বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকাই প্রত্যাশিত-বিএনপির সংসদে যাওয়া না-যাওয়া

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সংসদে যাওয়া না-যাওয়ার সিদ্ধান্তটি পেন্ডুলামের মতো ঝুলছে। বৃহস্পতিবার বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেছেন, পরিবেশ সৃষ্টি হলে তাঁরা সংসদে যাবেন। এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারও একই কথা বলেছেন।


পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএনপির সাংসদেরা স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন, তাঁর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দেখাতে চেয়েছেন, সংসদের প্রতি তাঁদের যথেষ্ট আগ্রহ শেষ হয়ে যায়নি। দলের সদস্যদের মর্যাদা রক্ষায়ও তাঁরা উদ্গ্রীব। কিন্তু অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেই যত ওজর-আপত্তি। চলতি অধিবেশন শুরুর আগেই বিএনপির অধিকাংশ সাংসদ টানা ৪৮ কর্মদিবস সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গিয়েছেন মাত্র পাঁচ দিন। কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটি কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, অনৈতিক।
বিএনপির নেতারা সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে যে আভাস-ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তা কি শুধু সদস্যপদ রক্ষার জন্য? আগামী তিন বছর নিজেদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য? গণতন্ত্রে ব্যক্তি ও দলের চেয়ে বৃহত্তর জনগণের স্বার্থই অগ্রাধিকার পাওয়া কথা। কিন্তু আমাদের রাজনীতিকেরা দলীয় স্বার্থকেই বড় করে দেখেন। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে। তাই বলে লাগাতার সংসদ বর্জনের মতো দেশ ও গণতন্ত্রঘাতী নীতি চলতে পারে না। সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্বলতাগুলো দেশবাসীর কাছে তুলে ধরাই বিরোধী দলের দায়িত্ব। কিন্তু তারা যদি সংসদেই না যায়, তাহলে জনগণ ভোট দিয়ে সেখানে পাঠিয়েছেন কী জন্য?
সংসদে কথা বলার পরিবেশ নেই—অভিযোগটি বেশ পুরোনো। সব আমলে বিরোধী দল সংসদ বর্জনের কারণ হিসেবে এই অজুহাত খাঁড়া করে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও ৯০ দিবসের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত সংসদে অনুপস্থিত ছিল। গত নির্বাচনের আগে দুই দলই সংসদকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন বিরোধী দল সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে পারে না। আবার সরকারি দলের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে বিরোধী দল সংসদ বর্জনের যুক্তি দাঁড় করাতে পারে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচন এবং তার পরের উপনির্বাচনে বিএনপি ভালো ফল করেছে। সংসদে দলটির একটি আসনও বেড়েছে। নবনির্বাচিত প্রার্থীর এলাকার ভোটারেরা নিশ্চয়ই চাইবেন, তিনি সংসদে বসবেন, তাঁদের পক্ষে কথা বলবেন। স্থানীয় ও উপনির্বাচনের সাফল্যে উজ্জীবিত বিএনপির উচিত বর্জনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা এবং সংসদে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখা।
সদস্যপদ বাঁচানো কিংবা রাজনৈতিক কৌশল—যে কারণেই হোক, বিএনপিকে চলতি অধিবেশনে যেতেই হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সেই যাওয়াটি নিয়ম রক্ষার হবে না। তারা সংসদে গিয়ে যেকোনো বাহানা তুলে বেরিয়ে আসবে না। চলতি অধিবেশনের পুরোটা সময় যাতে বিরোধী দল সংসদে থেকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ পায়, সেই নিশ্চয়তা সরকারি দলকেই দিতে হবে। দেশের সংকটময় মুহূর্ত কাটিয়ে উঠতে অন্তত সংসদে উভয় দল একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.