চরাচর-বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ by শাহ মতিন টিপু
বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি জীবনের সব অনুষঙ্গই রবীন্দ্রময়। রবীন্দ্র সাহিত্যের অনেকটা অংশজুড়ে রয়েছে পূর্ববাংলা। রবীন্দ্রনাথ মনের টানে বারবার এসেছেন এই বাংলায়। বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে বিশ্বকবির স্মৃতি।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি : কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ঠাকুর পরিবারের কুঠিবাড়ি। পদ্মাপারের কুঠিযাড়িটি ছিল কবির প্রিয় স্থান। বাড়ি-লাগোয়া ঘাটে বাঁধা থাকত বজরা। দোতলার বারান্দায় কেটেছে কবির অলস সময়। পারিবারিক সিদ্ধান্তে শিলাইদহের জমিদারি দেখভাল করতে এলে এ বাড়িতেই থাকতেন কবি। বাড়িটি এখন পরিণত হয়েছে বাঙালির তীর্থস্থানে। গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর। কবির ব্যবহৃত আসবাবপত্র, নানা সামগ্রী আর আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে দোতলা বাড়িটি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বে পরিচালিত হচ্ছে জাদুঘর। ১৯৮৯ সাল থেকে বাড়ির আঙিনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় ২৫ বৈশাখ।
ঠাকুর লজ : স্থানীয়ভাবে বাড়িটি টেগর লজ নামেই পরিচিত। এ বাড়িটি কুষ্টিয়া শহরে। ব্যবহৃত হতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদের পারিবারিক ব্যবসাকেন্দ্রের 'গদি' হিসেবে। কবির জীবদ্দশায় যখন আর্থিক সংকট দেখা দেয়, তখন সিদ্ধান্ত হয় দোতলা এই বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার। বাড়িটির মালিকানা পরে আরো দুবার হাতবদল হয়। বছর কয়েক আগে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বাড়িটি সর্বশেষ স্বত্বাধিকারীর বংশধরদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে জাদুঘরে রূপান্তর করে।
পতিসর কুঠিবাড়ি : নওগাঁর নিভৃত অঞ্চল পতিসর। পাশ দিয়ে বয়ে চলা নারদ নদের পারে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি। এই নদী দেখেই কবি লিখেছিলেন- 'আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে...'।
১৯৮৯ সাল থেকে এ বাড়ির আঙিনায়ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে ২৫ বৈশাখ।
শাহজাদপুর কুঠিবাড়ি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরও ছিল কবি পরিবারের জমিদারির আওতাভুক্ত। শিলাইদহ ও পতিসরের মতো এখানেও এখন জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে যে তিনটি স্থানে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে ২৫ বৈশাখ, শাহজাদপুর কুঠিবাড়ি তার অন্যতম। শাহজাদপুরের সঙ্গে কবির স্মৃতি জড়িয়ে আছে ভিন্ন আঙ্গিকে। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর কবি দীর্ঘ সময় এখানে ছিলেন। নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশই তিনি এখানে ব্যয় করেন। শাহজাদপুর অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পুরস্কারের টাকা ঋণ হিসেবে দেন।
দক্ষিণডিহি : কবি দক্ষিণডিহিতে জীবনে একবারই গিয়েছিলেন। থেকেছেন এক রাত, জীবনের স্মরণীয় রাত। খুলনার দৌলতপুর অঞ্চলে ছিল মৃণালিনী দেবীর মামাবাড়ি। সেখানেই কবির সঙ্গে মৃণালিনী দেবীর বিয়ে হয়। বর্তমানে দক্ষিণডিহিতেও রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির জন্ম ও তিরোধান দিবস পালিত হয়।
আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল : বর্তমানে ময়মনসিংহ প্রাথমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউট (পিটিআই) ও জেলা শিক্ষা অফিস যে স্থানে সেটি একসময় ছিল ওই অঞ্চলের জমিদারের বাগানবাড়ি। জমিদারের বান্ধবী আলেকজান্দ্রা (মতান্তরে আলেকজান্দ্রিয়া) ছিলেন রাশিয়ার জারের সহধর্মিণী। বান্ধবীর নামে তিনি এখানে বাগানবাড়িটি নির্মাণ করে চমকে দিয়েছিলেন তাকে (আলেকজান্দ্রা)। