ধরিত্রী দিবস-উদ্যাপন করার মতো একটি দিন by জেমস এফ মরিয়ার্টি

১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত প্রথম ধরিত্রী দিবস আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। সড়কে, উদ্যানে ও মিলনায়তনগুলোয় প্রায় দুই কোটি আমেরিকান সমবেত হয়ে ক্রমবর্ধমান পরিবেশদূষণ ও অবনতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই পরিবেশের জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে।


সে সময়ে পরিবেশ নিয়ে জনগণের মধ্যে যে সচেতনতা বাড়তে থাকে, তা-ই যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ১৯৭০ সালের শেষভাগে এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি গঠন করতে এবং প্রথমবারের মতো ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট, ১৯৭০ ও ক্লিন ওয়াটার অ্যাক্ট, ১৯৭২ পাস করতে উদ্বুদ্ধ করে।
প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার অভ্যন্তরীণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা বিশুদ্ধ জ্বালানি ও পরিবেশ সুরক্ষার কাজ এগিয়ে নিতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের পথ সুগম করেছে। গত ডিসেম্বর মাসে কোপেনহেগেনে বিশ্ব নেতারা ‘কোপেনহেগেন চুক্তি’তে মতৈক্য পোষণ করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সব দেশকেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে অবদান রাখতে হবে। এর জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা স্বচ্ছতার সঙ্গে যাচাই করতে হবে এবং দরিদ্রতম ও সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনে দেশগুলোকে সহায়তার জন্য অর্থায়নের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র যোগদান করবে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যবিশিষ্ট অঞ্চলগুলোতে বন উজাড় হওয়া রোধে কাজ করে যাবে।
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির সুযোগ বাড়াতেও বদ্ধপরিকর। ২০০৫ সালে আমাদের কংগ্রেস পল সাইমন ওয়াটার ফর দ্য পুওর অ্যাক্ট পাস করে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আমাদের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচিতে বিশুদ্ধ জল ও পয়োনিষ্কাশন পাওয়ার সুযোগকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতির লক্ষ্যে পরিণত করেছে। এক মাস আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বিশ্ব পানি দিবসে যেমনটি বলেছিলেন, ‘এ রকম ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না যে আমরা এমন একটি বিষয় খুঁজে পাই, যা কার্যকর কূটনীতি ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের লাখ লাখ প্রাণ বাঁচাতে, ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য জোগাতে, নারীর ক্ষমতায়ন করতে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে, পরিবেশ রক্ষা করতে এবং যুক্তরাষ্ট্র যে আপনার ও আপনাদের কল্যাণের প্রতি যত্নবান, সে বিষয়টি কোটি কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরার সুযোগ করে দেয়। পানি হচ্ছে এমনই একটি বিষয়।’ আর এই লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা জোরদার করবে, কূটনৈতিকভাবে অংশগ্রহণ করবে, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা বৃদ্ধি করবে এবং অংশীদারিকে প্রভাবিত করবে।
বিশ্ব এ বছর আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য বছর পালন করছে। জীববৈচিত্র্যের ধ্বংসের হুমকির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র অপরিচিত নয়। ১৯৬০-এর দশকে আমাদের জাতীয় প্রতীক ‘আমেরিকান বল্ড ইগল’ বিলুপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। এনডেনজারড স্পিসিজ অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর দ্বারা বাস্তবায়িত সংরক্ষণ প্রচেষ্টা ও ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার রোধ করার ফলে ২০০৭ সালে এ পাখিটির নাম বিপন্ন প্রজাতির তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২৭ শতাংশ অধিক ভূমি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি, যেমন—ন্যাশনাল পার্ক সিস্টেম, ন্যাশনাল ওয়াইল্ড লাইফ রিফিউজি সিস্টেম, ন্যাশনাল মেরিন সেঙ্কচুয়ারি প্রোগ্রাম ও ন্যাশনাল ফরেস্ট সিস্টেম প্রভৃতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সংরক্ষণের আওতাভুক্ত। মূলত ১৯০০ সালে পাস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো সংরক্ষণ আইন হিসেবে অধিষ্ঠিত লেসি অ্যাক্ট বনসম্পদ সংরক্ষণে আমাদের সাফল্যের সাক্ষ্য বহন করে।
পরিবেশের সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। ১৯৯৮ সালের ইউএস ট্রপিক্যাল ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যাক্টের (টিএফসিএ) আওতাভুক্ত কর্মসূচিগুলোর সুবিধা ভোগ করা প্রথম দেশ বাংলাদেশ। এই আইন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলের সংরক্ষণের জন্য অর্থের জোগান দিতে বিশেষ সুবিধার ঋণগুলো (কনসেশনাল লোনস) পরিশোধ করা থেকে অব্যাহতি দেয়। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটি ৩০ লাখ ডলার মূল্যমানের একটি পাঁচ বছর মেয়াদি ইন্টিগ্রেটেড প্রটেকটেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট (আইপিএসি বা আইপ্যাক) প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পটি জনগোষ্ঠীভিত্তিক প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার বিকাশে সহায়তা করছে। এই প্রকল্প ও দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচির মাধ্যমে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন করতে এবং এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় আমরা সহায়তা করছি।
আজ আমাদের এ গ্রহটিতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া, যাতে পৃথিবীর সম্পদ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা করা যায়; তা সে হোক বায়ু, পানি, উদ্ভিদ বা প্রাণী। অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় আমাদের অবশিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোর কথা ভুলে গেলে চলবে না। আর ৪০ বছর আগে শুরু হওয়া আধুনিক পরিবেশ আন্দোলনের ঐতিহ্যকে আরও সুসংগতভাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
জেমস এফ মরিয়ার্টি: বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

No comments

Powered by Blogger.