বিশ্ববিদ্যালয়-যৌন হয়রানি নিরোধ নীতিমালা হচ্ছে না কেন? by জোবাইদা নাসরীন
সামপ্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশ কিছু যৌন নিপীড়নের ঘটনা আবারও আলোচনায় এসেছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরোধ আইনের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিষয়ক কয়েকটি ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিষয়ক কয়েকটি ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন নারী-শিক্ষক তাঁরই সহকর্মী বিভাগীয় চেয়ারম্যান এক পুরুষ-শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন বিভাগীয় এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ এনেছেন বিভাগীয় ছাত্রী এবং প্রথম দফায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সেই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠান (প্রথম আলো, ৮ এপ্রিল ২০১০)।
২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে আচরণবিধি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন সেল গঠন এবং হাইকোর্টের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আচরণবিধি তৈরি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই আচরণবিধি তৈরি করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে এজেন্ট বহুমুখী। ছাত্র কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়ন, পুরুষ-শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়ন এবং পুরুষ-শিক্ষক কর্তৃক নারী-শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনা এখন পর্যন্ত দেখা গেছে। ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রের বরাতে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক নারী-শিক্ষক তাঁর সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, এক বছর ধরে বিভাগের সভাপতি মুঠোফোনে ও সামনাসামনি নানা অশ্লীল মন্তব্য করে তাঁকে হয়রানি করে আসছেন। পত্রিকান্তরে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে পাঁচবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিনীত জিজ্ঞাসা, কেন একজন নারী-শিক্ষককে তাঁরই সহকর্মীর হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য পাঁচবার অভিযোগ করতে হলো? এর আগের চারটি অভিযোগ কোথায় গেল, কেন সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হলো না? এতবার অভিযোগ করার পরও অভিযুক্তকে কেন সহকারী প্রক্টর হিসেবে রাখা হলো? অভিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষক-রাজনীতিতে প্রভাবশালী বলেই কি আগের চারটি অভিযোগ চাপা দেওয়া হলো? যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে এবং যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি উঠেছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য কীভাবে এ ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে এত দিন ব্যবস্থা নিলেন না?
যৌন হয়রানি-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এটি স্পষ্টতই যৌন হয়রানি। উল্লেখ্য, যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে, তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলার কথা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির নিয়োগকালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আলোচিত হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পুরুষ-শিক্ষক কর্তৃক নারী-শিক্ষককে যৌন হয়রানির ঘটনাও এ-ই প্রথম নয়। প্রায় এক যুগ আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের একজন নারী-শিক্ষক সে সময়ের উপাচার্যকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন সেই বিভাগেরই এক পুরুষ-শিক্ষক। কিন্তু দাপুটে শিক্ষক-রাজনীতির কারণে সে সময় ওই ঘটনার কোনো সুরাহা মেলেনি।
শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই অনেক পুরুষ-শিক্ষক বিভিন্ন নারী-শিক্ষকের শরীর নিয়ে, উচ্চতা নিয়ে, এমনকি গায়ের রং নিয়ে নানা ধরনের অশ্লীল মন্তব্য করেন, যা একজন নারীর মর্যাদাবোধে আঘাত করে, তাঁকে আতঙ্কিত করে তোলে, সহকর্মীর প্রতি মর্যাদাবোধের বিপরীতে তাঁর থেকে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করে। একজন নারী-শিক্ষককে যদি তাঁর শরীর নিয়ে, উচ্চতা নিয়ে তাঁরই সহকর্মীর কটূক্তির ভয়ে সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকতে হয়, তাহলে তিনি কীভাবে স্বচ্ছন্দে কাজ করবেন?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী-শিক্ষকেরা পরবর্তী অধিকতর ঝামেলার ভয়ে এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করেন না। এমনকি কেউ কেউ করলেও এর কোনো প্রতিকার পান না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান শিক্ষক-রাজনীতি ভোট হারানোর ভয়ে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে থাকে না। আবার এই অভিযুক্ত শিক্ষকেরাও কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু তদন্ত কমিটি গঠন করেই চিরস্থায়ীভাবে আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয় এ ধরনের অপরাধ। বিচারের পরিবর্তে অভিযোগের পাওনা হিসেবে অভিযোগকারীকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যেতে হয়। যেসব শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন তাঁদের অনেককে নানা শাস্তিও পেতে হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁর একাডেমিক, রাজনৈতিক ও পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা আর দাপট নিয়ে থাকছেন বহাল তবিয়তে। তাই এ ধরনের ঘটনা কমে তো না-ই বরং বাড়ছে। ছাত্রী থেকে সহকর্মী, কেউই নিরাপদ নন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো পুরুষ-শিক্ষকের হাত থেকে।
গত এক দশকে দেশের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকেন্দ্রিক আলোচিত ১২টি যৌন হয়রানির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি) ঘটনার মাত্র একটির ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে (প্রথম আলো, ৮ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী)। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দু-একটি ক্ষেত্রে নামমাত্র শাস্তি হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা না থাকায় শাস্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হচ্ছে না।
এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কেন যৌন হয়রানি নিরোধ নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন করেনি, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তির কাছে অনুরোধ, বর্তমানে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
zobaidanasreen@gmail.com
২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে আচরণবিধি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন সেল গঠন এবং হাইকোর্টের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আচরণবিধি তৈরি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই আচরণবিধি তৈরি করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে এজেন্ট বহুমুখী। ছাত্র কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়ন, পুরুষ-শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়ন এবং পুরুষ-শিক্ষক কর্তৃক নারী-শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনা এখন পর্যন্ত দেখা গেছে। ১৬ এপ্রিল প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রের বরাতে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক নারী-শিক্ষক তাঁর সহকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, এক বছর ধরে বিভাগের সভাপতি মুঠোফোনে ও সামনাসামনি নানা অশ্লীল মন্তব্য করে তাঁকে হয়রানি করে আসছেন। পত্রিকান্তরে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে পাঁচবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিনীত জিজ্ঞাসা, কেন একজন নারী-শিক্ষককে তাঁরই সহকর্মীর হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য পাঁচবার অভিযোগ করতে হলো? এর আগের চারটি অভিযোগ কোথায় গেল, কেন সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হলো না? এতবার অভিযোগ করার পরও অভিযুক্তকে কেন সহকারী প্রক্টর হিসেবে রাখা হলো? অভিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষক-রাজনীতিতে প্রভাবশালী বলেই কি আগের চারটি অভিযোগ চাপা দেওয়া হলো? যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে এবং যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি উঠেছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য কীভাবে এ ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে এত দিন ব্যবস্থা নিলেন না?
যৌন হয়রানি-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এটি স্পষ্টতই যৌন হয়রানি। উল্লেখ্য, যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে, তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলার কথা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির নিয়োগকালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আলোচিত হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পুরুষ-শিক্ষক কর্তৃক নারী-শিক্ষককে যৌন হয়রানির ঘটনাও এ-ই প্রথম নয়। প্রায় এক যুগ আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের একজন নারী-শিক্ষক সে সময়ের উপাচার্যকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন সেই বিভাগেরই এক পুরুষ-শিক্ষক। কিন্তু দাপুটে শিক্ষক-রাজনীতির কারণে সে সময় ওই ঘটনার কোনো সুরাহা মেলেনি।
শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই অনেক পুরুষ-শিক্ষক বিভিন্ন নারী-শিক্ষকের শরীর নিয়ে, উচ্চতা নিয়ে, এমনকি গায়ের রং নিয়ে নানা ধরনের অশ্লীল মন্তব্য করেন, যা একজন নারীর মর্যাদাবোধে আঘাত করে, তাঁকে আতঙ্কিত করে তোলে, সহকর্মীর প্রতি মর্যাদাবোধের বিপরীতে তাঁর থেকে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করে। একজন নারী-শিক্ষককে যদি তাঁর শরীর নিয়ে, উচ্চতা নিয়ে তাঁরই সহকর্মীর কটূক্তির ভয়ে সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকতে হয়, তাহলে তিনি কীভাবে স্বচ্ছন্দে কাজ করবেন?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী-শিক্ষকেরা পরবর্তী অধিকতর ঝামেলার ভয়ে এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করেন না। এমনকি কেউ কেউ করলেও এর কোনো প্রতিকার পান না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান শিক্ষক-রাজনীতি ভোট হারানোর ভয়ে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে থাকে না। আবার এই অভিযুক্ত শিক্ষকেরাও কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু তদন্ত কমিটি গঠন করেই চিরস্থায়ীভাবে আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয় এ ধরনের অপরাধ। বিচারের পরিবর্তে অভিযোগের পাওনা হিসেবে অভিযোগকারীকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যেতে হয়। যেসব শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন তাঁদের অনেককে নানা শাস্তিও পেতে হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁর একাডেমিক, রাজনৈতিক ও পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা আর দাপট নিয়ে থাকছেন বহাল তবিয়তে। তাই এ ধরনের ঘটনা কমে তো না-ই বরং বাড়ছে। ছাত্রী থেকে সহকর্মী, কেউই নিরাপদ নন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো পুরুষ-শিক্ষকের হাত থেকে।
গত এক দশকে দেশের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকেন্দ্রিক আলোচিত ১২টি যৌন হয়রানির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি) ঘটনার মাত্র একটির ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে (প্রথম আলো, ৮ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী)। কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দু-একটি ক্ষেত্রে নামমাত্র শাস্তি হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা না থাকায় শাস্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হচ্ছে না।
এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কেন যৌন হয়রানি নিরোধ নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন করেনি, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তির কাছে অনুরোধ, বর্তমানে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
zobaidanasreen@gmail.com
No comments