দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন-বল দিলি্লরই কোর্টে

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ৫ মে রাতে ঢাকা এসেছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। তবে যেহেতু দিলি্লর নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি অনেক বছর ধরেই বিবেচিত এবং 'বাংলাদেশের বন্ধু' হিসেবে রয়েছে পরিচিতি,


সে কারণে স্বল্প সময়ের অবস্থানকালেও আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক অনেক কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। আলোচনা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে। খোলামেলা কথা হয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি এসব কর্মসূচি থেকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জানার সুযোগ পেয়েছেন, যেখানে ঢাকার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাত্রা যথেষ্ট সেটাও সম্ভবত স্পষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন টিপাইমুখে প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ এবং আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপক উদ্বেগের কথা। সীমান্ত সংক্রান্ত প্রটোকল এখনও দিলি্ল অনুস্বাক্ষর করেনি। এ প্রেক্ষাপটে তিনি অমীমাংসিত সব ইস্যুতে মনমোহন সিং সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রত্যাশা করেন। আশা করব, ঢাকার এ বার্তা নয়াদিলি্লতে দ্রুত যথাযথভাবে অনুভূত হবে এবং আসতে থাকবে ইতিবাচক উদ্যোগ। এবারে অনেকটা অনানুষ্ঠানিক সফর হলেও প্রণব মুখার্জির ভারতের প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান এবং তা বাংলাদেশ পছন্দমতো অগ্রাধিকার প্রকল্পে ব্যয় করতে পারার সুবিধা প্রদান এবং বাকি ৮০ কোটি ডলার ঋণের সুদ হার ২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার ঘোষণা উৎসাহব্যঞ্জক। ঋণ ব্যবহারের কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও শিথিল করার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তিস্তা চুক্তি সম্পাদনসহ আরও কিছু বিষয়ে মিলেছে আশ্বাস। বাংলাদেশের ৪৬ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা বেড়েছে এবং ব্যবসায়ী মহল তাতে উৎসাহিত। তারা বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে কিছু অশুল্ক বাধা চিহ্নিত করেছেন এবং তা নিরসনে দ্রুত মনোযোগ দাবি রাখে। তবে বিদ্যমান বাস্তবতাও মনে রাখা চাই। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় যেসব চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছিল, তার অনেকগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়া এবং কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থায় কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে। যেসব মহল দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বাধা হিসেবে কাজ করে তারা অবধারিতভাবেই এমন পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণে তৎপর হয়। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান শক্তি ভারত এ বাস্তবতা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করে। তাদের এটাও বুঝতে হবে যে, সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ তার তরফে সম্ভাব্য সবকিছুই করেছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা প্রতিদানবিহীন একতরফা বলেও সমালোচিত হচ্ছে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতায় দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য এমন পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এটা ইস্যু হয়ে উঠছে। ভারত সরকার এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন করবে, এটাই প্রত্যাশিত।
 

No comments

Powered by Blogger.