কলমে লেখা কলাম by নাসিফ চৌধুরী
রস+আলোর জন্য বিশেষ এই কলামগুলো লিখেছেন বিশিষ্ট কলমিস্ট নাসিফ চৌধুরী ডিমের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে কিছু কথা
একটা সময় পর্যন্ত মাছে-ভাতে বাঙালি হিসেবে আমাদের পরিচিতি থাকলেও কালের বিবর্তনে আমরা ডিমে-ভাতে বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছি। তাই ডিম ও ডিমের দাম আমাদের সমাজে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
একটা সময় পর্যন্ত মাছে-ভাতে বাঙালি হিসেবে আমাদের পরিচিতি থাকলেও কালের বিবর্তনে আমরা ডিমে-ভাতে বাঙালিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছি। তাই ডিম ও ডিমের দাম আমাদের সমাজে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করলাম যে সামপ্রতিক সময়ে ডিমের মূল্যবৃদ্ধিতে অনেকেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন। তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, ডিম পাড়তে কি মুরগির কষ্ট হয় না? ডিম পাড়ার তীব্র বেদনা শুধু মুরগিই জানে। মানুষ ডিমটাকেই দেখে, মুরগির কষ্ট দেখে না। এ ক্ষেত্রে আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে, কম দামে ডিম বিক্রি করা মানে মুরগির এই আত্মত্যাগকে খাটো করে দেখা। মুরগির কষ্টকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে ডিমের দাম আরও বাড়ানোটাকে আমি যুক্তিসংগত বলে মনে করি।
অন্যদিকে দেখুন, কষ্ট করে ডিম পাড়ার পরও মুরগি তার প্রাপ্য অধিকারটুকু বুঝে পায় না। মুরগির মালিক ডিম বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেয় ঠিকই কিন্তু যে মুরগি ডিম দিল, তার জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয় না এক ফোঁটাও। এই পুঁজিবাদী মনোভাবের কাছে মুরগিরা আজ অসহায়।
তাই ‘মুরগি কল্যাণ তহবিল’ গঠন করে ডিমের দামের একটা নির্দিষ্ট অংশ মুরগির সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হোক। এর ফলে মুরগিসমাজ বেশি বেশি ডিম দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এসব বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য ডিম ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ রইল।
ভাতের চালে রঙিন পাথর মেশানো হোক
ভাত আমাদের দেশের প্রধান খাবার। পেট ভরতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন অথবা ক্ষেত্রবিশেষে চার থেকে পাঁচবার আমাদের ভাত খেতে হয়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরে ভাত চিবোনোর সময় প্রায়ই ভাতের বদলে শক্ত পাথরের ওপর কামড় পড়ছে। সেই কামড়ে দাঁত ভেঙে যায় কিন্তু পাথর ভাঙে না। ধানখেতে ধানের ভেতর তো আর পাথর থাকে না, চালই থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের ওজন বাড়ানোর জন্য চালের সঙ্গে পাথর মিশিয়ে বিক্রি করেন। খালি চোখে এই পাথর শনাক্ত করা তো দূরের কথা, অত্যাধুনিক মাইক্রোস্কোপ দিয়েও অনেক সময় পাথর খুঁজে পাওয়া যায় না। এ পরিস্থিতিতে তীব্র আতঙ্ক নিয়ে প্রতিদিন আমাদের ভাত খেতে হয়। পাথরের ভয়ে আস্তে আস্তে চিবোতে গিয়ে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। আমরা এই দুর্দশা থেকে মুক্তি চাই। এই অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা যদি বুদ্ধি করে চালের রঙের সঙ্গে রং না মিলিয়ে মহানুভবতা দেখিয়ে চালে পাথর মেশানোর সময় কালো অথবা রঙিন পাথর ব্যবহার করতেন, তাহলে ভাত থেকে সহজেই পাথর আলাদা করে চিবোনোর সময় দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা যেত।
প্রয়োজনে সাদা পাথর রং করার ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হোক।
ঢাকা শহরে নৌপথের গুরুত্ব
প্রায় দেড় কোটি জনসংখ্যার মহানগর ঢাকায় চলাচলের প্রধান উপায় হচ্ছে সড়কপথ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সড়কপথের দিকে গুরুত্ব দিলেও নৌপথের ব্যাপারে সরকার বরাবরই উদাসীন।
নৌপথের রয়েছে অনেক ধরনের সুবিধা। সড়কপথের মতো বারবার এই পথ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। উল্টো পানিতে মাছের চাষ করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্জন করতে পারবে। আবার, বিরোধী দল যদি রাগ করে নৌকায় আগুন ধরিয়ে দেয়, তাহলে খুব দ্রুত সেই আগুন নেভানো সম্ভব হবে। তাই এত সব সুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকার যদি মিরপুর থেকে মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত বড় দুটি খাল খনন করত, তাহলে অনেক নৌপ্রেমী অত্যন্ত খুশি হতেন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
No comments