দেশীয় উপাদানভিত্তিক আরও কারখানা হোক-ধানের কুঁড়ার ভোজ্যতেল

আমদানিকারকেরা যখন দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের বলতে গেলে প্রায় জিম্মি করে রাখছে, তখন শেরপুরের রাইস ব্রান অয়েল বা ধানের কুঁড়ার ভোজ্যতেল মিলটি তাদের মনে কিছুটা হলেও আশা জাগাতে পারে। এ কারখানায় ধানের কুঁড়া থেকে যে ভোজ্যতেল উৎপাদিত হচ্ছে, তা উৎকৃষ্টমানের এবং কোলেস্টেরলমুক্ত।


বর্তমানে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে যে সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়, তার মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে, তেমনি ওই তেলে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গতকাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেরপুর সদরে প্রতিষ্ঠিত স্পন্দন নামের এই কারখানায় প্রতিদিন ২৫ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল উৎপাদিত হচ্ছে, যা দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে।
এ কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে যে ধানের কুঁড়া ব্যবহার করা হয়, তা স্বল্প খরচে সংগ্রহ করা যায়। বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ ধান উৎপাদনকারী দেশ এবং সেই ধানের বেশির ভাগ কুঁড়া গোখাদ্য কিংবা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শেরপুরের এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের অন্যান্য স্থানেও ধানের কুঁড়ার ভোজ্যতেল কারখানা স্থাপন হওয়া প্রয়োজন।
যেকোনো নতুন পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে। সে ক্ষেত্রে পণ্যের গুণমানের বিষয়টি ভোক্তাদের জানাতে হবে। সে সঙ্গে যাঁরা দেশীয় উপাদানভিত্তিক কারখানা প্রতিষ্ঠা করবেন, তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেওয়াও সরকারের দায়িত্ব। মানুষ যখন দেখবে, দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান ভালো, তখন তারা বেশি দাম দিয়ে আমদানি করা ভোজ্যতেল কিনতে নিরুৎসাহিত হবে।
বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে এ ধরনের আরও অনেক উপাদান ছড়িয়ে আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। কিন্তু সে জন্য যে গবেষণা, বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন, তার অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সরকার সহায়তার হাত বাড়াতে পারে।
আমরা শেরপুরে স্পন্দন কারখানার উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে দেশের অন্য উদ্যোক্তাদেরও আহ্বান জানাব, তাঁরা যেন দেশীয় উপাদানভিত্তিক আরও অধিক কারখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন।

No comments

Powered by Blogger.