চারদিক-আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কাটা পা by ফারুক ওয়াসিফ
ঔপন্যাসিক বললেই অনেকের মনে ভাসে ভাবুক প্রকৃতির চশমাধারী এক ব্যক্তির কথা। যেন চশমার পুরুত্বই লেখকের গুরুত্বের নিরিখ। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বেলায়ও এমন ভাবনা অনেকের মনে জাগে। আহা, তাঁর মোটা ফ্রেমের পুরু চশমাটা! আহা, তাঁর তামাক খাওয়ার জাঁদরেল পাইপটা! আমার কেবল তাঁর পায়ের কথা মনে আসে। তাঁর কাটা পড়া পায়ের কথাই মনে পড়ে।
তিনি সেই ধরনের লেখক, যাঁদের মনের চোখকে প্রভাবিত করে তাঁদের পা। জোড়া পায়ে তাঁরা লোক-লোকান্তরে, গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ান। মানুষ দেখেন, ঢুকে পড়েন তাঁদের অন্দরের জগতে। পায়ে পায়ে তাঁরা চলে যান সেই প্রত্যন্তে, যেখানে জীবন ‘অনাগরিক’, ‘অসুশীল’ আর প্রকৃতি প্রায় ‘বুনো’। কিংবা এই রাজধানী, সভ্যতার এই বাংলাদেশি কেন্দ্র, তার জনসমতলেও অনেক ঘুরেছেন তিনি। পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে যমুনার চর, সাতক্ষীরা-বরিশাল থেকে তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড়—সব পথের ধুলা তাঁর পায়ে লেগেছে। সেই ধুলা জানিয়েছে সামান্য মানুষের বাঁচা-মরার অসামান্য ইতিহাস। সেই সব জানা থেকে সাহিত্য হয়, শিল্প হয়। সেই শিল্পকর্মের সুবাদে তাঁর সটান পা জোড়ার হাঁটাহাঁটির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই পা জোড়ার একটি কাটা যাওয়ার কথা। সেই কাটা পা নিয়ে তিনি চড়ে বসেন হুইলচেয়ারে। যেমনটা তাঁর খোয়াবনামা উপন্যাসে দেখি: বিদ্রোহী ফকিরদের নেতা মুনশি বায়তুল্লাহ ইংরেজের গুলি খাওয়া বুক নিয়ে মরে যাওয়ার পর চড়ে বসেছিলেন কাৎলাহারের বিলপাড়ের পাকুড়গাছের মাথায়। তাঁর অধীন মানুষ ও প্রকৃতিকে সেখান থেকেই দেখে রাখতেন। ইলিয়াসও অন্তিমে হুইলচেয়ারে করে চেষ্টা করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর উপন্যাসটি শেষ করতে চেয়েছিলেন। পারেননি, হুইলচেয়ারে বসে থাকতে পারেননি, পদাতিক জীবন ভুলতে পারেননি। মরে গিয়েছিলেন অকালে, মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে।
খুবই সচল ছিলেন। লেখক-শিবিরের সংগঠক হিসেবে জেলায় জেলায় সফর করেছেন, কাজের ফাঁকে চলে যাচ্ছেন আরও ভেতরে, পাকা সড়ক আর বিদ্যুতের খুঁটি ছাড়িয়ে আরও ৪০-৫০ মাইল ভেতরে। কখনো কারও মোটরসাইকেলের পেছনে বসে, কখনো বা নৌকায়। পা তাঁকে টেনে নিয়ে যেত গল্পের শিকড়ের কাছে, কাহিনির বীজের কাছে।
