আর কত অবনতি হলে সরকারের টনক নড়বে?-বসবাসের অনুপযোগী ঢাকা

ঢাকা যে বিশ্বে বসবাসের অনুপযোগী শহরের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। প্রায় সোয়া এক কোটি ঢাকাবাসী প্রতিদিন হাড়ে হাড়ে এই সত্য টের পাচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদন জানা সত্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় সরকারের অন্তত নড়েচড়ে বসা উচিত।


ঢাকা কেবল বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বসবাসের অনুপযোগী শহরই নয়, বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা নগর। আবাসন, নাগরিকসেবা, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা—সব দিক থেকে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ঢাকার বর্তমান অবকাঠামো নাগরিক জীবনের আবশ্যকীয় কোনো চাহিদাই মেটানোর যোগ্য নয়। ক্রমাগত অবহেলা আর দায়িত্বহীনতায় সমস্যা এখন সংকটে গড়িয়েছে। এবং সংকটের সমাধান বড় মাপের উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়।
একদিক থেকে ঢাকার সংকট গত তিন দশকের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতির ফল। গত তিন দশকে গ্রামাঞ্চল থেকে সম্পদ ক্রমাগত ঢাকায় জমা হয়েছে। ঢাকা নাগরিক আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। অন্যদিকে সব সুযোগ-সুবিধা, ব্যবসা ও কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক দেন-দরবার ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় এবং গ্রামাঞ্চলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ায় সব শ্রেণীর লোকই ঢাকামুখী হয়েছে। কিন্তু ঢাকাকে এত মানুষের উপযোগী করে গড়ার চেষ্টা প্রায় হয়নি বললেই চলে।
ঢাকাকে বাঁচাতে ও বাসযোগ্য রাখতে প্রথমেই ঢাকার বিস্তারের সীমা ঠিক করা দরকার। ভূমিদস্যু কিংবা আবাসন শিল্প, উভয়ের হাত থেকেই ঢাকার চারপাশের কৃষিজমি পুনরুদ্ধার করতে হবে। পানি প্রাপ্তি ও পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে হবে ঢাকার নদী এবং খাল-জলাশয়কে। বর্তমানের ব্যক্তিগত যানবাহননির্ভর যোগাযোগব্যবস্থা থেকে গণপরিবহন ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটানোরও কোনো বিকল্প নেই। একসঙ্গে অনেক যাত্রী পরিবহন করার যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেমন: পাতাল বা মনো রেলের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে হবে। পরিত্যক্ত ও খাসজমিতে স্বল্প খরচের আবাসন দিতে হবে প্রায় অর্ধ কোটি বাস্তুহারাকে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনৈতিক তত্পরতা এমনভাবে বাড়াতে হবে, যাতে ঢাকামুখী অভিবাসন বন্ধ হয়। পাশাপাশি কৃষি-উদ্বৃত্ত যাতে গ্রামাঞ্চলে বিনিয়োগ করলে গ্রামীণ দারিদ্র্যের ঢাকামুখী হওয়াও বন্ধ হয়।
সংকট যত গভীর, সমাধানকেও ততটা গভীর থেকে না হলে ঢাকার বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে দি ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনটি সেই বিপর্যয়ের হুঁশিয়ারি বার্তা হিসেবেই গণ্য হোক।

No comments

Powered by Blogger.