বিষয়টির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন-সাংসদদের নামে রিকশা

রাজধানীতে বৈধ রিকশার চেয়ে অবৈধ রিকশার সংখ্যা যে কয়েক গুণ বেশি, সেটি নতুন খবর নয়। নতুন খবর হলো, সাংসদদের নামে যেসব রিকশা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ফের রাজধানীতেই যথারীতি চলাচল করছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে বৈধ রিকশার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৫৫৪।


কিন্তু বর্তমানে চলাচল করছে চার থেকে পাঁচ লাখ রিকশা। কীভাবে এটি সম্ভব হলো? ডিসিসি যে আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমগ্ন এবং আমাদের জনপ্রতিনিধিরাও যে সবাই সাধুসজ্জন নন, রিকশার ঘটনাটিই তার প্রমাণ। সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু সংগঠন লাইসেন্স ব্যবসা ফেঁদে বসে। বিএনপির আমলে জাতীয়তাবাদী এবং বর্তমান সরকারের আমলে হরেক কিসিমের লীগের ব্যানারে দলীয় কর্মী ও ক্যাডাররা আত্মস্বার্থ উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব এসব অন্যায়-অপকর্ম থেকে তাদের বিরত রাখা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কর্মী ও ক্যাডারদের সঙ্গে তাঁরাও পাল্লা দিয়ে সেসব বেআইনি কাজে যুক্ত হচ্ছেন।
রাজধানীতে রিকশার চাপ কমাতে ডিসিসি এর আগে লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। এসবের মধ্যে ছিল লাইসেন্সবিহীন রিকশা আটক এবং তা ভেঙে ফেলা। আবার নগদ নারায়ণের বিনিময়ে আটক রিকশা ছেড়ে দেওয়ার বহু নজিরও রয়েছে। তবে ডিসিসি তথা স্থানীয় সরকারের যে সিদ্ধান্তটি জনমনে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছিল তা হলো, আটক অবৈধ রিকশাগুলো ধ্বংস না করে রাজধানীর বাইরের সাংসদদের নামে বরাদ্দ দেওয়া। ব্যবস্থাটি মন্দ ছিল না যদি সংশ্লিষ্ট সাংসদেরা ন্যূনতম সততার পরিচয় দিতেন। গোল বেধেছে সেখানেই। বাস্তবে দেখা গেল, রাজধানীতে রিকশার চাপ কমেনি, বরং দুর্নীতির পথ প্রশস্ত হয়েছে। প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনা ত্রিশেক সাংসদ চাহিদাপত্র দিয়ে প্রত্যেকে ১০০ থেকে ৫০০টি রিকশা বরাদ্দ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা সেসব রিকশা নির্বাচনী এলাকায় না পাঠিয়ে তা আবার রাজধানীতেই বিক্রি করে দিয়েছেন।
এর মাধ্যমে সাংসদেরা জেনেশুনে দুটি অন্যায় করেছেন। প্রথমত, নির্বাচনী এলাকার নামে রিকশা বরাদ্দ নিলেও এলাকাবাসীকে তা থেকে বঞ্চিত করেছেন; দ্বিতীয়ত, মুফতে পাওয়া রিকশা বিক্রি করে নগদ কিছু কামিয়ে নিয়েছেন। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র সাংসদেরা নাক গলাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাঁরা রিকশা ব্যবসায় নাম লেখালেন! আইনপ্রণেতা হয়ে তাঁরা এ ধরনের বেআইনি কাজ কীভাবে করলেন? এ বিষয়ে সুষুম ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যেসব সাংসদ বরাদ্দ পাওয়া রিকশা নির্বাচনী এলাকায় নেননি, তাঁদের কাছ থেকে সেগুলো ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাংসদ বলেই তাঁরা জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন না। যাঁরা রিকশা বিক্রির সামান্য টাকার লোভ সংবরণ করতে পারেন না, তাঁরা সংসদ সদস্য পদে থাকার নৈতিক অধিকার রাখেন কি না, সেটাই বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.