তাঁকে দেখি প্রথম ১৯৯৩ সালে, তখনো ইন্টারমিডিয়েট পাস করিনি। খবর পেলাম আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আসছেন বগুড়ায়। এক সন্ধ্যায় হাজির হলাম তাঁর জেলখানা রোডের পৈতৃক বাড়িতে। বগুড়ায় এলে এখানেই থাকতেন। অসময়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই ভরসন্ধ্যায় ঘরে তাঁর সামনে বসে একা আমি। কথা বলছেন আর এক হাতে ঊরুতে চাপ দিচ্ছেন। বুঝলাম, এটা তাঁর ব্যথা কমানোর কৌশল। পরদিনই যাবেন গাবতলী, কাৎলাহারের বিল এলাকায়। খোয়াবনামা লেখার কাজ চলছে, আরও কিছু খোঁজখবর চাই তাঁর। পরেরবারও দেখা হলো। বাইরের ঘরে বসে শুনতে পাচ্ছিলাম তাঁর টাইপরাইটারের খটাখট। সেদিনও ব্যথার চিহ্ন দেখলাম তাঁর মুখে। কিন্তু বলছিলেন, ‘আজ মহাস্থানগড়ে যাব, ওই উপন্যাসটার কথা ভাবা শুরু করেছি।’ প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের কৈবর্ত বিদ্রোহ আর একাত্তরের সময়কার মহাস্থানগড় এলাকার পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস লিখতে যাচ্ছেন। সেখানে এক পীর পরিবারের এগারোজনকে একসঙ্গে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। পীর পরিবারের তিন মুক্তিযোদ্ধাও সেদিন শহীদ হন।
তত দিনে খোয়াবনামা প্রকাশিত হয়েছে, সাড়া পড়ে গেছে আমাদের ছোট সাহিত্যসমাজে। এ রকমই একদিন ঢাকায় আজিমপুর কলোনির বাসায় হাজির হলাম সন্ধ্যার দিকে। গিয়েই শুনি, হুইলচেয়ারে বসে একাই গোসল করতে গিয়ে সুস্থ পা-টাতে চোট পেয়েছেন। বসার ঘরে বসে আছি। ভাবি হুইলচেয়ার ঠেলে তাঁকে গোসল করিয়ে নিয়ে আসছেন। দেখছি সেই প্রাণবান মানুষটাকে। যে মানুষটা বহির্মুখী, প্রাণবান, উদ্দাম আড্ডায় তুখোড়। তেজি সেই মানুষটার মাথাভর্তি সাদা চুল ছিল, গলার আওয়াজ ছিল গমগমে, আর ছিল প্রাণখোলা হাসি। পল্টনে লেখক-শিবিরের দপ্তরে আড্ডা দিতে বসলে নাকি শাহবাগ থেকেও শোনা যেত তাঁর দম ফাটানো হাসি। সেই পদাতিক প্রাণবান মানুষটা তখন যুদ্ধাহত, ক্যানসারে একটা পা কাটা। ফুসফুসেও ছড়িয়েছে মারণাত্মক কর্কট ব্যাধি। আমাকে দেখেই খেপে গেলেন। কেন আমি জাহাঙ্গীরনগর থেকে উজিয়ে তাঁকে দেখতে এসেছি। আমি বললাম, আমাদের একটা মিটিং ছিল, আসতেই হতো। ভাবলাম, আপনাকে দেখে যাই। শুনে আরও ক্ষিপ্ত হলেন। ভাবি পেছনে হুইলচেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে। ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। ইলিয়াস ভাই তখনো বলে চলেছেন, ‘তোমার কি গোঁফ হয়েছে, তুমি কি স্ট্যালিন হয়েছ? তোমাকে ছাড়াও বিপ্লব হবে।’ এতক্ষণে রাগের কারণ বুঝলাম। তিনি জানতেন, আমার তখন ফুসফুসে পানি জমেছে, ফুটা হয়েছে। বিশ্রামে থাকার নির্দেশ আছে। এ অবস্থায় কেন আমি ছোটাছুটি করছি, এই-ই তাঁর উদ্বেগ।
হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়ে এ রকমই তোপের মুখে পড়েছিলেন তাঁর অগ্রজ বন্ধু ও সতীর্থ কথাশিল্পী শওকত আলী। পা-হীন তাঁকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। ইলিয়াস নরম আবেগ সইতেন না। ধমকে উঠলেন, ‘পা গেল আমার, তুমি কাঁদছ কেন?’
