প্রভাব খাটিয়ে লাইসেন্স নিয়ে বিক্রির বিজ্ঞাপন! by অনিকা ফারজানা
বিজ্ঞাপনটি ছাপা হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে। বিজ্ঞাপনটি এ রকম: ‘সুখবর! সুখবর! সুখবর! বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) কর্তৃক অনুমোদিত বহুল আকাঙ্ক্ষিত আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স ও আইআইজি লাইসেন্স এখন আপনার হাতের নাগালে।
চাইলেই যে কেউ এখন যেকোনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানির মালিক হতে পারেন। আগ্রহী ক্রেতাদের আর্থিক ও কারিগরি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। আগ্রহী ক্রেতারা বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসিতে লাইসেন্সগুলো যাচাই করে নিতে পারবেন। আপাতত বিক্রয়যোগ্য কোম্পানির সংখ্যা আইজিডব্লিউপ্রাপ্ত আটটি, আইসিএক্সপ্রাপ্ত ছয়টি এবং আইআইজিপ্রাপ্ত ১৬টি। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আগ্রহী ক্রেতারা অতিসত্বর যোগাযোগ করুন।’
বিজ্ঞাপনটি দিয়েছেন জনৈক মেহেদী হাসান। বিজ্ঞাপনে একটি মুঠোফোন নম্বর এবং একটি ই-মেইল ঠিকানাও দেওয়া আছে। বিজ্ঞাপনটি ছাপা হয় ১২ ফেব্রুয়ারি, রোববার। এর ঠিক তিন দিন আগে, গত বৃহস্পতিবার বৈদেশিক কল আদান-প্রদানে মোট ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে তিন ধরনের গেটওয়ে লাইসেন্সের সুপারিশ করেছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
মূলত রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ সময় লাইসেন্স পাচ্ছেন না। আর যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরাও এভাবেই অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স বিক্রি করে দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, গেটওয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নামে-বেনামে যুক্ত রয়েছেন বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী নেতারা।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব সুনীল কান্তি বোস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি পেপার কাটিং আমি মঙ্গলবার সকালে পেয়েছি। পরে বিটিআরসিকে পুরো বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। ধারণা করছি, সরকারের বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী কোনো মহল এ বিজ্ঞাপনের সঙ্গে জড়িত।’
অতিরিক্ত লাইসেন্স অনুমোদনের কারণে এ ধরনের বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনো জটিলতা তৈরি হতে পারে—এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘এ রকম সমস্যা হবে না। কারণ, বিটিআরসির মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে আমরা কারিগরি দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এর পরও যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলোর কারণে সংখ্যা এমনিতেই অনেক কমে যাবে।’ সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের দেওয়া শর্তগুলো হচ্ছে: যতগুলো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করুক না কেন, একটি প্রতিষ্ঠান কেবল একটি গেটওয়ে লাইসেন্সের জন্য বিবেচ্য হবে। এর ছাড়া লাইসেন্সের জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের অংশীদার অন্য কোনো গেটওয়ে লাইসেন্সের অংশীদার হতে পারবেন না।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় ৩৯টি ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ২৫টি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) এবং ২১টি আন্তসংযোগ গেটওয়ে (আইসিএক্স) লাইসেন্স দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে আইআইজির জন্য ৫৯টি, আইসিএক্সের ৫১ এবং আইজিডব্লিউর জন্য ৪৩টি আবেদন জমা পড়েছিল।
বর্তমানে দেশে দুটি আইআইজি, চারটি আইজিডব্লিউ এবং তিনটি আইসিএক্স বিদ্যমান। ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স টেলিকমিউনিকেশন্স সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতিমালার আওতায় ২০০৮ সালে এই তিন ধরনের লাইসেন্স প্রথমবারের মতো দেওয়া হয়েছিল।
বিটিআরসির মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন: এর আগে বিটিআরসির মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি। তখন তারা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ নেওয়ার সুপারিশ করলেও বিটিআরসি তা প্রত্যাখ্যান করে উল্টো চিঠি দেয়। সংস্থাটি বলে, এ বিষয়ে বিটিআরসির বিশেষজ্ঞরাই যথেষ্ট।
বিপরীত অবস্থান: বর্তমানে লাইসেন্সের সংখ্যা নিয়ে পরস্পর বিপরীত মনোভাব পোষণ করছে বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। কারণ এতগুলো লাইসেন্স ইস্যু করা হলে নেটওয়ার্কের জটিল অবস্থা ও বাজারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। বিটিআরসি থেকে ভয়েস গেটওয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত ট্রাফিক ও ডাটা গেটওয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যান্ডউইডথের হিসাব মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
লাইসেন্স দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকলেও এ বিষয়ে বিটিআরসিকে মূল্যায়ন করে তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে টেলিযোগাযোগসচিব সুনীল কান্তি বোস জানান। বিটিআরসির আপত্তির বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের নাম চূড়ান্ত করার পর এর সংখ্যা কমে আসবে, তাই এ (বাজার ভারসাম্যহীনতা) ধরনের আশঙ্কা নেই।
