চারদিক-ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই by সুমেল সারাফাত
চারদিকে বাতাসের উদ্দাম উন্মত্ততা। বিশাল মাঠে চমৎকার সাজানো মঞ্চ আর চারদিকে লোক ও কারুপণ্যের পসরা। মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে ‘হারানো সুর ফিরে এল, রুদ্রের মেলা মিলিল, জারি-সারি, ধুয়ার সুরে হূদয় পাগল করে, মনরে হূদয় পাগল করে’। রুদ্র মেলার কথা বলছি।
তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর স্মরণে মিঠেখালী ফুটবল মাঠে রুদ্র স্মৃতি সংসদের আয়োজনে ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’ এ স্লোগানে দুই দিনব্যাপী রুদ্র মেলা উদ্যাপিত হলো। মংলা উপজেলার সর্বস্তরের বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে এ মেলা হয়ে উঠেছিল জমজমাট ও উৎসবময়।
তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১)। মাটি ও মানুষের প্রতি আমূল দায়বদ্ধ এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাঁকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি।
অকালপ্রয়াত এই কবি তাঁর কাব্যযাত্রায় যুগপত্ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’—এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন—‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। মাত্র ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।
১৭ তারিখ বিকেলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে আলোচনা করেন রুদ্রের বন্ধু তথ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও রেজা সেলিম, স্থানীয় সাংসদ হাবিবুন নাহার, জেলা প্রশাসক মোয়াজ্জেম হোসেন, মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন মেলা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুন হাসান বীথি। রুদ্রের বন্ধু রেজা সেলিম বলেন, রুদ্র পরিবার মেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে রুদ্রকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে, যা রীতিমতো প্রশংসার যোগ্য। তথ্যসচিব রুদ্রের নামে মিঠেখালীতে একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের দাবি জানান। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্মরণযোগ্য পঙিক্তর মধ্য দিয়ে রুদ্র অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হূদয়ে। তাঁর নিজের গ্রামের অসংখ্য মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বারবার এই মেলায় আসতে চাই।’
আলোচনা সভা শেষে মূল মঞ্চে শুরু হয় রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি, রুদ্রের গান, গণসংগীত, লোকনৃত্য, বাউলগান ও পথনাটক। কবিতা আবৃত্তি করেন সুবীর ওবায়েদ, শাহাদাত হোসেন ও মাহিদুল ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন সন্তোষ বাউল, কানন বালা সরকার, বিপাশা, হালিমা পারভিন।
১৮ তারিখ সকালবেলায় আবহমান বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রুদ্র নাট্যদল নাটক পরিবেশন করে। সংগীত পরিবেশন করেন পথিক নবী। রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত চলে কবিগান। কবিয়াল সরকার রওশন ও সঞ্জয় মল্লিক কবিগান পরিবেশন করেন।
রুদ্র মেলার আয়োজন সম্পর্কে রুদ্র মেলা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুন হাসান বীথি বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দীর্ঘ ছয় বছর পর আমরা মেলা উদ্যাপন করতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে। মংলা, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক সাড়া আমাদের মেলাকে নিয়মিত রাখতে প্রেরণা জোগাবে।’ প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে আসা রুদ্রভক্ত মৃদুল চক্রবর্তী জানান, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ রকম একটি সুন্দর মেলা হতে পারে, তা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি।’ রুদ্রের বন্ধু রেজা সেলিম বলেন, এটা অভূতপূর্ব, রুদ্রের গ্রামের মানুষের যে ভালোবাসা রুদ্রের প্রতি, তা ঈর্ষা করার মতো। মিঠেখালীর চায়ের দোকানদার জালাল বলেন, ‘কবি (রুদ্র) সাহেবের মেলা এত দিন না হওয়ার কারণে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। এবার মেলা হওয়াতে আর এত লোক আসাতে আমরা সবাই খুব খুশি।’ মেলা প্রতিবছর করার জন্য তিনি রুদ্র পরিবারকে অনুরোধ জানান।