পায়ের ব্যথাটা আর ছিল না। কিন্তু অন্য ব্যথা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। যে পা নেই, সেই পায়ের সাড়া পেতেন। মনে হতো হাঁটুর কাছে চুলকাচ্ছে কিংবা ঊরুর সেই ব্যথাটা বুঝি ফেরত এসেছে। আনমনে ডান হাতটা সেখানে নিয়ে যেতেন, কিন্তু হাতে কিছু ঠেকত না, কেবলই শূন্যতা। যেখানে ব্যথা, যেখানে পা-টা থাকার কথা, সেখানে তা নেই। সেটা তিনি ফেলে এসেছেন কলকাতার হাসপাতালে। সেবার কলকাতায় যাওয়ার পথে কোনো এক ভক্ত ছবি তুলতে চাইছিল তাঁর। ইলিয়াস নিষ্ঠুর; বললেন, ‘অ্যাই, ভালো করে তোলো, দেখো দুটো পা-ই যেন ওঠে। নইলে কেউ তো বিশ্বাস করবে না যে আমার দুটো পা-ই ছিল।’ শ্লেষ ও রসিকতার আড়ালে এভাবে দুঃখ ঢাকতেন। তাঁর চরিত্রদেরও রেহাই দিতেন না এই শ্লেষ ও রসিকতা থেকে। তাদের তুচ্ছতা, অসহায়ত্ব দেখাতেন ঠিকই, কিন্তু পড়ার পর পাঠকের মনে কোথায় যেন একটা মায়ার রেশ রয়ে যেত। নিরাবেগ ভাষার তলায় যেন দরদের শিরা বয়ে যেত, সেই দরদ পাঠককেও ছুঁত।
আজ তাঁর ৬৮তম জন্মদিনে মৃত্যুদিনের কথাই মনে এল। ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেদিন সমাবর্তন। তার মধ্যেই মাইকে ঘোষিত হলো, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর নেই। আমি আর কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা দৌড়ে বাসে চড়ে বসি। সেবার খুব বন্যা হয়েছিল দেশে। সাভার থেকে ঢাকার পথের দুপাশে আদিগন্ত জলরাশি। বাসের দরজায় ঝুলছি আমরা দুজন। কথা নেই কারো। কেবল অফুরান জলরাশির দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, নেই আর সেই মহিম ছায়া, মাঝে মাঝে আর কার কাছে যাব? তাঁর ‘থাকা’র মতো না-থাকাটাও এতই প্রবল। তাঁর সেই কাটা পায়ের মতো, যা নেই কিন্তু ঠিকই ব্যথা দেয়।
farukwasif@yahoo.com
খুবই সচল ছিলেন। লেখক-শিবিরের সংগঠক হিসেবে জেলায় জেলায় সফর করেছেন, কাজের ফাঁকে চলে যাচ্ছেন আরও ভেতরে, পাকা সড়ক আর বিদ্যুতের খুঁটি ছাড়িয়ে আরও ৪০-৫০ মাইল ভেতরে। কখনো কারও মোটরসাইকেলের পেছনে বসে, কখনো বা নৌকায়। পা তাঁকে টেনে নিয়ে যেত গল্পের শিকড়ের কাছে, কাহিনির বীজের কাছে।
তাঁকে দেখি প্রথম ১৯৯৩ সালে, তখনো ইন্টারমিডিয়েট পাস করিনি। খবর পেলাম আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আসছেন বগুড়ায়। এক সন্ধ্যায় হাজির হলাম তাঁর জেলখানা রোডের পৈতৃক বাড়িতে। বগুড়ায় এলে এখানেই থাকতেন। অসময়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই ভরসন্ধ্যায় ঘরে তাঁর সামনে বসে একা আমি। কথা বলছেন আর এক হাতে ঊরুতে চাপ দিচ্ছেন। বুঝলাম, এটা তাঁর ব্যথা কমানোর কৌশল। পরদিনই যাবেন গাবতলী, কাৎলাহারের বিল এলাকায়। খোয়াবনামা লেখার কাজ চলছে, আরও কিছু খোঁজখবর চাই তাঁর। পরেরবারও দেখা হলো। বাইরের ঘরে বসে শুনতে পাচ্ছিলাম তাঁর টাইপরাইটারের খটাখট। সেদিনও ব্যথার চিহ্ন দেখলাম তাঁর মুখে। কিন্তু বলছিলেন, ‘আজ মহাস্থানগড়ে যাব, ওই উপন্যাসটার কথা ভাবা শুরু করেছি।’ প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের কৈবর্ত বিদ্রোহ আর একাত্তরের সময়কার মহাস্থানগড় এলাকার পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস লিখতে যাচ্ছেন। সেখানে এক পীর পরিবারের এগারোজনকে একসঙ্গে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। পীর পরিবারের তিন মুক্তিযোদ্ধাও সেদিন শহীদ হন।
