সুরক্ষিত এমপি হোস্টেলে নারীর গলিত লাশ

সুরক্ষিত সংসদ ভবন চত্বরে এমপি হোস্টেলের তিনতলায় কয়েক দিন ধরেই লাশটা পড়ে ছিল। যখন উৎকট গন্ধ বের হতে থাকল, তখনই বিষয়টি ধরা পড়ল। গতকাল রোববার বিকেলে এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ব্লক থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর হাত বাঁধা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।


পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, ৬ নম্বর ব্লকের তিনতলার ছাউনি থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। শুধু প্রিন্টের কামিজ পরিহিত ওই নারীর লাশ পাওয়া যায় বসে থাকা অবস্থায়। হাত-মাথা এক করে হলুদ কাপড় (সম্ভবত সালোয়ার) দিয়ে পাশের পানির পাইপের সঙ্গে বাঁধা ছিল লাশটি। তাঁকে ছুরি বা ধারালো অন্য কিছু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হতে পারে। ঘটনাস্থলে রক্তপাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই নারীর নাড়িভুঁড়ির কিছু অংশও বেরিয়ে এসেছে। কয়েক দিন ধরে পড়ে থাকায় শরীর পচে কালো হয়ে ফুলে উঠেছে। মুখাকৃতিও বোঝা যাচ্ছে না। তাঁর আনুমানিক বয়স ২০-২৫।
শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, গতকাল বিকেলে সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ফোন পেয়ে তাঁরা এখানে আসেন। কিন্তু উৎকট দুর্গন্ধে লাশ উদ্ধারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্গন্ধে ৬ নম্বর ব্লক ও আশপাশের এলাকা ভারী হয়ে উঠেছে। পুলিশ সদস্যদের ডেকে আনা ডোমরা কেরোসিন তেল ঢেলে দুর্গন্ধ কমিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সদস্যরা আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন, তবে দুর্গন্ধের কারণে তাঁদেরও বেগ পেতে হচ্ছিল।
এমপি হোস্টেল এলাকায় ঢুকতেই ফটকে রাখা নিবন্ধন খাতায় অতিথির নাম, জেলা, মুঠোফোন নম্বর, যার কাছে যাবেন, সেই সাংসদের নাম ইত্যাদি তথ্য লিখতে হয়। কিন্তু ফটকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরাও ওই নারীর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। ওই নারী কীভাবে ঢুকলেন, তার কিছুই জানেন না এমপি হোস্টেলের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ব্লকের তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ১৫ দিনের ছুটিতে রয়েছেন, গতকাল বিকেলে তাঁকে আসতে বলায় তিনি এসেছেন। তিনি ওই নারীর বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তত্ত্বাবধায়ক জানান, এমপি হোস্টেলের ভবনগুলো সব দোতলা। সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে একটা ছাউনি আছে। সেখান থেকেই লাশটা উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের দোতলায় ১২৯ থেকে ১৩৭ নম্বর কক্ষ। এই কক্ষগুলো মূলত বিএনপি-জামায়াত সাংসদদের। তবে তাঁদের অনেকেই কক্ষ বুঝে নেননি। ওই কক্ষগুলোর চাবি থাকে তত্ত্বাবধায়কের কাছে। সাংসদদের এই কক্ষগুলোতে রাতে কেউ থাকেন না বলে জানান আনোয়ার।
এ বিষয়ে গতকাল রাত পর্যন্ত মামলা হয়নি। এর আগে ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ব্লকের পার্কিংয়ে সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর গাড়িতে সাংসদের লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে খুন হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মী মো. ইব্রাহিম।

No comments

Powered by Blogger.