অপরাজেয় বাংলাদেশ by রানা আব্বাস
বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর চলতি বছরের মে মাসের সংখ্যাটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন লেখা হয়েছে বাংলাদেশকে নিয়ে। ডন বেল্টের লেখা 'দ্য কামিং স্ট্রর্ম (ধেয়ে আসছে ঝড়)' শিরোনামের দীর্ঘ এ প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের নানা সমস্যা, বিশেষ করে জলবায়ু বিপন্নতা নিয়ে নানা শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, প্রতিবেদক ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের সাংবাদিক জোয়ান হারির মতো বলেননি 'বাংলাদেশ : রক্তে যার জন্ম, পানিতে তার মৃত্যু'। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ২০০৭ সালে ইন্ডিপেনডেন্টে উলি্লখিত শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। এরপর থেকেই বিশ্বের দুঁদে সাংবাদিকরা বঙ্গবাসীর বিপন্ন মুখ নানা ভঙ্গিমায় বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার নিদারুণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর মাঝে সিডর-আইলার মতো দু'চারটা প্রবল পরাক্রমশালী ঝড় তাদের সে আশঙ্কার সলতেতে আগুন দিয়েছে মাত্র। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে কেবল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর এ প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে।
প্রতিবেদনে 'জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের একটি বিশাল অংশ ডুবে যাবে', 'দেশটি বিপন্ন হবে'_ এ ধরনের গতানুগতিক কথা বলার পাশাপাশি এ জটিল সমস্যার সঙ্গে কীভাবে মানুষ খাপ খাইয়ে চলছে কিংবা এ সমস্যা উত্তরণে সরকারি-বেসরকারি কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে তা সতর্কতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। '২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ২২ কোটি এবং দেশটির একটি বড় অংশ স্থায়ীভাবে পানির নিচে তলিয়ে যাবে।... এ সমস্যার কারণে দেশটির দক্ষিণ উপকূলের ১০ থেকে ৩০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।'
এরপর প্রতিবেদনের যত গভীরে যাওয়া যাবে ততই আশান্বিত হতে হবে। 'এত সমস্যার মাঝেও বাংলাদেশ এমন একটি স্থান, যেখানে পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা সম্ভব এবং সেখানে অনুন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যভাবে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে।' পরপর দুটি ভয়ঙ্কর ঝড়ের (সিডর ও আইলা) পরও সবুজ শ্যামলিমার বঙ্গীয় সন্তানরা প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সখ্য করে টিকে থাকার কথা জানলে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশি পাঠকের ভ্রান্ত শঙ্কা এবং সন্দেহ মুহূর্তেই উবে যেতে বাধ্য। নদীভাঙনে বারবার বাস্তুচ্যুত (বর্তমানে চর বাসিন্দা) ইব্রাহিম খলিলুল্লাহকে কতবার জায়গা বদল করেছেন_ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নির্ভারচিত্তে প্রতিবেদককে উল্টো জিজ্ঞেস করলেন, '৩০/৪০? এটা কোনো ব্যাপার হলো?' খলিলুল্লাহদের খাপ খাইয়ে চলার এ দৃঢ় মানসিকতা দেখে বিশ্বখ্যাত এ সাময়িকী তো বলেই ফেলেছে_ 'পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল মানুষরাই সম্ভবত চরে বাস করে। চরবাসীর এ অবিশ্বাস্য অভিযোজন ক্ষমতাকে 'এডাপটেশনে অলিম্পিক মেডেল' জেতার মতোই বলেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকী। