বিরান আশ্রয়ণ প্রকল্প-নতুন করে ভাবতে হবে

ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় বিধ্বস্ত উপকূলীয় এলাকার বিপুল অধিবাসী যখন নিরাশ্রয়, তখন খুলনার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে চার শতাধিক ঘর খালি পড়ে থাকার খবর বিস্ময়ের জন্ম দেয় বৈকি! রোববার সমকালের লোকালয় পাতায় এ সংক্রান্ত সংবাদের সঙ্গে ছাপা আলোকচিত্র দেখলে অবশ্য বিস্ময় ফিকে হতেও সময় লাগে না।


পাকা পাটাতনে কংক্রিটের খুঁটির তিন পাশে টিনঘেরা এসব ঘর সাময়িক বিশ্রামাগার হতে পারে, গৃহ নয়। সারি সারি এসব খুপরিকে খোদ কর্তৃপক্ষই বলছে 'ব্যারাক'। অথচ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল 'ভূমি ও গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসন'। কয়েক বর্গফুটের ওইসব খোপে আশ্রয়হীন মানুষের পুনর্বাসন কীভাবে সম্ভব আমাদের বোধগম্য নয়। বিভিন্ন বাঁধের ওপর নির্মিত অস্থায়ী ঝুপড়িতে যারা কোনোরকমে মাথা গুঁজে আছেন, তাদেরও অন্তত এসব খুপরির মতো রোদে-তাপে পুড়তে হয় না। সঙ্গত কারণেই যাদের নূ্যনতম বিকল্প রয়েছে, তারা চলে গেছেন। অবশিষ্টরাও বেশি দিন থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। 'গৃহ' যদি একদিকে খোলা থাকে, নিরাপত্তার প্রশ্ন তো আছেই। সমকালের প্রতিবেদকের কাছেও স্থানীয় কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, নিরাপত্তাহীনতা ও কর্মসংস্থানের অভাবই আশ্রয়ণ প্রকল্প বিরান হয়ে পড়ার কারণ। আমরা মনে করি, মূল সংকট আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর নকশা এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনায়। বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি এ ধরনের আবাসন সমর্থন করে না। এসব ঘরে রাতের বেলা কোনোরকমে শুয়ে থাকা এবং বৃষ্টির ফোটা থেকে মাথা বাঁচানো ছাড়া গৃহস্থালি আর কোনো প্রয়োজন মেটানো অসম্ভব। গ্রামাঞ্চলে যেমন ছোট্ট বাড়িতে ঘরের ওপর ঘর তুলে দরিদ্র যৌথ পরিবার বাস করে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশ্রয় ব্যবস্থা তেমন গুচ্ছ নকশার হতে পারত। একটি বাড়িতে কয়েকটি পরিবার নিজেদের মতো করে থাকা ছাড়াও গবাদিপশু পালন, শাকসবজি চাষের সুযোগ পেত। বর্তমান নকশায় তা অসম্ভব। কেবল মাথার ওপর টিনের আচ্ছাদন দিয়ে পুনর্বাসনের পাট চুকানোর ব্যাপারটিও গোলমেলে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়া সর্বহারা মানুষগুলো জীবন-সংগ্রামে টিকে থাকবে কীভাবে? খুলনার আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো যে সংকটের মুখে পড়েছে, তার আলোকে গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে নীতিনির্ধারকরা নতুন করে ভাববেন বলে প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.