বিশেষ সাক্ষাৎকার-গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে সব দলের সহযোগিতা দরকার by রেনাটা ডেজালিয়েন

রেনেটা ডেজালিয়েন কানাডীয় কূটনীতিক। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ২০০৫ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় সাড়ে চার বছরের দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিচ্ছেন।


তিনি ১৯৯১-৯২ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে জনপ্রশাসনে ও ১৯৮৪-৮৫ সালে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগে তিনি অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (১৯৭৮-১৯৮২) সংগীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ভুটান, মিয়ানমার, মালি প্রভৃতি দেশে দায়িত্ব পালন করেন। গণতন্ত্র ও সুশাসন, মানব দারিদ্র্যের অবসানসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে তাঁর বই প্রকাশিত হয়েছে।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল কাইয়ুম

প্রথম আলো  আপনি নতুন দায়িত্ব নিয়ে চলে যাচ্ছেন। বিদায়ের মুহূর্তে আপনার প্রতিক্রিয়া?
রেনাটা ডেজালিয়েন  এ রকম সুন্দর, উদার ও উষ্ণ হূদয়ের মানুষের দেশ ছেড়ে যাওয়া কঠিন। বাংলাদেশের জনগণ ও সমগ্র দেশের প্রতি রয়েছে আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। কয়েক দিন আগে আমি ও আমার স্বামী টিভি দেখছিলাম। সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম, ‘অবিশ্বাস্য ভারত’! ক্রোয়েশিয়ার ওপরও একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম। আমরা তখন ভাবতে শুরু করলাম, বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের স্লোগান হতে পারে। আমরা সিদ্ধান্তে এলাম যে ‘শ্বাসরুদ্ধকর বাংলাদেশ’ হতে পারে এ রকম একটি স্লোগান। কারণ, বাংলাদেশ তার মায়া-মমতা ও মঙ্গল কামনা দিয়ে আমাদের হূদয় জয় করে নিয়েছে। সংস্কৃতির সৌন্দর্য আমাদের মোহিত করেছে। বাংলাদেশের রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সিলেটের চা-বাগান, পার্বত্য চট্টগ্রামের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত আর সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের মন কেড়ে নিয়েছে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্রের সম্ভাবনা আপনি কীভাবে দেখেন?
রেনাটা ডেজালিয়েন  আমি খুবই আশাবাদী। শক্তি, সামর্থ্য, মেধা, সম্পদ, সুযোগ ও সৃজনশীলতার দিক থেকে এ দেশ অমিত সম্ভাবনার অধিকারী। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ প্রতিটি ঘটনায় সংকট থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ অসাধারণ সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। আমি মনে করি, আজ ও আগামীকালের যেকোনো জরুরি সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব উপাদানই বাংলাদেশের রয়েছে। অবশ্য আমি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপ্রতুল অবকাঠামো, সামাজিক সেবার মান, আইনের শাসনসহ বিভিন্ন সমস্যাকে খাটো করে দেখছি না। কিন্তু যেটা লক্ষণীয় তা হলো, এসব সমস্যার সফল সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক দক্ষতাসহ অন্যান্য উপাদান বাংলাদেশের রয়েছে। এখন দরকার সুশাসন শক্তিশালী করা; যেন সমস্ত মেধা, শ্রম ও সম্পদের সম্মিলন ঘটানো যায়। দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের অগ্রগতির জন্য এটা দরকার। জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
জনগণের স্বার্থে গণতন্ত্রকে ফলপ্রসূ করতে হলে এ দেশের সবাই জানেন, কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। এগুলো হলো বিচার বিভাগ, পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। যখনই এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো একটির পথে বাধা আসে, তখন গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোনো একটি দলের একক চেষ্টায় গণতন্ত্র শক্তিশালী করার কাজটি হবে না। সব দলের সহযোগিতা দরকার। মানুষ এটা চায়। তাই আমি বিশ্বাস করি, দ্রুতই বাংলাদেশের অগ্রগতির শর্তগুলো সৃষ্টি হবে।
প্রথম আলো  কার্যকর সংসদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ?
