কারাগারে বিরোধী নেতৃবৃন্দ-সংলাপেই সংকট নিরসন করুন

হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ১৮ দলীয় জোট নেতাদের জামিন প্রদান না করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করা হয়।


এ কর্মসূচি ঢিলেঢালাভাবে পালিত হলেও জনজীবন মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ এবং রাজধানী ও অন্যান্য স্থানে নতুন গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। 'আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে উভয় পক্ষ আগ্রহী বলে উচ্চ পর্যায় থেকে আমি ইতিবাচক সংকেত পেয়েছি'_ বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার এ মন্তব্য রাজনৈতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে আমাদের আশাবাদী করে তোলে। একই সঙ্গে রাজপথের যে চিত্র দেখা গেল সেটা যথেষ্টই উদ্বেগের। বিরোধী নেতাদের জামিন প্রদান করা হলে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা সহজ হতো, এমন অভিমতের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। একাধিক সিনিয়র আইনজীবী বলেছেন, গাড়ি পোড়ানোর মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে প্রেরণ এবং ইতিমধ্যে চার্জশিট প্রদান করায় নিম্ন আদালত জামিন প্রদান করতে পারেননি। তবে তারা এটাও মনে করেন যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ মামলায় জামিন পেতে বাধা নেই। সংঘাতের রাজনীতি আরও প্রকট না করতে চাইলে এবং প্রত্যাশিত সংলাপ শুরুর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দ্রুতই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আমরা আশা করব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন আরও জটিল না হয় সে ব্যাপারে সবারই দায়িত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা মনে করি, নেতাদের মুক্ত করা, নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সন্ধান কিংবা অন্য যে কোনো দাবি আদায়ে হরতাল নয়, বরং অন্য ধরনের কর্মসূচিই বিবেচিত হওয়া উচিত। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলতে চাই যে, সরকারকে আরও বেশি সহনশীল হতে হবে। তারা কী কারণে বিরোধীদের প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে সেটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু মামলার বিবরণীতে যত গুরুতর অভিযোগই লিপিবদ্ধ থাকুক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে জনগণ মনে করবে যে বিষয়টি বিরোধীদের হয়রানির জন্যই করা। এতে সরকারের কোনো লাভ হয় না, বরং রাজনীতিতে আরও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয় এবং জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বাড়ে। একই সঙ্গে বিরোধী দলকেও আরও সংযত হওয়ার জন্য অনুরোধ থাকবে। রাজনীতিতে জেল-জুলুম নতুন নয় এবং এটা মেনে নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা কাজ করেন। মিছিল-সমাবেশ করা, পুলিশের মুখোমুখি হওয়া, কারাজীবন সবই রাজনীতির অংশ। সরকারের সঙ্গে আলোচনার দুয়ারও একই সঙ্গে খোলা রাখতে হয়। সামনে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন রয়েছে। বিরোধীরা সেখানে নিয়মিত হাজির থেকে তাদের সব কথা বলুক। তারা সংখ্যায় সরকারদলীয় জোটের তুলনায় নগণ্য। কিন্তু জনগণের কাছে ন্যায্য কথার গুরুত্ব সবসময়ই থাকে। রাজপথে অস্থিরতা সৃষ্টির কর্মসূচি দিয়ে নয়, বরং সংসদে যুক্তিতর্ক দিয়ে উপস্থাপন করাই তাদের কাছে বেশি পছন্দ। এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, দেশ এখন সংকটে রয়েছে এবং তা থেকে উত্তরণের দায়িত্ব সরকার ও বিরোধী সব পক্ষেরই।
 

No comments

Powered by Blogger.