সংবাদ বিশ্লেষণ-সুশাসন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গেলেন হিলারি ক্লিনটন by রাহীদ এজাজ
অনিশ্চয়তার মেঘ সরিয়ে শেষ পর্যন্ত ঢাকা ঘুরে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। প্রায় এক দশক পর বাংলাদেশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্র—এ অবস্থানের কথা জানিয়ে গেছেন হিলারি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের যে চাওয়া ছিল, সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি তিনি দেননি। বরং সুশাসন, নাগরিক সমাজ আর গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে উদ্বেগের পুনরাবৃত্তি করে গেছেন হিলারি ক্লিনটন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হিলারির বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকেই শুরু হয় এ উদ্যোগ। ওই বছর পাকিস্তান সফরের সময় তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে ঢাকা। এরপর ভারত ও আফগানিস্তান সফরে এলেও উপেক্ষিত থেকেছে বাংলাদেশ। মাঝে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিদায়কে কেন্দ্র করে হিলারির সফর ঘিরে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। সবশেষে গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা হিলারি ক্লিনটনের চিঠির পর তাঁর বাংলাদেশ সফর বর্তমান শাসনামলে আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
ওই চিঠিতে হিলারি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি রোধ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার পক্ষেও মত দেন। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, ‘উন্নততর পরিস্থিতিই ভবিষ্যতে আমার বাংলাদেশ সফরের পথ সুগম করবে।’
তবে হিলারির উদ্বেগ দূর না হলেও চিঠি লেখার ছয় মাসের মাথায় অনেকটা আকস্মিকভাবে বাংলাদেশে ঘুরে গেলেন তিনি। এ প্রেক্ষাপটে তাঁর বাংলাদেশ আসাটাকে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সরকারের মেয়াদ এখন শেষ প্রান্তে। অথচ সন্ত্রাসবাদ দমন ও মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে মার্কিন প্রশাসনের কোনো শীর্ষনেতা আসেননি। এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় অগ্রগণ্য বাংলাদেশে না আসাটা যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বিশ্বসম্প্রদায়কে ভুল সংকেত দেবে। এমন এক প্রেক্ষাপটে হিলারির বাংলাদেশে আসাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হিলারির বাংলাদেশ আসাটাকে ত্বরান্বিত করেছে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ সফর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা যৌক্তিক, তা ৫ ও ৬ মে হিলারির বিভিন্ন আলোচনা থেকেই স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক, সংবাদ সম্মেলন, মুহাম্মদ ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে বৈঠক এবং তরুণ সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও তিনি সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করার তাগিদ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এটাও বলেছেন, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্রের স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। ২০০৮ সালের মতো অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন। তবে কোন পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন হবে, সেটা খুঁজে নিতে হবে বাংলাদেশের মানুষকেই। কাজেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যে হিলারির সফরের অনুকূল ছিল, সেটি তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিস্থিতির পাশাপাশি নাগরিক সমাজের কাজ করার পরিবেশ সংকুচিত হওয়া নিয়েও হিলারি ইতিপূর্বে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। এবারের সফরেও তিনি তাঁর উদ্বেগের পুনরাবৃত্তি করেছেন। খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যা ঘটেছিল, তা তিনি ওয়াশিংটনে বসেই নজর রাখছিলেন। তবে তাঁর এখনকার চাওয়া একটাই—গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাক শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য বদলের সোপান। তাই অনুকরণীয় এ প্রতিষ্ঠানগুলো যেন অতীতের মতো অবদান রাখতে পারে, সেটিই তাঁর প্রত্যাশা। বিশেষ করে, গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ কিংবা প্রতিষ্ঠানের অবদানকে খাটো করবে—এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে তিনি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনেরও অনুরোধ জানিয়েছেন হিলারি।
নাগরিক সমাজ সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে নাগরিক সমাজ। কাজেই তাদের কাজের ক্ষেত্র যাতে সংকুচিত না হয়, সেটি মাথায় রাখাটা জরুরি।
অন্যদিকে, গত মাসে খুন হওয়া পোশাকশ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনায় উচ্চকিত থেকেছেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নির্মম এ হত্যার বিচার হতে হবে। আমিনুলের জীবনে এ পরিণতি কীভাবে ঘটেছে, সেটি তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের কাছে পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন ক্রেতাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
বাংলাদেশের সুশাসন নিয়ে যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হতাশা আছে, সেটি আরেকবার উঠে এসেছে তাঁর এ সফরে। বিশেষ করে, মানবাধিকার পরিস্থিতি, দুর্নীতি দমনের মতো বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের নিজের স্বার্থেই গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি। আর এ বিষয়গুলোর সুরাহা হলেই বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বাড়বে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে ওয়াশিংটনের প্রত্যাশিত রূপরেখা বাণিজ্য চুক্তি টিকফা সই না হওয়ায় হতাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হিলারির ঢাকা সফরে মার্কিন প্রশাসন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি (টিকফা) সইয়ের আশা করেছিল। যদিও এর আগেই সরকারের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছিল যে চুক্তিটি সই করার জন্য চূড়ান্ত হয়নি। মূলত শ্রমিক অধিকারের বিষয়টিতে আরও দরকষাকষি করে চুক্তি সই করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে হিলারি টিকফার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলেছিলেন। পাশাপাশি তিনি এটিও জানিয়েছেন, চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেমন ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে এ সফরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর সহযোগিতা সংলাপের যে যৌথ ঘোষণা সই হয়েছে, তাকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এর মাধ্যমে এখন থেকে প্রতি বছর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হবে। আর এ বৈঠকে দুই দেশ নিজেদের সহযোগিতার সব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবে। এ ধরনের সহযোগিতা সংলাপে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হিলারির বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকেই শুরু হয় এ উদ্যোগ। ওই বছর পাকিস্তান সফরের সময় তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে ঢাকা। এরপর ভারত ও আফগানিস্তান সফরে এলেও উপেক্ষিত থেকেছে বাংলাদেশ। মাঝে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিদায়কে কেন্দ্র করে হিলারির সফর ঘিরে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। সবশেষে গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা হিলারি ক্লিনটনের চিঠির পর তাঁর বাংলাদেশ সফর বর্তমান শাসনামলে আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
