পাকিস্তান: একদিকে মসজিদ অন্যদিকে সেনাছাউনি by হাসান ফেরদৌস
দ্বিতীয় কিস্তি) পাকিস্তান: বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি, হুসেইন হাক্কানি, কানেগি এন্ডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস, ওয়াশিংটন, ২০০৫ হুসেইন হাক্কানি তাঁর বইতে পাকিস্তান সৃষ্টির আদি ইতিহাসের ওপরও কিছুটা আলোকপাত করেছেন।
সাম্প্রতিক কালে দেশ বিভাগের পেছনে জিন্নাহ ও মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাসভূমির দাবি নিয়ে একটি বিতর্ক নতুন করে সচল হয়েছে। বিজেপির নেতা যশোবন্ত সিং জিন্নাহ (অক্সফোর্ড ইউ, প্রেস, ২০১০) নামের ঢাউস একখানি বই লিখে এ কথা বোঝাতে চেয়েছেন, ভারত বিভক্তির পেছনে জিন্নাহ ও তাঁর দ্বিজাতিতত্ত্ব নয়, সে সময়ের কংগ্রেসি নেতৃত্বের ব্যর্থতাই অধিক দায়ী। যশোবন্ত বিশেষভাবে অভিযুক্ত করেছেন নেহরু ও বল্লভভাই প্যাটেলকে। গান্ধীকেও তিনি সমালোচনার বাইরে রাখেননি। তৎকালীন কংগ্রেসি নেতৃত্বের অদক্ষতা ও অধৈর্য এবং নিজেদের বাইরে অন্য কারও সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে অস্বীকৃতি শেষ পর্যন্ত জিন্নাহকে দেশ বিভাগের পথে ঠেলে দেয়। যশোবন্তের বক্তব্য অনুযায়ী, জিন্নাহ চেয়েছিলেন ভারতীয় কনফেডারেশনের ভেতর মুসলমান-অধ্যুষিত রাজ্যগুলোয় মুসলিম লিগের নেতৃত্বে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনসহ সরকার গঠনের অধিকার। ভারতীয় মুসলমানদের হয়ে একমাত্র তিনি এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ কথা বলতে পারে, এই দাবিরও স্বীকৃতি চেয়েছিলেন জিন্নাহ।
পাকিস্তানের দাবি রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার জন্য দর-কষাকষি ছাড়া আর কিছু নয়, এই যুক্তির সঙ্গে হাক্কানিও একমত। তিনি লিখেছেন, একটি দেশ কী করে চালাতে হয়, এ সম্বন্ধে মুসলিম লিগের নেতাদের কোনো ধারণাই ছিল না। বস্তুত, তাঁরা নতুন দেশ নয়, নতুন দেশের দাবি তুলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারাতেই ছিলেন। মুসলমানেরা যে একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং তাদের জন্য স্বতন্ত্র দেশ গঠিত হওয়া উচিত, সে যুক্তি প্রথম তুলে ধরেন কবি ইকবাল—সে কথা উল্লেখ করে হাক্কানি যুক্তি দেখিয়েছেন, ভারতের হিন্দু জনসংখ্যার পাশে মুসলমানেরা তাঁদের ‘ব্যতিক্রমী ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতা’র কারণে ভিন্ন জাতি হিসেবে স্বীকৃতির দাবিদার। কিন্তু ইকবাল বা জিন্নাহ কেউই সেই দাবির ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাধীন দেশ গঠনের কথা বলেননি। মুসলমানদের জন্য আলাদা যে বাসভূমির কথা তাঁরা বলেছিলেন, তা ভারতের ভেতরই একটি ফেডারেল ব্যবস্থায় সর্বভারতীয় ‘কনফেডারেশন’-এর অঙ্গরাজ্য হিসেবে টিকে থাকতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনোভাবেই মুসলমানদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির এই ফর্মুলা মানতে প্রস্তুত ছিল না। ‘এই ব্যর্থতার ফলই হলো ভারত বিভক্তি ও পাকিস্তান সৃষ্টি।’ জিন্নাহর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিবরণ দিতে গিয়ে হাক্কানি লিখেছেন (কংগ্রেসের প্রত্যাখ্যানের মুখে) যে কাজটা জিন্নাহ করতে সক্ষম হন তা হলো, ভারতের মুসলিম নেতৃত্বকে তাদের অন্তর্বিভেদ সত্ত্বেও এক সূত্রে বাঁধা।
তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, তা কিছুটা ধোঁয়াটে থাকলেও জিন্নাহ পাকিস্তানের দাবি তুলেছিলেন মূলত মুসলমানদের জন্য সমতাপূর্ণ ক্ষমতা ভোগের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা আদায় করতে—এ যুক্তিটি পাকিস্তানি ঐতিহাসিক আয়েশা জালাল বেশ কয়েক বছর আগেই করেছেন। নথিপত্র এনে যে প্রমাণপত্র তিনি দাখিল করেছেন, তা অনেকের কাছেই যুক্তিগ্রাহ্য বলে মনে হয়েছে। বস্তুত, দেশভাগ প্রশ্নে জিন্নাহর ভূমিকা নিয়ে চলতি যে পুনর্মূল্যায়ন, তার শুরু জালালের সোল স্পোকসম্যান গ্রন্থ থেকে (কেমব্রিজ ১৯৮৫)। পরে তিনি সেলফ অ্যান্ড সভেরেনিটি: ইন্ডিভিজ্যুয়াল অ্যান্ড কমিউনিটি ইন সাউথ এশিয়ান ইসলাম সিন্স ১৮৫০ (২০০০) গ্রন্থে সে তত্ত্ব আরও বিস্তৃত করেছেন। জালালের মোদ্দা যুক্তিটি এ রকম, জিন্নাহর লক্ষ্য ছিল অন্য কিছুর আগে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোর রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি। সে স্বীকৃতি আদায়ের পর এসব প্রদেশ কনফেডারেশনের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, না নিজেরা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করবে—সে প্রশ্নে দর-কষাকষি করা যাবে। মুসলিমপ্রধান প্রদেশগুলোয় মুসলিম লিগের প্রাধান্য প্রমাণ করা গেলেই জিন্নাহর পক্ষে কংগ্রেসের সঙ্গে এ প্রশ্নে বাদানুবাদ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু খুব স্পষ্টভাবে যদি সে চূড়ান্ত লক্ষ্য আগেভাগে নির্ধারিত হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা দেখা দেবে। যেসব প্রদেশে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে, তাদের বাদ দিয়ে পাকিস্তান গঠিত হোক, তা তারা চাইবে না। এ অবস্থায় ভারতজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মুসলমানদের একসঙ্গে সম্মিলিত করার কোনো সুনির্দিষ্ট পথ তাঁর সামনে ছিল না। কোনো অভিন্ন আদর্শ বা আইডিওলজি ছিল না, যা তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। এই সংকট সম্যক উপলব্ধি করে জিন্নাহ ঠিক করলেন, ধর্মই হবে সেই সূত্র, যা তাদের গোষ্ঠীবদ্ধতার চেহারা দিতে সাহায্য করবে। জালালের কথায়: ‘ধর্ম জিন্নাহর জন্য কোনো আইডিওলজি ছিল না, এমনকি তা প্রতিদ্বন্দ্বী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য কোনো অস্ত্রও ছিল না, এ ছিল শুধু মুসলমানদের একত্র করার একটা পথ মাত্র।’
জালালের এই তত্ত্ব পাকিস্তান ও ভারত—উভয় দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানে যারা ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠনের পক্ষে, তারা এ কথা বিশ্বাস করে যে জিন্নাহ ইসলামকে একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে ভারতে, যারা জিন্নাহকে একজন সাম্প্রদায়িক নেতা হিসেবে দেখতে আগ্রহী, তাদের কাছে ভারত বিভক্তি ও দেশভাগের সময়ের যে রক্তগঙ্গা বয়ে যায়, তার কারণ জিন্নাহ। শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের দাবি তিনিই তুলেছিলেন, ধর্মকে তুলে ধরার জন্য পাকিস্তানে জিন্নাহ যদি হন মহান নেতা তো, ভারতে একই কারণে তিনি দুষ্টগ্রহ।
