে।
আহমদ শরীফ জীবনে কোনো দিন চাপের মুখে নতি স্বীকার করেননি। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন অপশক্তির কাছে নতি স্বীকার না করতে। শিখিয়েছেন অন্যায়কে ঘৃণা করতে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যেমন ছিলেন আপসহীন; সমাজকর্মে, প্রবন্ধ-চিন্তায় ও গবেষণাকর্মে তথা মননশীল চর্চায় তেমনি প্রতিবাদী ছিলেন। জীবিত অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও আমরা তাঁকে পাই মূঢ়তা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এক অসীম লড়াকু মানুষ হিসেবে। ক্ষণজন্মা এই মনীষী ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কথা ও কর্মে অবিচল, অটল, আপসহীন দৃঢ় মনোভাবের ঐহিক জীবনবাদী আহমদ শরীফ সব রকম মেকি প্রথা-সংস্কার-শৃঙ্খল ছিন্ন করে ১৯৯৫ সালে লিপিবদ্ধ করা ‘অসিয়তনামা’র মাধ্যমে মানবকল্যাণে মরণোত্তর চক্ষু ও দেহ দান করে গেছেন। সেই অসিয়তনামায় উল্লেখ ছিল, ‘চক্ষু শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণপ্রতীক। কাজেই গোটা অঙ্গ কবরে কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাই তো বাঞ্ছনীয়।’
উপমহাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অসামান্য পণ্ডিত, বিদ্রোহী, অসাম্প্রদায়িক, যুক্তিবাদী, দার্শনিক, প্রগতিশীল, মানবতাবাদী, মুক্তবুদ্ধি ও নির্মোহ চিন্তার ধারক ড. আহমদ শরীফের জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।
No comments