অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন-ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচন

যে দেশে নির্বাচন মানেই গণ-উৎসব, সে দেশে জাতীয় সংসদের একটি আসনের উপনির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শনিবার অনুষ্ঠেয় ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনের কিছুটা উত্তাপ জাতীয় রাজনীতিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি এই উপনির্বাচনকে নিয়েছে মর্যাদার লড়াই হিসেবে। দুই দলেই রয়েছেন শক্তিশালী প্রার্থী। শুরু থেকে তাঁরা জমজমাট প্রচার চালিয়ে আসছেন ভোটারদের নিজ নিজ পক্ষে টানতে।
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে হয়তো সেটি অস্বাভাবিকও নয়। অস্বাভাবিক হলো নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা কিংবা নির্ধারিত তারিখের দুই দিন আগে বিএনপির প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহমেদের নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি। তিনি নিজেও জানেন যে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শেষ মুহূর্তে এই দাবি তোলায় নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভবত বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পরদিন বিএনপির প্রার্থী বলেছেন, ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক, বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে আসবে না।’ ঢাকায় দলের মহাসচিবও বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’ আমরা তাঁদের এই অবস্থানকে ইতিবাচক বলে মনে করি। সেই সঙ্গে যেসব অভিযোগ তাঁরা এনেছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উচিত হবে তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
বিএনপির অভিযোগ, ইসি তাদের অভিযোগগুলো আমলে না নিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীকে সুবিধা করে দিয়েছে। অন্যদিকে কমিশনের দাবি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা তারা করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ২২ এপ্রিলের (গতকাল) মধ্যে বহিরাগত ব্যক্তিদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির দাবি, ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সেখানে বহাল তবিয়তে রয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপির কাছে যদি নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকে, গয়রহ অভিযোগ না তুলে তা ইসির কাছে পাঠানো উচিত। সন্ত্রাসী দুই দলেই আছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে দল-মতনির্বিশেষে; কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। ভোট গ্রহণের সময় যাতে সেখানে স্থানীয় বা রহিরাগত কোনো সন্ত্রাসী না থাকতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্য মোতায়েন করেছে ইসি। প্রয়োজনে আরও অতিরিক্ত সদস্য পাঠিয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকা থেকে বহিরাগত ব্যক্তিদের বের করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য। এলাকার রাজনৈতিক কর্মী-ক্যাডাররা সবার চেনামুখ হলেও বহিরাগত লোকজনকে চিহ্নিত করা কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শতভাগ নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সর্বোপরি ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্ন ও নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। সরকার, বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ চাইলে ভোলা-৩ আসনে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা কঠিন হবে না বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.