তাঁর তত্ত্ব নিয়ে এই বাদানুবাদে জালাল নিজে খুশি হননি। পরে করাচির ডন পত্রিকায় কলাম লিখে বলতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁর মোদ্দা থিসিসটিই অনেকে ধরতে পারেনি। জাতি (নেশন) ও রাষ্ট্র (স্টেট)—এ দুইয়ের মধ্যে যে তফাত রয়েছে, অনেকেই তা এড়িয়ে গেছেন। জালালের কথায়, ১৯৪০ সালের পর মুসলমানদের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে কোনো বাদানুবাদে রাজি না হলেও জিন্নাহ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রশ্নে আলাপ-আলোচনায় প্রস্তুত ছিলেন ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। লাহোর প্রস্তাবের ঘনিষ্ঠ পাঠ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে জাতি হিসেবে স্বীকৃতির অর্থ ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ নয়। ‘১৯৩০ সালে মুসলিম লিগের এলাহাবাদ সম্মেলনে (কবি) ইকবালের ভাষণের পর থেকে মুসলমানদের পক্ষ থেকে একের পর এক বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, যার মোদ্দা কথা ছিল ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানেরা কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত থেকেও রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে পারে।’
পাকিস্তানের দাবি রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার জন্য দর-কষাকষি ছাড়া আর কিছু নয়, এই যুক্তির সঙ্গে হাক্কানিও একমত। তিনি লিখেছেন, একটি দেশ কী করে চালাতে হয়, এ সম্বন্ধে মুসলিম লিগের নেতাদের কোনো ধারণাই ছিল না। বস্তুত, তাঁরা নতুন দেশ নয়, নতুন দেশের দাবি তুলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারাতেই ছিলেন। মুসলমানেরা যে একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং তাদের জন্য স্বতন্ত্র দেশ গঠিত হওয়া উচিত, সে যুক্তি প্রথম তুলে ধরেন কবি ইকবাল—সে কথা উল্লেখ করে হাক্কানি যুক্তি দেখিয়েছেন, ভারতের হিন্দু জনসংখ্যার পাশে মুসলমানেরা তাঁদের ‘ব্যতিক্রমী ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতা’র কারণে ভিন্ন জাতি হিসেবে স্বীকৃতির দাবিদার। কিন্তু ইকবাল বা জিন্নাহ কেউই সেই দাবির ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাধীন দেশ গঠনের কথা বলেননি। মুসলমানদের জন্য আলাদা যে বাসভূমির কথা তাঁরা বলেছিলেন, তা ভারতের ভেতরই একটি ফেডারেল ব্যবস্থায় সর্বভারতীয় ‘কনফেডারেশন’-এর অঙ্গরাজ্য হিসেবে টিকে থাকতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনোভাবেই মুসলমানদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির এই ফর্মুলা মানতে প্রস্তুত ছিল না। ‘এই ব্যর্থতার ফলই হলো ভারত বিভক্তি ও পাকিস্তান সৃষ্টি।’ জিন্নাহর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিবরণ দিতে গিয়ে হাক্কানি লিখেছেন (কংগ্রেসের প্রত্যাখ্যানের মুখে) যে কাজটা জিন্নাহ করতে সক্ষম হন তা হলো, ভারতের মুসলিম নেতৃত্বকে তাদের অন্তর্বিভেদ সত্ত্বেও এক সূত্রে বাঁধা।
তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য কী, তা কিছুটা ধোঁয়াটে থাকলেও জিন্নাহ পাকিস্তানের দাবি তুলেছিলেন মূলত মুসলমানদের জন্য সমতাপূর্ণ ক্ষমতা ভোগের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা আদায় করতে—এ যুক্তিটি পাকিস্তানি ঐতিহাসিক আয়েশা জালাল বেশ কয়েক বছর আগেই করেছেন। নথিপত্র এনে যে প্রমাণপত্র তিনি দাখিল করেছেন, তা অনেকের কাছেই যুক্তিগ্রাহ্য বলে মনে হয়েছে। বস্তুত, দেশভাগ প্রশ্নে জিন্নাহর ভূমিকা নিয়ে চলতি যে পুনর্মূল্যায়ন, তার শুরু জালালের সোল স্পোকসম্যান গ্রন্থ থেকে (কেমব্রিজ ১৯৮৫)। পরে তিনি সেলফ অ্যান্ড সভেরেনিটি: ইন্ডিভিজ্যুয়াল অ্যান্ড কমিউনিটি ইন সাউথ এশিয়ান ইসলাম সিন্স ১৮৫০ (২০০০) গ্রন্থে সে তত্ত্ব আরও বিস্তৃত করেছেন। জালালের মোদ্দা যুক্তিটি এ রকম, জিন্নাহর লক্ষ্য ছিল অন্য কিছুর আগে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোর রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি। সে স্বীকৃতি আদায়ের পর এসব প্রদেশ কনফেডারেশনের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, না নিজেরা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করবে—সে প্রশ্নে দর-কষাকষি করা যাবে। মুসলিমপ্রধান প্রদেশগুলোয় মুসলিম লিগের প্রাধান্য প্রমাণ করা গেলেই জিন্নাহর পক্ষে কংগ্রেসের সঙ্গে এ প্রশ্নে বাদানুবাদ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু খুব স্পষ্টভাবে যদি সে চূড়ান্ত লক্ষ্য আগেভাগে নির্ধারিত হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা দেখা দেবে। যেসব প্রদেশে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে, তাদের বাদ দিয়ে পাকিস্তান গঠিত হোক, তা তারা চাইবে না। এ অবস্থায় ভারতজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মুসলমানদের একসঙ্গে সম্মিলিত করার কোনো সুনির্দিষ্ট পথ তাঁর সামনে ছিল না। কোনো অভিন্ন আদর্শ বা আইডিওলজি ছিল না, যা তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। এই সংকট সম্যক উপলব্ধি করে জিন্নাহ ঠিক করলেন, ধর্মই হবে সেই সূত্র, যা তাদের গোষ্ঠীবদ্ধতার চেহারা দিতে সাহায্য করবে। জালালের কথায়: ‘ধর্ম জিন্নাহর জন্য কোনো আইডিওলজি ছিল না, এমনকি তা প্রতিদ্বন্দ্বী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য কোনো অস্ত্রও ছিল না, এ ছিল শুধু মুসলমানদের একত্র করার একটা পথ মাত্র।’
জালালের এই তত্ত্ব পাকিস্তান ও ভারত—উভয় দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানে যারা ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠনের পক্ষে, তারা এ কথা বিশ্বাস করে যে জিন্নাহ ইসলামকে একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে ভারতে, যারা জিন্নাহকে একজন সাম্প্রদায়িক নেতা হিসেবে দেখতে আগ্রহী, তাদের কাছে ভারত বিভক্তি ও দেশভাগের সময়ের যে রক্তগঙ্গা বয়ে যায়, তার কারণ জিন্নাহ। শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের দাবি তিনিই তুলেছিলেন, ধর্মকে তুলে ধরার জন্য পাকিস্তানে জিন্নাহ যদি হন মহান নেতা তো, ভারতে একই কারণে তিনি দুষ্টগ্রহ।
তাঁর তত্ত্ব নিয়ে এই বাদানুবাদে জালাল নিজে খুশি হননি। পরে করাচির ডন পত্রিকায় কলাম লিখে বলতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁর মোদ্দা থিসিসটিই অনেকে ধরতে পারেনি। জাতি (নেশন) ও রাষ্ট্র (স্টেট)—এ দুইয়ের মধ্যে যে তফাত রয়েছে, অনেকেই তা এড়িয়ে গেছেন। জালালের কথায়, ১৯৪০ সালের পর মুসলমানদের জাতি হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে কোনো বাদানুবাদে রাজি না হলেও জিন্নাহ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রশ্নে আলাপ-আলোচনায় প্রস্তুত ছিলেন ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। লাহোর প্রস্তাবের ঘনিষ্ঠ পাঠ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে জাতি হিসেবে স্বীকৃতির অর্থ ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ নয়। ‘১৯৩০ সালে মুসলিম লিগের এলাহাবাদ সম্মেলনে (কবি) ইকবালের ভাষণের পর থেকে মুসলমানদের পক্ষ থেকে একের পর এক বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, যার মোদ্দা কথা ছিল ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানেরা কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত থেকেও রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে পারে।’
No comments