তত দিনে খোয়াবনামা প্রকাশিত হয়েছে, সাড়া পড়ে গেছে আমাদের ছোট সাহিত্যসমাজে। এ রকমই একদিন ঢাকায় আজিমপুর কলোনির বাসায় হাজির হলাম সন্ধ্যার দিকে। গিয়েই শুনি, হুইলচেয়ারে বসে একাই গোসল করতে গিয়ে সুস্থ পা-টাতে চোট পেয়েছেন। বসার ঘরে বসে আছি। ভাবি হুইলচেয়ার ঠেলে তাঁকে গোসল করিয়ে নিয়ে আসছেন। দেখছি সেই প্রাণবান মানুষটাকে। যে মানুষটা বহির্মুখী, প্রাণবান, উদ্দাম আড্ডায় তুখোড়। তেজি সেই মানুষটার মাথাভর্তি সাদা চুল ছিল, গলার আওয়াজ ছিল গমগমে, আর ছিল প্রাণখোলা হাসি। পল্টনে লেখক-শিবিরের দপ্তরে আড্ডা দিতে বসলে নাকি শাহবাগ থেকেও শোনা যেত তাঁর দম ফাটানো হাসি। সেই পদাতিক প্রাণবান মানুষটা তখন যুদ্ধাহত, ক্যানসারে একটা পা কাটা। ফুসফুসেও ছড়িয়েছে মারণাত্মক কর্কট ব্যাধি। আমাকে দেখেই খেপে গেলেন। কেন আমি জাহাঙ্গীরনগর থেকে উজিয়ে তাঁকে দেখতে এসেছি। আমি বললাম, আমাদের একটা মিটিং ছিল, আসতেই হতো। ভাবলাম, আপনাকে দেখে যাই। শুনে আরও ক্ষিপ্ত হলেন। ভাবি পেছনে হুইলচেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে। ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। ইলিয়াস ভাই তখনো বলে চলেছেন, ‘তোমার কি গোঁফ হয়েছে, তুমি কি স্ট্যালিন হয়েছ? তোমাকে ছাড়াও বিপ্লব হবে।’ এতক্ষণে রাগের কারণ বুঝলাম। তিনি জানতেন, আমার তখন ফুসফুসে পানি জমেছে, ফুটা হয়েছে। বিশ্রামে থাকার নির্দেশ আছে। এ অবস্থায় কেন আমি ছোটাছুটি করছি, এই-ই তাঁর উদ্বেগ।
হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়ে এ রকমই তোপের মুখে পড়েছিলেন তাঁর অগ্রজ বন্ধু ও সতীর্থ কথাশিল্পী শওকত আলী। পা-হীন তাঁকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। ইলিয়াস নরম আবেগ সইতেন না। ধমকে উঠলেন, ‘পা গেল আমার, তুমি কাঁদছ কেন?’
পায়ের ব্যথাটা আর ছিল না। কিন্তু অন্য ব্যথা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। যে পা নেই, সেই পায়ের সাড়া পেতেন। মনে হতো হাঁটুর কাছে চুলকাচ্ছে কিংবা ঊরুর সেই ব্যথাটা বুঝি ফেরত এসেছে। আনমনে ডান হাতটা সেখানে নিয়ে যেতেন, কিন্তু হাতে কিছু ঠেকত না, কেবলই শূন্যতা। যেখানে ব্যথা, যেখানে পা-টা থাকার কথা, সেখানে তা নেই। সেটা তিনি ফেলে এসেছেন কলকাতার হাসপাতালে। সেবার কলকাতায় যাওয়ার পথে কোনো এক ভক্ত ছবি তুলতে চাইছিল তাঁর। ইলিয়াস নিষ্ঠুর; বললেন, ‘অ্যাই, ভালো করে তোলো, দেখো দুটো পা-ই যেন ওঠে। নইলে কেউ তো বিশ্বাস করবে না যে আমার দুটো পা-ই ছিল।’ শ্লেষ ও রসিকতার আড়ালে এভাবে দুঃখ ঢাকতেন। তাঁর চরিত্রদেরও রেহাই দিতেন না এই শ্লেষ ও রসিকতা থেকে। তাদের তুচ্ছতা, অসহায়ত্ব দেখাতেন ঠিকই, কিন্তু পড়ার পর পাঠকের মনে কোথায় যেন একটা মায়ার রেশ রয়ে যেত। নিরাবেগ ভাষার তলায় যেন দরদের শিরা বয়ে যেত, সেই দরদ পাঠককেও ছুঁত।
আজ তাঁর ৬৮তম জন্মদিনে মৃত্যুদিনের কথাই মনে এল। ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেদিন সমাবর্তন। তার মধ্যেই মাইকে ঘোষিত হলো, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর নেই। আমি আর কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা দৌড়ে বাসে চড়ে বসি। সেবার খুব বন্যা হয়েছিল দেশে। সাভার থেকে ঢাকার পথের দুপাশে আদিগন্ত জলরাশি। বাসের দরজায় ঝুলছি আমরা দুজন। কথা নেই কারো। কেবল অফুরান জলরাশির দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, নেই আর সেই মহিম ছায়া, মাঝে মাঝে আর কার কাছে যাব? তাঁর ‘থাকা’র মতো না-থাকাটাও এতই প্রবল। তাঁর সেই কাটা পায়ের মতো, যা নেই কিন্তু ঠিকই ব্যথা দেয়।
farukwasif@yahoo.com
No comments