বাধা পেরিয়ে সুদৃঢ় হোক মৈত্রীর বন্ধন-প্রণবের ঢাকা সফর

রবীন্দ্রনাথকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও গতিশীল হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেল। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসেছিলেন বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি যেসব আশ্বাস দিয়ে গেলেন, তা ‘রবীন্দ্রবন্ধনে’ আবদ্ধ দুটি দেশের মৈত্রীকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর ও মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে এক নতুন গতি এনে দিয়েছে। তবে এই দুই সফরের সময় স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষণীয় হয়ে পড়েছিল। প্রণব মুখার্জির এই সফর এ ক্ষেত্রে নতুন গতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ১০০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে বিবেচনা করার যে ঘোষণা তিনি দিয়ে গেলেন, এ জন্য তাঁকে আমরা স্বাগত জানাই। বাকি ৮০ কোটি ডলার ঋণের সুদের হারও কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এই ঋণের কিছু শর্ত যথেষ্ট কঠিন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল বাংলাদেশের কাছে। ভারত থেকে জনশক্তি ও যন্ত্র-প্রযুক্তি নেওয়ার সেই শর্ত এরই মধ্যে কিছুটা শিথিল হয়েছে, প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তা আরও শিথিল করার আশ্বাস মিলেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও জোরদার করার ক্ষেত্রে দেশ দুটির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতাগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। ভারতের অর্থমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে বিলম্বের কথা স্বীকার করে বাংলাদেশের সঙ্গে করা সব চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। ১০০ কোটি ডলার ঋণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ছাড়ের আশ্বাসগুলোসহ এবারের সফরে সামগ্রিকভাবে ভারতের অর্থমন্ত্রীর তরফে যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে, তাকে আমরা খুবই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করছি। এই আশ্বাসগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন হোক, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চাওয়া।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও কিছু জরুরি ও স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে, যার নিষ্পত্তি জরুরি। তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি, টিপাইমুখ ইস্যু, সামগ্রিকভাবে যৌথ নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি ও ব্যবস্থাপনা এবং সীমান্ত সমস্যার মতো অনেক ইস্যু ঝুলে আছে। বাংলাদেশের জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন ভারতের দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ন্যায্য চাওয়াগুলো পূরণের উদ্যোগ নেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রণব মুখার্জি তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন অনুসমর্থন বাস্তবায়নে ভারত আন্তরিক বলে জানিয়েছেন। টিপাইমুখ ও ভারতের নদীসংযোগ প্রকল্পের ব্যাপারেও তিনি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছেন। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন তিস্তা চুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করছে ভারত। বিষয়গুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন।
ভারতের অর্থমন্ত্রীর এবারের বাংলাদেশ সফরে ভারতের যে মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে, তা অবশ্যই ইতিবাচক। ভারতের প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবে তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব আশ্বাস দিয়ে গেলেন, সামনের দিনগুলোতে তার প্রতিফলন ঘটবে, সেটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.