এ দেশের আদিবাসী নারীরা কেমন আছে? by শক্তিপদ ত্রিপুরা
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীসমাজের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে আজ এ দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। নারীসমাজ সমাজে সমমর্যাদা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য হাজার বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছে। মানবসমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও শ্রেণীব্যবস্থার উৎপত্তির মধ্য দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পায়।
তখন থেকে সমাজে নারীর সমমর্যাদা ও সম-অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। তখন থেকে নারীসমাজ নীরবে অথবা সরবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। সেই সংগ্রামের ফসল পৃথিবীর নারীসমাজের প্রেরণা ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সেই সংগ্রামের ফসল সিডও সনদ। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই সংগ্রামের ফসল 'নারী উন্নয়ন-নীতি'। এই সংগ্রামের ফসল ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনব্যবস্থা। নারীসমাজের এই সংগ্রামের ফসল নারীদের জন্য জাতীয় সংসদে ৩০ আসন থেকে ৪৫টি আসন অর্জন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি আদিবাসী নারীরাও সংগ্রামে পিছিয়ে নেই। পাহাড়ি নারীসমাজ কর্তৃক ১৯৭৫ সালে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি' গঠনের মধ্য দিয়ে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সমাজে তাদের অধিকার ও জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ সংগঠনের নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করে। ১৯৮৮ সালে গঠিত হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশন। হিল উইমেন্স ফেডারেশনও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পাহাড়িদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ আন্দোলনে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা জীবন দিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে নারীদের জন্য তিনটি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এই তিনটি আসনে বর্তমানে তিনজন নারী আসীন রয়েছেন। চুক্তি অনুসারে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনে ৯ জন নারী নিযুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়ার কারণে পার্বত্য নারীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসরণ করে পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দিয়ে পরিষদে পার্বত্য নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে বর্তায়।
সংগ্রামের কারণে পাহাড়ে নারীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী-বাঙালি সবাই বেশ কিছু বিশেষ অধিকার ভোগ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত সারা দেশে কোথাও জনপ্রতিধিত্বশীল জেলা পরিষদ কিংবা কোথাও আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিষ্ঠা হয়নি। এ কারণে সমতলের আদিবাসী বহু দিক দিয়ে অধিকারবঞ্চিত। সমতলের জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদে আদিবাসী নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদে আদিবাসী নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে সমতলের আদিবাসী নারীদের জন্য জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে আসন সংরক্ষণ করা যাবে না কেন? বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(৪) ধারা রাষ্ট্রকে সে অধিকার দিয়েছে। সংবিধানের এই বিধানবলে রাষ্ট্র দেশের জনগণের অনগ্রসর অংশের বিশেষ অধিকার প্রদানের জন্য যেকোনো আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। বর্তমান মহাজোট সরকার আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছে। এ সরকার নারীসমাজের ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। সুতরাং সরকার তার অঙ্গীকার রক্ষা করবে না কেন?