অন্যদিকে এতগুলো লাইসেন্স অনুমোদন প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৈদেশিক কলের অবৈধ আদান-প্রদান ঠেকাতেই এতগুলো লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়েছে। সবাই বৈধ উপায়ে কাজ শুরু করলে বৈদেশিক কলের বাজার ধরতে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ফলে নিজেদের স্বার্থে প্রত্যেকেই অবৈধ কল যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’
বিজ্ঞাপনটি দিয়েছেন জনৈক মেহেদী হাসান। বিজ্ঞাপনে একটি মুঠোফোন নম্বর এবং একটি ই-মেইল ঠিকানাও দেওয়া আছে। বিজ্ঞাপনটি ছাপা হয় ১২ ফেব্রুয়ারি, রোববার। এর ঠিক তিন দিন আগে, গত বৃহস্পতিবার বৈদেশিক কল আদান-প্রদানে মোট ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে তিন ধরনের গেটওয়ে লাইসেন্সের সুপারিশ করেছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
মূলত রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ সময় লাইসেন্স পাচ্ছেন না। আর যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরাও এভাবেই অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স বিক্রি করে দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, গেটওয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নামে-বেনামে যুক্ত রয়েছেন বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী নেতারা।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব সুনীল কান্তি বোস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি পেপার কাটিং আমি মঙ্গলবার সকালে পেয়েছি। পরে বিটিআরসিকে পুরো বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। ধারণা করছি, সরকারের বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী কোনো মহল এ বিজ্ঞাপনের সঙ্গে জড়িত।’
অতিরিক্ত লাইসেন্স অনুমোদনের কারণে এ ধরনের বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনো জটিলতা তৈরি হতে পারে—এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘এ রকম সমস্যা হবে না। কারণ, বিটিআরসির মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে আমরা কারিগরি দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এর পরও যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলোর কারণে সংখ্যা এমনিতেই অনেক কমে যাবে।’ সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের দেওয়া শর্তগুলো হচ্ছে: যতগুলো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করুক না কেন, একটি প্রতিষ্ঠান কেবল একটি গেটওয়ে লাইসেন্সের জন্য বিবেচ্য হবে। এর ছাড়া লাইসেন্সের জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের অংশীদার অন্য কোনো গেটওয়ে লাইসেন্সের অংশীদার হতে পারবেন না।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় ৩৯টি ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ২৫টি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) এবং ২১টি আন্তসংযোগ গেটওয়ে (আইসিএক্স) লাইসেন্স দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে আইআইজির জন্য ৫৯টি, আইসিএক্সের ৫১ এবং আইজিডব্লিউর জন্য ৪৩টি আবেদন জমা পড়েছিল।
বর্তমানে দেশে দুটি আইআইজি, চারটি আইজিডব্লিউ এবং তিনটি আইসিএক্স বিদ্যমান। ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স টেলিকমিউনিকেশন্স সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতিমালার আওতায় ২০০৮ সালে এই তিন ধরনের লাইসেন্স প্রথমবারের মতো দেওয়া হয়েছিল।
বিটিআরসির মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন: এর আগে বিটিআরসির মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি। তখন তারা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ নেওয়ার সুপারিশ করলেও বিটিআরসি তা প্রত্যাখ্যান করে উল্টো চিঠি দেয়। সংস্থাটি বলে, এ বিষয়ে বিটিআরসির বিশেষজ্ঞরাই যথেষ্ট।
বিপরীত অবস্থান: বর্তমানে লাইসেন্সের সংখ্যা নিয়ে পরস্পর বিপরীত মনোভাব পোষণ করছে বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। কারণ এতগুলো লাইসেন্স ইস্যু করা হলে নেটওয়ার্কের জটিল অবস্থা ও বাজারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। বিটিআরসি থেকে ভয়েস গেটওয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত ট্রাফিক ও ডাটা গেটওয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যান্ডউইডথের হিসাব মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
লাইসেন্স দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকলেও এ বিষয়ে বিটিআরসিকে মূল্যায়ন করে তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে টেলিযোগাযোগসচিব সুনীল কান্তি বোস জানান। বিটিআরসির আপত্তির বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের নাম চূড়ান্ত করার পর এর সংখ্যা কমে আসবে, তাই এ (বাজার ভারসাম্যহীনতা) ধরনের আশঙ্কা নেই।
অন্যদিকে এতগুলো লাইসেন্স অনুমোদন প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৈদেশিক কলের অবৈধ আদান-প্রদান ঠেকাতেই এতগুলো লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়েছে। সবাই বৈধ উপায়ে কাজ শুরু করলে বৈদেশিক কলের বাজার ধরতে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ফলে নিজেদের স্বার্থে প্রত্যেকেই অবৈধ কল যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’
No comments