আবাসন শিল্প খাতে স্থবিরতা-বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করুন
দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল ও মহানগর-নগরের মানুষের মাথা গোঁজার ঠিকানা করে দেওয়ার ব্যাপারে যে আবাসন খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেই আবাসন শিল্পে চলছে স্থবিরতা। এর কারণ অনেক। এর মধ্যে অন্যতম হলো, গত কয়েক বছরে সরকারের গৃহীত নানা রকম নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতকে ফেলেছে চরম সংকটে।
এর পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রীর অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিও এ ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি এ-সম্পর্কিত কালের কণ্ঠে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনে এ খাতের বিদ্যমান স্থবিরতার সার্বিক চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে এমন উদ্বেগজনক চিত্র জিইয়ে থাকা কোনোভাবেই শুভ নয়।
জমির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, রেজিস্ট্রেশন খরচ বৃদ্ধিসহ অন্য আরো খরচ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সংগতই বেড়েছে ফ্ল্যাটের দামও। ফলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের ফ্ল্যাট ক্রেতাদের স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে ফ্ল্যাট বিক্রি এবং বিনিয়োগকারীরা এ জন্য পড়েছেন মহাবিপাকে। আবাসন শিল্প খাতের চিত্র যে এই উদ্বেগজনক রূপ নিল, তা এক দিনে সৃষ্ট নয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্ধসহ আবাসন ব্যবসায়ীরা সরকারের নানা রকম নেতিবাচক সিদ্ধান্তের খেসারতও গুনছেন। যেসব আবাসন শিল্পপ্রতিষ্ঠান সাফল্য ও সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে, তারাও পড়ে গেছে সংকটে। দেশের অর্থনীতিসহ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেওয়া ইত্যাদি- এসব ক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, যা উন্নয়ন-অগ্রগতিরও অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে এ শিল্পের অগ্রগতি রোধে সব রকম হীনচেষ্টা চলে। প্রত্যাশা ছিল, মহাজোট সরকার এ খাতের বিকাশে বিদ্যমান সব রকম বাধা অপসারণের পাশাপাশি অগ্রগতির পথ মসৃণ করবে; কিন্তু সে আশা দুরাশা হয়েই রইল। ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাসের যৌক্তিকতা বারবার তুলে ধরা হলেও তা আমলেই নেওয়া হচ্ছে না। রিহ্যাবের এক হাজার ৮১টি সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং রিহ্যাববহির্ভূত প্রায় দুই হাজার ৫০০ প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যাদের অবদান জাতীয় অর্থনীতিতে অস্বীকার করার উপায় নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে হাজার হাজার ফ্ল্যাট রয়ে গেছে অবিক্রীত। রাজধানীতে আবাসন সংকট এমনিতেই প্রকট, এর মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতি তা আরো নাজুক করে তুলেছে। লাগামহীন বাড়িভাড়া বৃদ্ধির এটিও অন্যতম একটি কারণ। এর বিরূপ মূল্য দিতে হচ্ছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষকে।
আবাসন শিল্পে বিদ্যমান স্থবিরতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ দরকার। সরকারের যেসব সিদ্ধান্তের কারণে বিরূপ প্রভাবের ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে, সেসব সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার জরুরি। এমনিতেই নানাবিধ সংকটের মধ্যে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। এর মধ্যে এই স্থবিরতা সংকট আরো প্রকট করবে, যা কারোরই কাম্য নয়। নির্মাণসামগ্রীর মূল্য তালিকা সরকারের তরফে বেঁধে দেওয়ার পরও শিডিউল রেটের সঙ্গে বাজারের কোনো মিল নেই। ফলে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণকাজ আটকে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের কথা তো আর বলারই অপেক্ষা রাখে না। এসব চিত্র সামগ্রিকভাবে যেসব প্রশ্ন দাঁড় করাচ্ছে, সেসব নিরসনের দায় সরকার এড়াতে পারে না। আবাসন শিল্প খাতের পথ কণ্টকমুক্ত করতে হবে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই। এ ক্ষেত্রে আর কালক্ষেপণ কিংবা উদাসীনতা প্রদর্শন করা হলে এর ফল মারাত্মক অশুভ হতে পারে। ব্যবসায়ীরা তো বটেই, ঠিকানাপ্রত্যাশী মানুষরাও পড়বেন চরম বিপাকে। এমনটি তো কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
No comments