এ দেশের আদিবাসী নারীদের সমস্যা বহুমাত্রিক। তারা সাধারণ নারী হিসেবে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নানা ধরনের নির্যাতন, বঞ্চনা ও নিষ্পেষণের শিকার। আদিবাসী নারী হওয়ার কারণে তাঁরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার। আদিবাসীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হলে আদিবাসী নারীরা প্রথম সহিংসতার শিকার হয়। ভূমি নিয়ে সমস্যা হলে আদিবাসী নারীরা প্রথম নির্যাতনের শিকার হয়। ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার সিন্দুকছড়ি গ্রামের পণেমালা ত্রিপুরাকে সেটেলার বাঙালিরা রাতের অন্ধকারে হত্যা করেছিল। ভূমি বেদখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় সমতলের আদিবাসী নারী গীতিকা রেমাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। রাজশাহীর নওগাঁ জেলার খাতিরপুর উপজেলার পোরশা ও নেয়ামতপুর উপজেলার নাকইলে ভূমিদস্যুরা আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নেওয়ার জন্য আদিবাসী গ্রামে রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়েছিল। এ হামলায় বহু নারী-পুরুষ আহত হয়েছিল। সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূমিদস্যু ও তাদের সন্ত্রাসী দল দিনে-দুপুরে পুকুর ও ভূমি দখল করার জন্য আদিবাসী গ্রামে হামলা করেছিল। এ হামলায় একজন আদিবাসী নারী মারা গিয়েছিল এবং বহু আদিবাসী নারী-পুরুষ আহত হয়েছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সব অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করে জওয়ানদের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে আসার কথা। সরকার এখনো সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করেনি। আদিবাসী লোকালয়ে সেনা জওয়ানের উপস্থিতির কারণে আদিবাসী নারীরা নানা ধরনের সহিংস ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। তবে বাস্তবে দেখা গেছে যে যেসব ক্যাম্পের কমান্ডার সৎ, অসাম্প্রদায়িক ও সতর্ক_সেসব কমান্ডারের অধীনস্থ সেনা জওয়ানরা আদিবাসী নারী নির্যাতন থেকে বিরত থাকে। সেটেলার বাঙালি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বড় সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা স্থায়ী বাঙালি রয়েছে, তাদের সঙ্গে পাহাড়িদের কোনো সমস্যা নেই। যেসব গরিব বাঙালিকে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রলোভন দেখিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে এসে আদিবাসীদের ভূমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে পাহাড়িদের বিরোধ। এসব সেটেলার বাঙালি কর্তৃক আদিবাসী নারীরা প্রতিনিয়ত ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে।
আদিবাসী নারীসমাজ দেশের নারীসমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আদিবাসী নারীদের অধিকারহীনতা কিংবা নিপীড়ন-নির্যাতনে রেখে সারা বাংলাদেশের নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা পূর্ণাঙ্গতা পেতে পারে না। আদিবাসী নারী তথা দেশের নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সঠিক পথে ও বলিষ্ঠভাবে পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী, বর্তমান সরকারে বহু প্রভাবশালী নারী মন্ত্রী আসীন।
আজ বহু বছর ধরে শেখ হাসিনা নয়তো খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। তথাপি নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়িত হতে পারছে না। তথাপি দেশের নারীসমাজ পরিবারে, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। তাহলে আমরা কি বলতে পারি না, এর পেছনে কোথাও না কোথাও গলদ রয়েছে? বিষয়টি নারীসমাজকে বিশেষত দেশের নারী নেতৃত্বকে গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি আদিবাসী নারীরাও সংগ্রামে পিছিয়ে নেই। পাহাড়ি নারীসমাজ কর্তৃক ১৯৭৫ সালে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি' গঠনের মধ্য দিয়ে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সমাজে তাদের অধিকার ও জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ সংগঠনের নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগ্রামেও অংশগ্রহণ করে। ১৯৮৮ সালে গঠিত হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশন। হিল উইমেন্স ফেডারেশনও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পাহাড়িদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ আন্দোলনে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা জীবন দিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে নারীদের জন্য তিনটি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এই তিনটি আসনে বর্তমানে তিনজন নারী আসীন রয়েছেন। চুক্তি অনুসারে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনে ৯ জন নারী নিযুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়ার কারণে পার্বত্য নারীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসরণ করে পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দিয়ে পরিষদে পার্বত্য নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে বর্তায়।
সংগ্রামের কারণে পাহাড়ে নারীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী-বাঙালি সবাই বেশ কিছু বিশেষ অধিকার ভোগ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত সারা দেশে কোথাও জনপ্রতিধিত্বশীল জেলা পরিষদ কিংবা কোথাও আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিষ্ঠা হয়নি। এ কারণে সমতলের আদিবাসী বহু দিক দিয়ে অধিকারবঞ্চিত। সমতলের জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা ইউনিয়ন পরিষদে আদিবাসী নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদে আদিবাসী নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে সমতলের আদিবাসী নারীদের জন্য জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে আসন সংরক্ষণ করা যাবে না কেন? বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(৪) ধারা রাষ্ট্রকে সে অধিকার দিয়েছে। সংবিধানের এই বিধানবলে রাষ্ট্র দেশের জনগণের অনগ্রসর অংশের বিশেষ অধিকার প্রদানের জন্য যেকোনো আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। বর্তমান মহাজোট সরকার আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছে। এ সরকার নারীসমাজের ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। সুতরাং সরকার তার অঙ্গীকার রক্ষা করবে না কেন?
