প্রণব মুখার্জির সফর

দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবশালী নেতা ও অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি মূলত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে ঢাকা এসেছিলেন।


কিন্তু ওই বিশেষ অনুষ্ঠানের বাইরেও দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান নানা সমস্যা এবং এর সমাধানের বিষয়ও সংগত কারণেই আলোচনায় স্থান পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণমাধ্যমের সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে প্রণব মুখার্জি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছেন। তিনি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু করবে না- সে কথাও দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন।
দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে এ সফর অবশ্যই গুরুত্ববহ এবং উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা-সংকট নিরসনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তাও প্রত্যাশিত। প্রণব মুখার্জি এও বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে এর আগে সম্পাদিত চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন হবে এবং ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো শক্তিশালীকরণে তাঁদের তরফে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই, সে বার্তাও মিলল। তিস্তার পানিচুক্তি, টিপাইমুখ বাঁধসহ অন্য সব সমস্যা নিরসনে যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আভাসও মিলেছে। সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটেই নয়, বর্তমান অস্থিতিশীল বিশ্ব-বাস্তবতার আলোকে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রয়োজনে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-মৈত্রীর সেতুবন্ধ আরো দৃঢ় করা অত্যন্ত জরুরি। ভারত শুধু আমাদের প্রতিবেশী বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই নয়, 'ভুবনগ্রাম' বা 'গ্লোবাল ভিলেজ কমসেপ্ট'-এর দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলেও বলা যায়, ভারতের অবস্থান বিশ্ব-বাস্তবতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম সার্ক যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, বলতে গেলে তা অকার্যকরই থেকে গেছে। সার্ক যদি গতিশীল ও অধিকতর কার্যকর হতো, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া নতুন উদীয়মান শক্তি হিসেবে গণ্য হতো এবং শান্তি-স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অর্জিত হতো। এ অঞ্চলের বিদ্যমান সমস্যাগুলোরও নিরসন হতো। কিন্তু পারস্পরিক আস্থার অভাব এ ক্ষেত্রে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রণব মুখার্জির সফর দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর মীমাংসা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে গতি আনবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশকে দেওয়া ১০০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধার মধ্যে ২০ কোটি ডলার মঞ্জুরি হিসেবে গণ্য এবং অবশিষ্ট ৮০ কোটি ডলার ঋণের সুদের হার পৌনে ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামানোর কথাও প্রণব মুখার্জি জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বের বিষয়টি বড় হয়ে উঠেছে। তবে উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে ঢাকার মনোভাব নিশ্চয়ই প্রণব মুখার্জি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন এবং সে মোতাবেক তিনি তা তাঁর দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়ে অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন- এও আমরা প্রত্যাশা করি।

No comments

Powered by Blogger.