শিক্ষাঙ্গনে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অব্যাহত খুন

প্রথম খুনটি হওয়ার পর ঘটনাটিকে দেখা হলো ‘ছাত্র খুন’ হিসেবে। দ্বিতীয় খুনের শিরোনাম হলো ‘আবার খুন’, এখন তৃতীয় খুনের ঘটনার পর লেখা হলো, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র খুন’। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই মাসের মধ্যে তিনজন ছাত্র খুন হওয়ার ঘটনাটিকে সন্ত্রাসকবলিত শিক্ষাঙ্গনের নিয়মিত সন্ত্রাস-হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে ভাবার উপায় নেই।


একের পর এক হত্যাকাণ্ড কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পর্যুদস্ত করে তুলছে, তার কারণ জানা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তরোত্তর সন্ত্রাসের আখড়া হয়ে উঠেছে। এমন মাস নেই, যখন কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও নিহত হচ্ছে না। দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘাতে রক্ত যেমন ঝরছে, প্রাণও ঝরছে তেমনি। এর মধ্যে এক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই দুই মাসে তিন ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা সবাইকেই উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এ রকম ঘটনা শিক্ষাঙ্গনকে কেবল ভীত-বিহ্বলই করে তোলে না, এর ফলে অভিভাবকদেরও চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে গিয়ে ছাত্র বা ছাত্রী জীবন নিয়ে ফিরতে পারবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। এর থেকে খারাপ পরিস্থিতি আর কী হতে পারে!
নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার সোয়া এক বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কিংবা তাদের হাতে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনাই বেশি ঘটেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যেও তারাই বেশি। আবার এটাও সত্যি তাদের কোন্দল ও সন্ত্রাসের কারণেই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে। সুতরাং উচ্চপর্যায় থেকে ছাত্রলীগকে সতর্ক করেও ফল না পাওয়া গেলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রহস্যময় হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর তিন ছাত্র খুন হওয়ার ঘটনা। এর পেছনে কোনো গভীর কারণ রয়েছে কি না, জড়িত রয়েছে কি না কোনো আড়ালের শক্তি, তা উদ্ঘাটন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীলতার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে সবার জন্য নিরাপদ করার মুখ্য দায়িত্ব তাদেরই। এ কাজে সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে।
ওই তিনটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের মনে আশ্বাস জাগাতে হবে। সর্বোপরি শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করায় সরকারের অঙ্গীকারেরও মূল্যায়ন হওয়া উচিত। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারি তর্জন-গর্জন যতটা মুখে, কাজে ততটা নয়। তাদের এখন করে দেখাতে হবে সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারাই থাকুক, তাদের শাস্তি হবে এবং সরকারি ক্ষমতা বা দলীয় দাপটের কোনোরকম আশ্রয়-প্রশ্রয় খুনিরা পাবে না।

No comments

Powered by Blogger.