পাঠকের মন্তব্য-নির্বাচনে ভরাডুবির ভয় কোন কালে কোন সরকারের ছিল?

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এই মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


প্রধানমন্ত্রী কি ঠিক বলেছেন?
বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়, বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর নির্দেশে সে লুকিয়ে থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য ঠিক কি না, কালের পুরাণ কলামে সে প্রশ্ন তুলেছেন সোহরাব হাসান। এ বিষয়ে পাঠক কাওসার আলী লিখেছেন: বাংলাদেশের রাজনীতি শুরু হয় সিলেট থেকে...। যদি সরকার ইলিয়াস আলীর কোনো সন্ধান দিতে না পারে, তাহলে এই সিলেট থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে এবং সরকারের পতন অনিবার্য।
মাহফুজা বুলবুল: নির্বাচনে ভরাডুবির ভয় কোন কালে কোন সরকারের ছিল? নাকি আছে? তাহলে ক্ষমতায় এসে অগণতান্ত্রিক কাজ কি করতে পারে? ক্ষমতার স্বাদ-গন্ধে বিভোর, বিবশ হয়ে থাকে? ক্ষমতা স্থায়ীকরণের শেষ চেষ্টা ফলবতী না হলে সমস্যা কী? পাঁচ বছর পর প্রতিশ্রুতির ডালি দেখিয়ে বোকা জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ওরাই আবার রিফ্রেশ হয়ে আসবে যে!
পঙ্কজ নাথ: এপিএস ফারুকের চালক আজমের ব্যাপারে কে প্রতিবাদ, আন্দোলন করবে? নিয়োগ-বাণিজ্যে যে ফ্রি-স্টাইল ঘুষ নেওয়া হচ্ছে, চালক আজমের ঘটনায় তা ফাঁস হয়ে গেছে। সুতরাং, এ ক্ষেত্রে মানুষের সন্দেহ যে চালক আজমকে হয়তো গুম করা হয়েছে। কারণ, আজমকে অদৃশ্য করে দিতে পারলে বিশাল এক দুর্নীতি ও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কুকর্ম ফাঁস হয়ে যাবে। আজমকে বাঁচাতে কি কেউ প্রতিবাদ বা উদ্যোগ নেবে না?

বিএনপির নেতাদের একা চলতে মানা
বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ায় ওই দলের নেতাদের একলা চলতে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাব্বানি চৌধুরী: দেশের মূল সমস্যা আড়াল না করে জনগণের কাছে সবকিছু প্রকাশ করে দিন। জনগণকে সব সময় পাশে পাবেন। পরিষ্কার করুন, চালক আজম খান কোথায়! টাকার বস্তা কোথায়! এর উৎস কোথায়! টাকার বস্তা পৌঁছানোর সঠিক কেন্দ্রস্থল! কারা সাগর-রুনির ঘাতক! এমন হাজারো বিষয় প্রকাশ করে দিন। জনগণকে সব সময় পাশে পাবেন।
জালাল আহমেদ: ফখরুল সাহেব ঠিকই বলেছেন, বিএনপি গুমের রাজনীতি করেনি। বোমা মেরে কিবরিয়া সাহেবকে আর ব্রাশফায়ার করে আহসানউল্লাহ মাস্টারকে মেরেফেরেছিলেন। শেখ হাসিনাকেও বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফখরুল সাহেব বলবেন, কোনটা উত্তম?
শেখ মনির: ইলিয়াস আলী নিখোঁজ, গুম, নাকি অন্য কিছু, তা পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। কিন্তু একজন ব্যক্তির জন্য ১৫ কোটি জনগণকে জিম্মি করে হরতাল ও রাজনীতি, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা আমরাও চাই, কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় অতীত অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়।

বাঙালির চুরি হয়ে যাওয়া কৃতিত্ব
অপরাধী শনাক্তকরণে আঙুলের ছাপের ব্যবহারের বিষয়টি আবিষ্কার করেছিলেন কাজী আজিজুল হক। কিন্তু সেই কৃতিত্ব ছিনিয়ে নেন তাঁর ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে শামীম খান লিখেছেন: ব্রিটিশদের মেধাসত্ত্ব চুরির এটা একটি উদাহরণমাত্র। এ রকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে। যেমন রেডিও তরঙ্গ আবিষ্কারের কৃতিত্ব ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কনিকে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটার আবিষ্কারক ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জগদীশ চন্দ্র বসু।
হাবিবুল ইসলাম মোল্লা: লেখাটা পড়ে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। আমি নিজেও ফিঙ্গারপ্রিন্টের ওপর গবেষণা করছি। এ প্রবন্ধটা আমাকে কাজের প্রতি আরও উৎসাহ জোগাবে।
এম কে বড়ুয়া: দুই অজানা বাঙালিকে নিয়ে অত্যন্ত চমৎকার নিবন্ধের জন্য আখতার হুসেনকে ধন্যবাদ। এটা কেবল আজিজুল হক বা হেমচন্দ্র বসু নয়, ব্রিটিশ ভারতে অনেক বাঙালি অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকেরা তা চুরি করে কৃতিত্ব নিয়েছেন। তবে একই নিবন্ধের একটি বিষয় আমাকে অবাক করেছে। আঙুলের ছাপ পড়ার কৌশল আবিষ্কারের কৃতিত্ব যে সমভাবে হেমচন্দ্র বসুরও, তা নিবন্ধ শেষ হওয়ার আগে বোঝা যায়নি। নিবন্ধের শুরুতেই এটি কেন উল্লেখ করা হয়নি, তা পরিষ্কার নয়।

ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরে নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে বিতর্ক অনেক দিনের। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় আপাতত সে বিতর্কের অবসান হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় মো. শরীফুল ইসলাম লিখেছেন: প্রতিদিন দেশটির কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে। ঘটছে প্রাণহানি। এ অবস্থায় বিদেশি দলকে খেলতে আমন্ত্রণ জানানোর অবস্থা তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ এখানে যেতে পারে না।
এ এইচ এম শরিফুল আরিফ: বর্তমানে অনিরাপদ রাষ্ট্র পাকিস্তান, তাই সেখানে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, প্রতিদিন দেশটির কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। আমরা সাকিব, তামিমদের হারাতে চাই না।

আপত্তি সত্ত্বেও সোহেল তাজ বহাল
প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তা গৃহীত না হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে মন্ত্রিপরিষদের সচিবকে চিঠি লেখেন সোহেল তাজ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এখনো তাঁকে বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন সোহেল তাজ। এ-সম্পর্কিত সংবাদ প্রথম আলোতে প্রকাশের পর অনেক পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আরিফুর রহমান লিখেছেন: প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তা-ই কেন হবে? এ টাকা তো তাঁর না যে, তিনি যাঁকে খুশি দিয়ে বেড়াবেন। এ টাকা জনগণের। একজন পদত্যাগ করার পরও তাঁকে টাকা দিয়ে মন্ত্রী বানিয়ে রেখে নিজেদের দোষ ঢাকবেন আর জনগণকে তাঁদের কাজের সুফল দেখিয়ে বেড়াবেন, এমনটা তো হতে পারে না।
জাহিদ হাসান: মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগ ও অব্যাহতির এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর, ভালো কথা। তাই বলে কি একজন মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করার অধিকার নেই? সোহেল তাজ ৩৩ মাস আগে পদত্যাগ করলেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশনা না দেওয়ার অধিকার রাখেন বলে বিশ্বাস করি না। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় আইনের ঊর্ধ্বে নন। যদি তা-ই না হয়, তবে দপ্তরবিহীন—এককথায় বিনা পরিশ্রমে একজন ব্যক্তিকে ৩৩ মাস ধরে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় পারিতোষিকসহ বেতন-ভাতাদি বাবদ লাখ লাখ টাকা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন? এ অর্থ প্রধানমন্ত্রী নিজের কাছ থেকে দেননি। জনগণের টাকা। এটা অর্থের অপচয় নয়? দেশে লাখ লাখ পরিবার দুবেলা ভাতটুকুও খেতে পায় না। জবাবদিহি করতে হয় না, তাই যখন যে সরকার আসে, তার ইচ্ছামতো সবকিছু চলে। গণতন্ত্রের লেবাসে থাকা বর্তমান সরকারগুলোর সঙ্গে হবুচন্দ্রের পার্থক্য কি পাওয়া যায়?
কাপাসিয়া থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিখেছেন: সোহেল তাজ যে সৎ ব্যক্তি, তা আমরা সব কাপাসিয়াবাসী জানি। কিন্তু কী কারণে তিনি পদত্যাগ করলেন, তা সবার কাছে না বললেও অন্তত কাপাসিয়াবাসীর কাছে খোলাসা করে বলা উচিত ছিল। এখন কাপাসিয়াবাসী উল্টো অভিমানেই হোক আর রাগেই হোক, তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তিনি অধিকাংশ সময় থাকেন দেশের বাইরে। এদিকে তাঁর অধস্তন কিছু কর্মী পুরো কাপাসিয়াকে লুটেপুটে খাচ্ছে। দেশের যে এত উন্নতি হচ্ছে, আমরা কীভাবে বুঝব? কারণ. দেশের উন্নতি বুঝতে হলে আমাদের গ্রামের দিকে আগে তাকাতে হবে। আমাদের গ্রামে কোনো উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি। কারণ, আমরা ঘাগটিয়া ইউনিয়নবাসী। আর এখান থেকেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ নির্বাচন করেন। সোহেল তাজের কাছে অনুরোধ রইল, দয়া করে একবার এসে ঘাগটিয়া ইউনিয়নবাসীর দুঃখ-দুর্দশার চিত্র দেখে যাবেন। তারপর আপনার সততা দেখাতে চাইলে আমরাও দুই চোখ ভরে দেখব।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.