বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবে-খাদ্যপণ্য ও বাজার কারসাজি

বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানো, এরপর বাজারে যথারীতি সরবরাহ—এসব বাজার কারসাজিরই প্রমাণ। বাজার যে ঠিকভাবে চলছে না, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ থাকার পরও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াতে নানা কারসাজি করা হচ্ছে।


তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি, বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি হয়। তাঁর বক্তব্য সঠিক হলে বাজার কারসাজির অভিযোগ হালকা হয়ে যায়।
এটা ঠিক যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সম্পর্ক রয়েছে; বিশেষ করে সয়াবিন তেলের মতো আমদানিনির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রে। কিন্তু এক দফায় লিটারপ্রতি ১২ টাকা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে যৌক্তিক বলার সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যারিফ কমিশন আন্তর্জাতিক বাজারদরসহ নানা কিছু বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্তে এসেছে যে মিলগেটে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০০ টাকার বেশি হতে পারে না। এর সঙ্গে খোলাবাজারের জন্য আরও চার টাকা এবং বোতলের দাম যোগ করলেও কোনোভাবেই প্রতি লিটার তেলের দাম ১১৪ টাকা হতে পারে না। এটা অনেকটাই পরিষ্কার যে দাম বাড়ানোর জন্য কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বিক্রি না করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সহজ পথটিই এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে। ভোজ্যতেলের এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে খুব পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
চালের যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও দাম কেন বাড়ছে, সেটাও বড় প্রশ্ন। চালের দাম সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আশ্বাসবাণী না শুনিয়ে এখনই সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চাল মজুদ রেখে কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়ানোর চক্রান্ত হচ্ছে। বাজার অস্থির করার জন্য যদি কুচক্রী মহল সক্রিয় থাকে, যদি চক্রান্ত চলে, সেদিকে নজর দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী নিজেই যখন বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, তখন সরকারের উচিত এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম—বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্যে সত্যতা থাকতে পারে। কিন্তু যখন বাণিজ্যমন্ত্রীর মুখ দিয়ে যদি এ ধরনের কথা বের হয়, তখন বাজার কারসাজি ও চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবেন এবং এর সুযোগ নেবেন, এটাই স্বাভাবিক।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকে। বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম রাতারাতি কমে যাবে—এমন আশা করা কঠিন। কিন্তু বাজার কারসাজি করে বা চক্রান্ত করে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো মেনে নেওয়া যায় না। কৃত্রিমভাবে কোনো গোষ্ঠী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ালে বাজার নিয়ন্ত্রণের সহজ পদ্ধতি হচ্ছে সরবরাহ বাড়ানো। প্রয়োজনে সরকারকে নিজস্ব ব্যবস্থায় খাদ্যপণ্য আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়, কিন্তু প্রয়োজনে বাজারে হস্তক্ষেপের সক্ষমতা সরকারের থাকতে হবে। দেশের বাজার, মজুদ পরিস্থিতি—এসব দিকে যেমন সরকারের নিবিড় নজরদারি থাকা জরুরি, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.