রুদ্র আমরণ যে বাঙালির সব দৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন, তাঁর কাব্যে, তাঁর গানে বারবার বাজিয়ে গেছেন যে মিলনের মহাসংগীত, সে রুদ্রকে উপলক্ষ করেই এ আয়োজন। রুদ্র মেলা হয়ে উঠুক তারুণ্যের মিলনমোহনা। এখানে মিলবে তরুণ মানুষ। যারা দেহে তরুণ, মনে তরুণ। তৈরি হবে সখ্য, গড়ে উঠবে ঐক্য—সৃষ্টির ঐক্য, ধ্বংসের ঐক্য, সংগ্রামের ঐক্য, শিল্পের ঐক্য। আর এই মিলনযজ্ঞের হোমানলে আমরা আহূতি দেব আমাদের সব হীনতা, ক্ষুদ্রতা, স্থবিরতা। তখনই তা রূপ নেবে রুদ্রের স্বপ্নের স্বদেশে। আর সেই স্বপ্নের প্রত্যাশায় এই রুদ্র মেলার আয়োজন। জয় হোক রুদ্র মেলার। জয় হোক তারুণ্যের।
তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১)। মাটি ও মানুষের প্রতি আমূল দায়বদ্ধ এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাঁকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি।
অকালপ্রয়াত এই কবি তাঁর কাব্যযাত্রায় যুগপত্ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’—এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন—‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। মাত্র ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।
১৭ তারিখ বিকেলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে আলোচনা করেন রুদ্রের বন্ধু তথ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও রেজা সেলিম, স্থানীয় সাংসদ হাবিবুন নাহার, জেলা প্রশাসক মোয়াজ্জেম হোসেন, মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন মেলা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুন হাসান বীথি। রুদ্রের বন্ধু রেজা সেলিম বলেন, রুদ্র পরিবার মেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে রুদ্রকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে, যা রীতিমতো প্রশংসার যোগ্য। তথ্যসচিব রুদ্রের নামে মিঠেখালীতে একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের দাবি জানান। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্মরণযোগ্য পঙিক্তর মধ্য দিয়ে রুদ্র অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হূদয়ে। তাঁর নিজের গ্রামের অসংখ্য মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বারবার এই মেলায় আসতে চাই।’
আলোচনা সভা শেষে মূল মঞ্চে শুরু হয় রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি, রুদ্রের গান, গণসংগীত, লোকনৃত্য, বাউলগান ও পথনাটক। কবিতা আবৃত্তি করেন সুবীর ওবায়েদ, শাহাদাত হোসেন ও মাহিদুল ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন সন্তোষ বাউল, কানন বালা সরকার, বিপাশা, হালিমা পারভিন।
১৮ তারিখ সকালবেলায় আবহমান বাঙালির সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রুদ্র নাট্যদল নাটক পরিবেশন করে। সংগীত পরিবেশন করেন পথিক নবী। রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত চলে কবিগান। কবিয়াল সরকার রওশন ও সঞ্জয় মল্লিক কবিগান পরিবেশন করেন।
রুদ্র মেলার আয়োজন সম্পর্কে রুদ্র মেলা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুন হাসান বীথি বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দীর্ঘ ছয় বছর পর আমরা মেলা উদ্যাপন করতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে। মংলা, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক সাড়া আমাদের মেলাকে নিয়মিত রাখতে প্রেরণা জোগাবে।’ প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে আসা রুদ্রভক্ত মৃদুল চক্রবর্তী জানান, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ রকম একটি সুন্দর মেলা হতে পারে, তা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি।’ রুদ্রের বন্ধু রেজা সেলিম বলেন, এটা অভূতপূর্ব, রুদ্রের গ্রামের মানুষের যে ভালোবাসা রুদ্রের প্রতি, তা ঈর্ষা করার মতো। মিঠেখালীর চায়ের দোকানদার জালাল বলেন, ‘কবি (রুদ্র) সাহেবের মেলা এত দিন না হওয়ার কারণে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। এবার মেলা হওয়াতে আর এত লোক আসাতে আমরা সবাই খুব খুশি।’ মেলা প্রতিবছর করার জন্য তিনি রুদ্র পরিবারকে অনুরোধ জানান।
রুদ্র আমরণ যে বাঙালির সব দৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন, তাঁর কাব্যে, তাঁর গানে বারবার বাজিয়ে গেছেন যে মিলনের মহাসংগীত, সে রুদ্রকে উপলক্ষ করেই এ আয়োজন। রুদ্র মেলা হয়ে উঠুক তারুণ্যের মিলনমোহনা। এখানে মিলবে তরুণ মানুষ। যারা দেহে তরুণ, মনে তরুণ। তৈরি হবে সখ্য, গড়ে উঠবে ঐক্য—সৃষ্টির ঐক্য, ধ্বংসের ঐক্য, সংগ্রামের ঐক্য, শিল্পের ঐক্য। আর এই মিলনযজ্ঞের হোমানলে আমরা আহূতি দেব আমাদের সব হীনতা, ক্ষুদ্রতা, স্থবিরতা। তখনই তা রূপ নেবে রুদ্রের স্বপ্নের স্বদেশে। আর সেই স্বপ্নের প্রত্যাশায় এই রুদ্র মেলার আয়োজন। জয় হোক রুদ্র মেলার। জয় হোক তারুণ্যের।
No comments