তাঁরা তিন জন by রোকেয়া রহমান

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতার নাম জিজ্ঞেস করলে বেশির ভাগ লোকই এক কথায় মার্ক জাকারবার্গের নাম বলবেন। তবে জাকারবার্গের নামের আগে ব্যবহার করা হয় ‘সহ-প্রতিষ্ঠাতা’। তার মানে, আরও কয়েকজন প্রতিষ্ঠাতা আছেন। সামাজিক যোগাযোগের এই ওয়েবসাইটটি তৈরির পেছনে জাকারবার্গ ছাড়া আরও তিনজনের অবদান রয়েছে।


তাঁদের একজন হচ্ছেন এদুয়ার্দু স্যাভারিন। ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন এই বিলিয়নিয়ার বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বাস করছেন। জাকারবার্গকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র দ্য সোশাল নেটওয়ার্ক-এ স্যাভরিনকে দেখানো হয়েছে একজন সাদাসিধে উদ্যোক্তা হিসেবে। ২০১০ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।
ব্রাজিলের সাওপাওলো শহরে একটি বিত্তশালী পরিবারে জন্ম এদুয়ার্দু স্যাভারিনের। তবে বেড়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে। একটি অপহরণ চক্রের তালিকায় এদুয়ার্দের নাম আছে জানতে পেরে তাঁর বাবা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। ২০০৪ সালে জাকারবার্গ ছাড়াও ডাসটিন মসকোভিচ ও ক্রিস হাগেসের সঙ্গে স্যাভারিন যৌথভাবে চালু করেন ফেসবুক। মূলত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ওয়েসাইটটি চালু করা হয়। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রথমে স্যাভারিন প্রধান অর্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসা ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ফেসবুকের প্রসারের এক পর্যায়ে জাকারবার্গের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্যাভারিনের মতভিন্নতা দেখা দেয়। উভয়ের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত আকার ধারণ করে যখন আবিষ্কৃত হয় যে ফেসবুকে স্যাভারিনের শেয়ার ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশেরও নীচে চলে এসেছে। এ ঘটনায় ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্যাভারিন। পরে অবশ্য আদালতের বাইরে এ ব্যাপারে একটি মীমাংসা হয়। পরে আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নেন স্যাভারিন। এখন ফেসবুকে স্যাভারিনের শেয়ার মাত্র ২ শতাংশ। সারাবিশ্বে ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯০ কোটিরও বেশি। ফেসবুকের এই রমরমা দিনেও স্যাভারিন আর এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী নন। পুরনো তিক্ত অভিজ্ঞতাই হয়তো এর পিছনের বড় কারণ। ২০০৯ সালে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান স্যাভারিন। সেখানেই তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এখন তিনি সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। তবে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কারণ তিনি কখনো ব্যাখ্যা করেন নি। অন্তর্মুখী স্বভাবের স্যাভারিন গণমাধ্যমকে খুব কমই সাক্ষাৎকার দেন। সিঙ্গাপুরে স্যাভারিন অনেক ব্যবসা শুরু করলেও কোনটিই ফেসবুকের ধারে কাছে যেতে পারেনি।
ফেসবুকের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা ডাস্টিন মসকোভিচ আসানা নামে একটি ওয়েবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। ক্রিস হাগেস ২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারনার জন্য কাজ করেছেন। অতিসম্প্রতি তিনি দ্য নিউ রিপাবলিক নামে একটি সাময়িকীর একটি বড় শেয়ার কিনেছেন। বর্তমানে তিনি এই সাময়িকীটির সম্পাদক। ক্রিস হাগেস ২০১০ সালে জুমো নামে একটি অলাভজনক সামাজিক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন। লোকজনকে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.