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে রেলযোগে যান ময়মনসিংহেও। ময়মনসিংহের আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে কবিকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভবনের সামনে মাঠ। মাঠের অপর পারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছটির নিচে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জমিদার কবি গলায় ১০০ টাকার নোট দিয়ে বানানো মালা পরিয়ে দেন। স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্যমতে, প্রায় ৯০ বছর আগের সেই দিনটিতে ময়মনসিংহের চারটি অনুষ্ঠান থেকে কবি শান্তিনিকেতনের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিলেন।
শাহ মতিন টিপু
ঠাকুর লজ : স্থানীয়ভাবে বাড়িটি টেগর লজ নামেই পরিচিত। এ বাড়িটি কুষ্টিয়া শহরে। ব্যবহৃত হতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদের পারিবারিক ব্যবসাকেন্দ্রের 'গদি' হিসেবে। কবির জীবদ্দশায় যখন আর্থিক সংকট দেখা দেয়, তখন সিদ্ধান্ত হয় দোতলা এই বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার। বাড়িটির মালিকানা পরে আরো দুবার হাতবদল হয়। বছর কয়েক আগে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বাড়িটি সর্বশেষ স্বত্বাধিকারীর বংশধরদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে জাদুঘরে রূপান্তর করে।
পতিসর কুঠিবাড়ি : নওগাঁর নিভৃত অঞ্চল পতিসর। পাশ দিয়ে বয়ে চলা নারদ নদের পারে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি। এই নদী দেখেই কবি লিখেছিলেন- 'আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে...'।
১৯৮৯ সাল থেকে এ বাড়ির আঙিনায়ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে ২৫ বৈশাখ।
শাহজাদপুর কুঠিবাড়ি : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরও ছিল কবি পরিবারের জমিদারির আওতাভুক্ত। শিলাইদহ ও পতিসরের মতো এখানেও এখন জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে যে তিনটি স্থানে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে ২৫ বৈশাখ, শাহজাদপুর কুঠিবাড়ি তার অন্যতম। শাহজাদপুরের সঙ্গে কবির স্মৃতি জড়িয়ে আছে ভিন্ন আঙ্গিকে। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর কবি দীর্ঘ সময় এখানে ছিলেন। নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশই তিনি এখানে ব্যয় করেন। শাহজাদপুর অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পুরস্কারের টাকা ঋণ হিসেবে দেন।
দক্ষিণডিহি : কবি দক্ষিণডিহিতে জীবনে একবারই গিয়েছিলেন। থেকেছেন এক রাত, জীবনের স্মরণীয় রাত। খুলনার দৌলতপুর অঞ্চলে ছিল মৃণালিনী দেবীর মামাবাড়ি। সেখানেই কবির সঙ্গে মৃণালিনী দেবীর বিয়ে হয়। বর্তমানে দক্ষিণডিহিতেও রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির জন্ম ও তিরোধান দিবস পালিত হয়।
আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল : বর্তমানে ময়মনসিংহ প্রাথমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউট (পিটিআই) ও জেলা শিক্ষা অফিস যে স্থানে সেটি একসময় ছিল ওই অঞ্চলের জমিদারের বাগানবাড়ি। জমিদারের বান্ধবী আলেকজান্দ্রা (মতান্তরে আলেকজান্দ্রিয়া) ছিলেন রাশিয়ার জারের সহধর্মিণী। বান্ধবীর নামে তিনি এখানে বাগানবাড়িটি নির্মাণ করে চমকে দিয়েছিলেন তাকে (আলেকজান্দ্রা)। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে রেলযোগে যান ময়মনসিংহেও। ময়মনসিংহের আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে কবিকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভবনের সামনে মাঠ। মাঠের অপর পারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছটির নিচে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জমিদার কবি গলায় ১০০ টাকার নোট দিয়ে বানানো মালা পরিয়ে দেন। স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্যমতে, প্রায় ৯০ বছর আগের সেই দিনটিতে ময়মনসিংহের চারটি অনুষ্ঠান থেকে কবি শান্তিনিকেতনের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিলেন।
শাহ মতিন টিপু
No comments