রেনাটা ডেজালিয়েন  গণতন্ত্রে সংসদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নানা মতের প্রতিফলন ঘটে। বিতর্ক হয়। গণতন্ত্রে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমান সংসদের কমিটিগুলো দ্রুততার সঙ্গে গঠিত হয়েছে। এটা একটি শক্তির দিক। তা ছাড়া এটাও লক্ষণীয় যে এবার সাতটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রধান সরকারি দলের বাইরের দল থেকে। তাঁদের দুজন প্রধান বিরোধী দলের। সংসদে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে যাতে আরও গভীর আলোচনা হয়, সেটা দেখা দরকার। বিএনপি সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। এটা কার্যকর সংসদের জন্য শুভ প্রভাব ফেলবে। দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকাও এখানে বেশ উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন চ্যানেলে টক শোগুলো জনসাধারণকে বিভিন্ন বিষয়ে ভাবতে সাহায্য করে। তা ছাড়া গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সংসদ সচিবালয়কে শক্তিশালী করার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ইউএনডিপিও সহায়তা দিচ্ছে। মূল ব্যাপার হলো সংসদে রাজনৈতিক ও জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা। এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হবে।
প্রথম আলো  জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
রেনাটা ডেজালিয়েন  বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হয় ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম অধিবেশনে বক্তৃব্য দেন। এর আগে থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল। বিশেষত, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। বিশ্বশান্তি সমুন্নত রাখতেও বাংলাদেশ ভূমিকা রাখছে। পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রঋণ বর্ষ (২০০৫) এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সম্প্রতি কোপেনহেগেনে বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ দৃষ্টি আকর্ষণী ভূমিকা পালন করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে বাংলাদেশ ছিল অগ্রণী ভূমিকায়।
প্রথম আলো  জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা কেমন?
রেনাটা ডেজালিয়েন  এক কথায় অসাধারণ। এ পর্যন্ত প্রায় ৮৩ হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী ৩৬টি শান্তি মিশনে অবদান রেখেছেন। তাঁদের ভূমিকা জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। পেশাগত দক্ষতা, আন্তরিকতা, দরদ ও অঙ্গীকারের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব নিজে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেছেন। সম্প্রতি শুধু নারী পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এটা এই প্রথম। শান্তি মিশনে কাজ করতে গিয়ে ৯৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আত্মদান করেছেন। তাঁদের এই আত্মদান বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মহান আদর্শকে সমুন্নত করেছে। জাতিসংঘ তাঁদের অবদান গভীরভাবে অনুধাবন করে এবং তাঁদের আত্মদান যেন চিরসমুজ্জ্বল থাকে, জাতিসংঘ তা নিশ্চিত করবে।
প্রথম আলো  ছবিসহ ভোটার পরিচয়পত্র তৈরিতে ইউএনডিপি সাহায্য করেছে। আপনাদের অভিজ্ঞতা বলবেন কী?
রেনাটা ডেজালিয়েন  প্রায় আট কোটি ১০ লাখ ভোটারের তালিকা প্রস্তুত করা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা সুসম্পন্ন হয়েছে। এটা বাংলাদেশের একটা বড় সাফল্য। কোনো দেশ কম্পিউটারে এত বেশিসংখ্যক ভোটারের ছবিসহ তালিকাভুক্তি এত কম সময়ে, নিখুঁতভাবে ও স্বল্প বাজেটের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারেনি। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছিল। উন্নয়ন সহযোগী ১০টি দেশ ও সংস্থা সহযোগিতা দিয়েছে। এর মধ্যে নানা বাধাবিপত্তি ছিল। ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চল বিপর্যস্ত হয়। কিন্তু সবকিছুর পরও ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এই ভোটার তালিকা তৈরির প্রক্রিয়াটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে অনুকরণীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এটা নিয়ে গর্ব করতে পারে।
প্রথম আলো  সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতিগুলো সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
রেনাটা ডেজালিয়েন  দেখুন, বেশির ভাগ স্বল্পোন্নত দেশ এখনো ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক মন্দার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি, কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে চলেছে। একটি কারণ এই যে, এর অর্থনীতি আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে খুব বেশি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত নয়। আরেকটি কারণ হলো, এর রপ্তানিপণ্য কম দামের, যেগুলো কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অর্থনীতি যে সমস্যায় পড়েনি, তা নয়। কোনো কোনো পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। প্রবাসে চাকরির চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে অর্থনীতিতে এবং সেই সঙ্গে সামাজিক খাতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় নারী-পুরুষ সমতা অর্জিত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ও শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রণোদনার কারণে। অবশ্য শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষার নিম্নমানের জন্য স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনে অনেক মানুষের ভোগান্তি হয়। যদিও বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতি ও দ্রুত সাড়া দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছে, তাও এ ক্ষেত্রে তাকে আরও অনেক বেশি এগিয়ে যেতে হবে।
