খুঁজে বের করতে হবে রাঘববোয়ালদেরও-সীমান্তের ওপারে ফেনসিডিলের কারখানা

দেশের তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ যে মাদক তথা ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়ছে, তার অন্যতম কারণ এই ক্ষতিকর পণ্যটির সহজলভ্যতা। বাংলাদেশে ফেনসিডিলের কোনো কারখানা নেই। কিন্তু হাটবাজারে যত্রতত্র এ পণ্যটি পাওয়া যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশটির কল্যাণে।


পত্রিকার খবর অনুযায়ী, সীমান্তের কাছাকাছি ভারতীয় ভূখণ্ডে ফেনসিডিলের বহু কারখানা স্থাপন করেছেন সে দেশের ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে একটি তালিকাও হস্তান্তর করা হয়, যাতে সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখণ্ডে ৩২টি ফেনসিডিলের কারখানার নাম-ঠিকানা রয়েছে।
ভারতে নেশাজাতীয় পণ্য হিসেবে ফেনসিডিলের ব্যবহার প্রায় শূন্যের কোঠায়। তার পরও সীমান্ত ঘেঁষে এসব কারখানা স্থাপনের একটাই উদ্দেশ্য—উৎপাদিত পণ্যটি বাংলাদেশে পাচার করা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের ব্যর্থতা তো আছেই; কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরাই বা কী করছে? যেখানে নিরীহ বাংলাদেশিরা সীমান্ত পার হতেই বিএসএফের গুলি খাচ্ছে, সেখানে টনকে টন ফেনসিডিল সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে কীভাবে? এর বেচাকেনা ও পাচারের সঙ্গে কারা জড়িত, তাও নিশ্চয়ই বিএসএফের অজানা নয়।
আসলে মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদেরই আঁতাত রয়েছে, রয়েছে মোটা অঙ্কের অবৈধ লেনদেনও। এর আগে মাদকদ্রব্যের পাচার রোধে দুই দেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়েও বহুবার বৈঠক হয়েছে এবং যৌথ ঘোষণা এসেছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। সীমান্তে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশ সর্বতোভাবে প্রতিবেশী দেশটিকে সহায়তা করেছে। মাদকদ্রব্য বা ফেনসিডিলের সমস্যাটি তার চেয়ে কম গুরুতর নয়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুক্তিসংগতভাবেই আশা করতে পারে, উল্লিখিত কারখানাগুলো বন্ধে ভারত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
এর পাশাপাশি দেশের ভেতর যাতে ফেনসিডিল বেচাকেনা না হতে পারে, সে ব্যাপারেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে। মাঝেমধ্যে দু-চারজন বাহক ও খুদে বিক্রেতাকে পাকড়াও করলে লাভ হবে না। এদের নেপথ্যের রাঘববোয়ালদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভারত যাতে সীমান্তবর্তী ফেনসিডিলের কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়, সে জন্য কূটনৈতিক প্রয়াসও অব্যাহত রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.