শিক্ষা-সংগ্রামী এক মাকে অভিবাদন-জননী সাহসিকা

খবরটি পড়ে যেন আশ মেটে না। দেখতে ইচ্ছা হয় সেই আত্মবিশ্বাসী মাকে। গত রোববার প্রথম আলোয় ‘মা হয়েই পরীক্ষার জন্য ছুট’ শিরোনামের সংবাদ পড়ে পাশের ছবিটির দিকে তাকাতেই হয়। সন্তান জন্ম দিয়েই এই তরুণী মা ছুটেছিলেন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে। কত আত্মবিশ্বাস আর সংকল্প থাকলে এমনটা পারে কেউ?


শিক্ষামন্ত্রী তাঁকে ফোন করা দায়িত্ব মনে করেছেন। আমরাও মনে করি, এই ছাত্রী-মাকে অভিনন্দন জানিয়ে দায়িত্বশীলতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
খবরটি পড়ে আবার চোখ যায় ছবিটির দিকে। মন ভরিয়ে দেওয়া এক ছবি: তরুণী মাতার কোলে সদ্যোজাত শিশু, মায়ের মুখে হাসি। তাদের হাসিতে আমরাও হাসি। হাসি বিশ্বাসে আর ভরসায়। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাসিন্দা রিপা আক্তার। গত শুক্রবার কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রিপা। এর ৪০ মিনিট পরেই তিনি ছোটেন পরীক্ষাকক্ষে। ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা সেদিন। গর্ভধারণ যেমন সুখের, তেমনি কষ্টেরও। সেই কষ্ট আর শারীরিক অসামর্থ্য নিয়েও এই মেয়েটি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই হয়তো কাকতালীয়ভাবে পরীক্ষা শুরুর আগেই ভূমিষ্ঠ হয় আদরের কন্যা। বলা হয়, প্রসববেদনার সঙ্গে তুলনীয় বেদনা আর নেই। সেই বেদনা সয়েও, স্বামীসহ পরিবারের সবাইকে রাজি করিয়ে যে এইচএসসি পরীক্ষায় বসতে পারেন, তাঁকে জননী সাহসিকা বলেই সম্মান জানানো উচিত।
রিপা আক্তারকে দেখেই জ্ঞান হতে পারে, কেন বাংলাদেশের মেয়েরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক ভালো ফল করছে। প্রতিবছর নারী শিক্ষার্থীদের ভালো ফল করার পেছনে যে নিষ্ঠা কাজ করে, রিপা আক্তার তারই প্রতীক। রিপা আক্তারের বিয়ে হয়েছে, কিন্তু পড়ালেখা থামেনি। রিপা সন্তানসম্ভবা হয়েছেন, কিন্তু পরীক্ষায় বসার সংকল্প হারাননি। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানের এই সংগ্রাম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আরও আরও রিপা আক্তারের কথা। অশেষ প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হয় তাদের। সেই ছাত্রীদের একজন হিসেবে রিপা আক্তারকে অভিবাদন জানিয়ে আমরা সম্মান জানাতে চাই শিক্ষা-সংগ্রামী সব ছাত্রীকে।

No comments

Powered by Blogger.