ওই চিঠিতে হিলারি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি রোধ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার পক্ষেও মত দেন। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, ‘উন্নততর পরিস্থিতিই ভবিষ্যতে আমার বাংলাদেশ সফরের পথ সুগম করবে।’
তবে হিলারির উদ্বেগ দূর না হলেও চিঠি লেখার ছয় মাসের মাথায় অনেকটা আকস্মিকভাবে বাংলাদেশে ঘুরে গেলেন তিনি। এ প্রেক্ষাপটে তাঁর বাংলাদেশ আসাটাকে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সরকারের মেয়াদ এখন শেষ প্রান্তে। অথচ সন্ত্রাসবাদ দমন ও মুসলিম-অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে মার্কিন প্রশাসনের কোনো শীর্ষনেতা আসেননি। এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় অগ্রগণ্য বাংলাদেশে না আসাটা যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বিশ্বসম্প্রদায়কে ভুল সংকেত দেবে। এমন এক প্রেক্ষাপটে হিলারির বাংলাদেশে আসাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হিলারির বাংলাদেশ আসাটাকে ত্বরান্বিত করেছে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ সফর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা যৌক্তিক, তা ৫ ও ৬ মে হিলারির বিভিন্ন আলোচনা থেকেই স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক, সংবাদ সম্মেলন, মুহাম্মদ ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে বৈঠক এবং তরুণ সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও তিনি সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করার তাগিদ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এটাও বলেছেন, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্রের স্বার্থেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। ২০০৮ সালের মতো অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন। তবে কোন পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন হবে, সেটা খুঁজে নিতে হবে বাংলাদেশের মানুষকেই। কাজেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যে হিলারির সফরের অনুকূল ছিল, সেটি তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিস্থিতির পাশাপাশি নাগরিক সমাজের কাজ করার পরিবেশ সংকুচিত হওয়া নিয়েও হিলারি ইতিপূর্বে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। এবারের সফরেও তিনি তাঁর উদ্বেগের পুনরাবৃত্তি করেছেন। খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যা ঘটেছিল, তা তিনি ওয়াশিংটনে বসেই নজর রাখছিলেন। তবে তাঁর এখনকার চাওয়া একটাই—গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাক শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য বদলের সোপান। তাই অনুকরণীয় এ প্রতিষ্ঠানগুলো যেন অতীতের মতো অবদান রাখতে পারে, সেটিই তাঁর প্রত্যাশা। বিশেষ করে, গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ কিংবা প্রতিষ্ঠানের অবদানকে খাটো করবে—এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে তিনি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচনের জন্য স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনেরও অনুরোধ জানিয়েছেন হিলারি।
নাগরিক সমাজ সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে নাগরিক সমাজ। কাজেই তাদের কাজের ক্ষেত্র যাতে সংকুচিত না হয়, সেটি মাথায় রাখাটা জরুরি।
অন্যদিকে, গত মাসে খুন হওয়া পোশাকশ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনায় উচ্চকিত থেকেছেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নির্মম এ হত্যার বিচার হতে হবে। আমিনুলের জীবনে এ পরিণতি কীভাবে ঘটেছে, সেটি তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের কাছে পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন ক্রেতাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
বাংলাদেশের সুশাসন নিয়ে যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হতাশা আছে, সেটি আরেকবার উঠে এসেছে তাঁর এ সফরে। বিশেষ করে, মানবাধিকার পরিস্থিতি, দুর্নীতি দমনের মতো বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের নিজের স্বার্থেই গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি। আর এ বিষয়গুলোর সুরাহা হলেই বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বাড়বে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে ওয়াশিংটনের প্রত্যাশিত রূপরেখা বাণিজ্য চুক্তি টিকফা সই না হওয়ায় হতাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হিলারির ঢাকা সফরে মার্কিন প্রশাসন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি (টিকফা) সইয়ের আশা করেছিল। যদিও এর আগেই সরকারের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছিল যে চুক্তিটি সই করার জন্য চূড়ান্ত হয়নি। মূলত শ্রমিক অধিকারের বিষয়টিতে আরও দরকষাকষি করে চুক্তি সই করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে হিলারি টিকফার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলেছিলেন। পাশাপাশি তিনি এটিও জানিয়েছেন, চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেমন ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে এ সফরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর সহযোগিতা সংলাপের যে যৌথ ঘোষণা সই হয়েছে, তাকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এর মাধ্যমে এখন থেকে প্রতি বছর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হবে। আর এ বৈঠকে দুই দেশ নিজেদের সহযোগিতার সব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবে। এ ধরনের সহযোগিতা সংলাপে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
No comments