প্রথম আলো  ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির (এক-এগারো) পরিবর্তন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
রেনাটা ডেজালিয়েন  সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম শর্ত ছিল নির্বাচন কমিশন ও ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সব পক্ষের আস্থা অর্জন। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকেরা এ ব্যাপারে মতৈক্যে আসতে পারেনি। উচ্চ আদালত ২০০৬ সালে ভোটার তালিকা বেআইনি ঘোষণা করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে রাস্তায় সহিংস আন্দোলন অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও দেশের অনেক মানুষ মনে করেন যে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ নির্বাচনের সময় ও এর পরে সংঘাতের আশঙ্কা করে। জাতিসংঘও উদ্বিগ্ন ছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব একজন ব্যক্তিগত দূত পাঠান। তিনি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা করে তিনি আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসায় আসার কথা বলেন। জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঢাকায় অনেক টেলিফোন আসে। অনেক বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সবকিছুর উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক সহনশীলতা ফিরিয়ে আনা, যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো সৃষ্টি হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠনের পর ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরিতে সরকারকে সাহায্য করাই ছিল জাতিসংঘের প্রধান কাজ। কীভাবে এই অসাধ্য সাধন হয়েছিল, সে কথা আমি আগেই বলেছি। জাতিসংঘ কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেয়। তা ছাড়া জাতিসংঘ অন্য নয়টি উন্নয়ন সহযোগীর মূল্যবান সহায়তা সমন্বয়ের কাজও করে।
প্রথম আলো  কয়েক দিন আগে আপনি বলেছেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারে জাতিসংঘ সহায়তা দেবে। সেটা কী ধরনের এবং ওই সহযোগিতা কোন পর্যায়ে রয়েছে?
রেনাটা ডেজালিয়েন  গত কয়েক সপ্তাহে গণমাধ্যমে আমার যে বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে, তার কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ আসে। অন্যান্য দেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কীভাবে কাজ করে, সে ব্যাপারে সরকার জানতে চায়। জাতিসংঘ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। কারণ, আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে অন্য কোনো ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়নি এবং জাতিসংঘও বাড়তি কোনো সহায়তার কথা বলেনি।
প্রথম আলো  সম্প্রতি আপনি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত্ করেছেন।
রেনাটা ডেজালিয়েন  তাঁদের সঙ্গে মূলত বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে কথা হয়েছে। জ্বালানির সংকট, পানির সমস্যা প্রভৃতি বিষয় আলোচনায় এসেছে। তবে আমরা জোর দিয়েছি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার বিষয়ে। আমাদের সাক্ষাত্ ফলপ্রসূ হয়েছে।
প্রথম আলো  আমরা লক্ষ করছি, আপনি বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি পরছেন। আপনি সত্যিই বাঙালি সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন।
রেনাটা ডেজালিয়েন  আমি মনে করি, বিশ্বের নারীদের পোশাকের মধ্যে শাড়ি সবচেয়ে সুন্দর। এটা মাধুর্যময়, রুচিশীল ও চমৎকার। সুন্দর ফ্যাশনের সব উপাদানই এর মধ্যে রয়েছে। শাড়িতে বৈচিত্র্যময় উপাদান ব্যবহার করা হয়। এসব অবাক করার মতো এবং ওগুলো পরলে প্রতিবারই মনে ভিন্ন মাত্রার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। শাড়ির মধ্যে আমি অপরূপ সুন্দর এমব্রয়ডারি দেখেছি। বাংলাদেশের বিখ্যাত জামদানি শাড়ি বিদেশেও সুপরিচিত। আমি শুধু শাড়িই নয়, বাংলার সংস্কৃতিকেও ভালোবাসি। বিশেষত, এই মুহূর্তে পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির যে সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে, তা সত্যিই অসাধারণ। গান, শোভাযাত্রা ও আনন্দের মধ্য দিয়ে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর কী চমৎকার এক আয়োজন।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
রেনাটা ডেজালিয়েন  প্রথম আলো ও এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে জানাই আমার শুভেচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.