হরতালে সহিংসতা-মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে?
একের পর এক ঘটে চলেছে সহিংসতা। যারা নিরপরাধ_ রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, তাদের মাশুল দিতে হচ্ছে। এমনকি আকস্মিক মৃত্যুর পরোয়ানাও মাথা পেতে নিতে হচ্ছে। যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত দগ্ধ করার ঘটনা সম্প্রতি আমরা দেখেছি। এবার স্বার্থান্ধ মানুষের নির্মমতার শিকার হতে হলো বাসচালক বদর আলীকে।
এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের কী জবাব দেবেন রাজনীতিকরা? বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দই-বা কী বলবেন? এ মৃত্যুর দায়ভারই-বা কে নেবে? আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনিও উদ্বেগে ছিলেন। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন উদ্বেগের কথা। স্ত্রী তাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। রাতে তাকে পাড়ি দিতে হতো দীর্ঘ পথ। যাত্রীদের নিয়ে খুলনা রওনা হওয়ার কথা ছিল বিকেলে। কিন্তু বিকেল হওয়ার আগেই নেমে এলো মৃত্যুর খৰ। রাত্রিকালীন যাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে বাসেই ঘুমিয়েছিলেন তিনি। আর এই ঘুম তাকে নিয়ে গেল চিরঘুমের দেশে। দুষ্কৃতকারীরা আগুন দিলে বাসেই অগি্নদগ্ধ হয়ে মারা যান বাসচালক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির মৃত্যুতে চরম অসহায়তার মধ্যে পড়ল তার পরিবার। কত ছোট ছোট স্বপ্ন পুড়ে ছারখার হয়ে গেল রাজনৈতিক আগুনে। মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনা সবাইকে ব্যথিত ও মর্মাহত করে তুলেছে। সবার মনে প্রশ্ন_ রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতের মাশুল কেন গুনতে হবে বদর আলীদের? কেন সাধারণের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা পড়বে? কেন নাগরিকদের অবাধ চলাচলে বাধা দেওয়া হবে? কেন ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে নেমে আসবে প্রতিরোধ? দেশের আপামর মানুষ, দেশের গণমাধ্যম বহুবার বহুভাবে হরতালের মতো সংঘাতময় কর্মসূচি পরিহারের তাগিদ দিয়ে আসছে। কিন্তু হরতাল যেন নিয়তি-নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। ঘুরেফিরে হরতাল-সহিংসতা, রক্তপাতের আবর্তের মধ্যেই ফিরে আসছে বাংলাদেশ। একের পর এক বদর আলীদের প্রাণ দিতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে হরতালে, বিশেষ করে হরতালের আগের দিনের সহিংসতায় অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। অভিযোগ_ নাগরিকদের মনে ভীতি সঞ্চার করে কর্মসূচি সফল করার নানা নাশকতার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সেদিক থেকে এসব সহিংসতার দায় হরতালকারীদের ওপরই বর্তায়। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলেও বিরোধী দল সজাগ হচ্ছে না। সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে না। এটি অব্যাহত থাকা উচিত নয়। এর মাধ্যমে কর্মসূচির পক্ষে জনসমর্থন পাওয়া দূরের কথা, মানুষের নিন্দাই জুটছে প্রকারান্তরে। নাগরিকরা এমন পরিস্থিতি দেখতে চান না। বিশিষ্ট রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক কেউ গুম, নিখোঁজ হলে স্বাভাবিকভাবে সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। কেউ-ই চান না এমন ঘটনা অব্যাহত থাকুক। সরকার এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক_ এটা সবার দাবি। কিন্তু বদর আলীদের মৃত্যুর বিনিময়ে কি তা ঘটবে? জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতার মধ্য দিয়ে কি দেশ অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ কোনো পরিস্থিতি ফিরে পাবে? দেশের রাজনীতি ক্রমশ সংঘাতময় হয়ে উঠছে, মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক স্বার্থেই পরস্পর মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে। আমরা মনে করি, এখান থেকে রাজনীতিকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনা জরুরি। সহনশীলতা ও সৌহার্দ্যের চর্চা দরকার। এ জন্য সরকারের যেমন দমন-পীড়নের পথ পরিহার করে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা দরকার, তেমনি বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও, হরতালের কর্মসূচি ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পথে এগোনো উচিত।
No comments