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূলের বিলগুলোতে 'টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বা জোয়ারাধার' নামক স্বউদ্ভাবিত পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে প্রায় ৩২ বর্গকিলোমিটার জমি উঁচু করা হয়েছে। পলি ব্যবস্থাপনার এ অসাধারণ পদ্ধতি জলবায়ু অভিযোজনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি আমাদের কাছে সেই কাকের মতো, যার ঘরে কোকিল ডিম পেড়ে গেছে। দোষ করছে অন্যরা আর শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। সেই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্বের কাছে আমাদের বিপন্ন মুখখানি আতশি কাচ দিয়ে তুলে ধরছে। আমাদের দৃঢ় অভিযোজন কিংবা জলবায়ু সহনশীল ক্ষমতাকে সেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর এ প্রতিবেদনটি নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম, অনুসরণীয়। আকাশতল ও ধূলিপরের সর্বসুন্দর স্বাধীন এ ভূখণ্ড সম্পর্কে এমন ইতিবাচক বার্তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া এ মুহূর্তে বড্ড প্রয়োজন।
rana_geographer@yahoo.com
প্রতিবেদনে 'জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের একটি বিশাল অংশ ডুবে যাবে', 'দেশটি বিপন্ন হবে'_ এ ধরনের গতানুগতিক কথা বলার পাশাপাশি এ জটিল সমস্যার সঙ্গে কীভাবে মানুষ খাপ খাইয়ে চলছে কিংবা এ সমস্যা উত্তরণে সরকারি-বেসরকারি কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে তা সতর্কতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। '২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ২২ কোটি এবং দেশটির একটি বড় অংশ স্থায়ীভাবে পানির নিচে তলিয়ে যাবে।... এ সমস্যার কারণে দেশটির দক্ষিণ উপকূলের ১০ থেকে ৩০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।'
এরপর প্রতিবেদনের যত গভীরে যাওয়া যাবে ততই আশান্বিত হতে হবে। 'এত সমস্যার মাঝেও বাংলাদেশ এমন একটি স্থান, যেখানে পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা সম্ভব এবং সেখানে অনুন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যভাবে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে।' পরপর দুটি ভয়ঙ্কর ঝড়ের (সিডর ও আইলা) পরও সবুজ শ্যামলিমার বঙ্গীয় সন্তানরা প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সখ্য করে টিকে থাকার কথা জানলে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশি পাঠকের ভ্রান্ত শঙ্কা এবং সন্দেহ মুহূর্তেই উবে যেতে বাধ্য। নদীভাঙনে বারবার বাস্তুচ্যুত (বর্তমানে চর বাসিন্দা) ইব্রাহিম খলিলুল্লাহকে কতবার জায়গা বদল করেছেন_ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নির্ভারচিত্তে প্রতিবেদককে উল্টো জিজ্ঞেস করলেন, '৩০/৪০? এটা কোনো ব্যাপার হলো?' খলিলুল্লাহদের খাপ খাইয়ে চলার এ দৃঢ় মানসিকতা দেখে বিশ্বখ্যাত এ সাময়িকী তো বলেই ফেলেছে_ 'পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল মানুষরাই সম্ভবত চরে বাস করে। চরবাসীর এ অবিশ্বাস্য অভিযোজন ক্ষমতাকে 'এডাপটেশনে অলিম্পিক মেডেল' জেতার মতোই বলেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকী। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূলের বিলগুলোতে 'টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বা জোয়ারাধার' নামক স্বউদ্ভাবিত পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে প্রায় ৩২ বর্গকিলোমিটার জমি উঁচু করা হয়েছে। পলি ব্যবস্থাপনার এ অসাধারণ পদ্ধতি জলবায়ু অভিযোজনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি আমাদের কাছে সেই কাকের মতো, যার ঘরে কোকিল ডিম পেড়ে গেছে। দোষ করছে অন্যরা আর শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। সেই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্বের কাছে আমাদের বিপন্ন মুখখানি আতশি কাচ দিয়ে তুলে ধরছে। আমাদের দৃঢ় অভিযোজন কিংবা জলবায়ু সহনশীল ক্ষমতাকে সেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর এ প্রতিবেদনটি নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম, অনুসরণীয়। আকাশতল ও ধূলিপরের সর্বসুন্দর স্বাধীন এ ভূখণ্ড সম্পর্কে এমন ইতিবাচক বার্তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া এ মুহূর্তে বড্ড প্রয়োজন।
rana_geographer@yahoo.com
No comments