এ দেশের আদিবাসী নারীদের সমস্যা বহুমাত্রিক। তারা সাধারণ নারী হিসেবে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নানা ধরনের নির্যাতন, বঞ্চনা ও নিষ্পেষণের শিকার। আদিবাসী নারী হওয়ার কারণে তাঁরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার। আদিবাসীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হলে আদিবাসী নারীরা প্রথম সহিংসতার শিকার হয়। ভূমি নিয়ে সমস্যা হলে আদিবাসী নারীরা প্রথম নির্যাতনের শিকার হয়। ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার সিন্দুকছড়ি গ্রামের পণেমালা ত্রিপুরাকে সেটেলার বাঙালিরা রাতের অন্ধকারে হত্যা করেছিল। ভূমি বেদখলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় সমতলের আদিবাসী নারী গীতিকা রেমাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। রাজশাহীর নওগাঁ জেলার খাতিরপুর উপজেলার পোরশা ও নেয়ামতপুর উপজেলার নাকইলে ভূমিদস্যুরা আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নেওয়ার জন্য আদিবাসী গ্রামে রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়েছিল। এ হামলায় বহু নারী-পুরুষ আহত হয়েছিল। সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূমিদস্যু ও তাদের সন্ত্রাসী দল দিনে-দুপুরে পুকুর ও ভূমি দখল করার জন্য আদিবাসী গ্রামে হামলা করেছিল। এ হামলায় একজন আদিবাসী নারী মারা গিয়েছিল এবং বহু আদিবাসী নারী-পুরুষ আহত হয়েছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সব অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করে জওয়ানদের ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে আসার কথা। সরকার এখনো সব অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করেনি। আদিবাসী লোকালয়ে সেনা জওয়ানের উপস্থিতির কারণে আদিবাসী নারীরা নানা ধরনের সহিংস ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। তবে বাস্তবে দেখা গেছে যে যেসব ক্যাম্পের কমান্ডার সৎ, অসাম্প্রদায়িক ও সতর্ক_সেসব কমান্ডারের অধীনস্থ সেনা জওয়ানরা আদিবাসী নারী নির্যাতন থেকে বিরত থাকে। সেটেলার বাঙালি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বড় সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা স্থায়ী বাঙালি রয়েছে, তাদের সঙ্গে পাহাড়িদের কোনো সমস্যা নেই। যেসব গরিব বাঙালিকে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রলোভন দেখিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে এসে আদিবাসীদের ভূমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে পাহাড়িদের বিরোধ। এসব সেটেলার বাঙালি কর্তৃক আদিবাসী নারীরা প্রতিনিয়ত ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে।
আদিবাসী নারীসমাজ দেশের নারীসমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আদিবাসী নারীদের অধিকারহীনতা কিংবা নিপীড়ন-নির্যাতনে রেখে সারা বাংলাদেশের নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা পূর্ণাঙ্গতা পেতে পারে না। আদিবাসী নারী তথা দেশের নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সঠিক পথে ও বলিষ্ঠভাবে পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী, বর্তমান সরকারে বহু প্রভাবশালী নারী মন্ত্রী আসীন।
আজ বহু বছর ধরে শেখ হাসিনা নয়তো খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। তথাপি নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়িত হতে পারছে না। তথাপি দেশের নারীসমাজ পরিবারে, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। তাহলে আমরা কি বলতে পারি না, এর পেছনে কোথাও না কোথাও গলদ রয়েছে? বিষয়টি নারীসমাজকে বিশেষত দেশের নারী নেতৃত্বকে গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট
No comments