একটি আবেদন by অজয় দাশগুপ্ত
বয়স ছিল তার একুশ। ১৯৩২ সাল। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বীণা দাস নামের এ মেয়েটি। সে যুগে একটি স্নাতক ডিগ্রি পেলে সংসারের ভাগ্য বদলে যেত। কিন্তু তিনি চেয়েছেন দেশের ভাগ্য বদলাতে_ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে। এ কারণেই মাথার খোঁপায় ফুল না গুঁজে লুকিয়ে নিয়েছিলেন রিভলবার।
উদ্দেশ্য বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যা করা। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর ব্রিটিশ শাসকরা যে নিষ্ঠুর অত্যাচার চালাচ্ছে এভাবে তিনি বদলা নিতে চেয়েছেন। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, কারণ অস্ত্র চালনা শিক্ষা সম্পূর্ণ না হতেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান এসে পড়েছিল। তার সঙ্গে ডিগ্রি পাওয়ার কথা ছিল আরও এক বাঙালি তরুণীর_ চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। কিন্তু ব্রিটিশদের একটি ক্লাবে সশস্ত্র অভিযান চালাতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। দু'জনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হলে কেমন হতো!
বীণা দাসের শাস্তি লঘুই হয়েছিল বলতে হবে_ মাত্র নয় বছর কারাদণ্ড ভোগ করে তিনি মুক্তিলাভ করেন। এরপর ১৯৪২ সালে ব্রিটিশদের ভারত ছাড়া করার জন্য গান্ধীজির ডাকে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন। এর শাস্তি ছিল আরও তিন বছর কারাদণ্ড। বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যে মেয়ে গভর্নরকে লক্ষ্য করে গুলি করে তার হাতে ব্রিটিশ শাসকরা কখনও সার্টিফিকেট তুলে দেবে না, সেটা জানা কথা। কিন্তু ভারতবর্ষ তো স্বাধীন হয়েছে ষাট বছরেরও বেশি হয়ে গেল। এ সময়ে বীণা দাস কিছুকাল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দক্ষিণ কলিকাতার দুটি স্কুলে ইংরেজি পড়াতেন। কিন্তু স্নাতক ডিগ্রি না থাকায় বেতন ছিল কম। এ ডিগ্রি তার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল স্বাধীন ভারতের নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালন করেনি কেন, সে প্রশ্ন সঙ্গত। তাদের কাছেও কি মনে হয়েছে যে বীণা দাস রাজদ্রোহী? সম্প্রতি ভারতের 'চট্টগ্রাম পরিষদ' নামের একটি সংগঠন তার ডিগ্রির সার্টিফিকেট হস্তান্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে। উপলক্ষ জন্মশতবার্ষিকী। সিন্ডিকেট বলছে_ প্রস্তাবটি তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। একই সঙ্গে প্রীতিলতার ডিগ্রিটিও প্রদানের জন্য আবেদন করেছে চট্টগ্রাম পরিষদ। তার নিজের বেথুন কলেজ থেকেও এ আবেদন করা হয়েছে। তিনি ঢাকার ইডেন কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকেও এ আবেদন যেতে পারে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রও এ আবেদন জানাতে পারেন। ধরে নেওয়া যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট হস্তান্তরে রাজি হবে। উভয় পরিবারের তরফে কেউ তা গ্রহণ করবে। অনুরোধ থাকবে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানাক তাদের হাতে সার্টিফিকেটটি তুলে দিতে। প্রীতিলতা ভারতবর্ষ স্বাধীন করার জন্য চট্টগ্রাম মুক্ত করার অভিযানে অংশ নিয়ে আত্মদান করেন এবং হয়ে ওঠেন পরবর্তী প্রজন্মের প্রেরণা। আমাদের গৌরবের একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা বারবার তার বীরত্বগাথা স্মরণ করেছে, তার নামে শপথ নিয়েছে। তার ডিগ্রির সার্টিফিকেট গ্রহণ এবং সেটি উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ উপলক্ষে আমরা তাকে এবং সে সঙ্গে মুক্তির মন্দির সোপানতলে যারা আত্মদান করেছেন তাদেরও স্মরণ করতে পারি। দুর্ভাগ্য যে, বীণা দাস ও প্রীতিলতার সার্টিফিকেটের জন্য এত বছর পরে আবেদন করতে হচ্ছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জ্ঞানের আলো জ্বালানো প্রতিষ্ঠান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ করেনি। এখন কেবল একটিই প্রত্যাশা, দ্রুত তারা সিদ্ধান্তে আসুক। প্রীতিলতার সার্টিফিকেটটি যেন তার প্রিয় চট্টগ্রামে আসে সে জন্য সাধ্যমতো সবকিছু করা হবে, এটাও চাইব।
বীণা দাসের শাস্তি লঘুই হয়েছিল বলতে হবে_ মাত্র নয় বছর কারাদণ্ড ভোগ করে তিনি মুক্তিলাভ করেন। এরপর ১৯৪২ সালে ব্রিটিশদের ভারত ছাড়া করার জন্য গান্ধীজির ডাকে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন। এর শাস্তি ছিল আরও তিন বছর কারাদণ্ড। বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যে মেয়ে গভর্নরকে লক্ষ্য করে গুলি করে তার হাতে ব্রিটিশ শাসকরা কখনও সার্টিফিকেট তুলে দেবে না, সেটা জানা কথা। কিন্তু ভারতবর্ষ তো স্বাধীন হয়েছে ষাট বছরেরও বেশি হয়ে গেল। এ সময়ে বীণা দাস কিছুকাল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দক্ষিণ কলিকাতার দুটি স্কুলে ইংরেজি পড়াতেন। কিন্তু স্নাতক ডিগ্রি না থাকায় বেতন ছিল কম। এ ডিগ্রি তার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল স্বাধীন ভারতের নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালন করেনি কেন, সে প্রশ্ন সঙ্গত। তাদের কাছেও কি মনে হয়েছে যে বীণা দাস রাজদ্রোহী? সম্প্রতি ভারতের 'চট্টগ্রাম পরিষদ' নামের একটি সংগঠন তার ডিগ্রির সার্টিফিকেট হস্তান্তরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে। উপলক্ষ জন্মশতবার্ষিকী। সিন্ডিকেট বলছে_ প্রস্তাবটি তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। একই সঙ্গে প্রীতিলতার ডিগ্রিটিও প্রদানের জন্য আবেদন করেছে চট্টগ্রাম পরিষদ। তার নিজের বেথুন কলেজ থেকেও এ আবেদন করা হয়েছে। তিনি ঢাকার ইডেন কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকেও এ আবেদন যেতে পারে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রও এ আবেদন জানাতে পারেন। ধরে নেওয়া যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট হস্তান্তরে রাজি হবে। উভয় পরিবারের তরফে কেউ তা গ্রহণ করবে। অনুরোধ থাকবে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানাক তাদের হাতে সার্টিফিকেটটি তুলে দিতে। প্রীতিলতা ভারতবর্ষ স্বাধীন করার জন্য চট্টগ্রাম মুক্ত করার অভিযানে অংশ নিয়ে আত্মদান করেন এবং হয়ে ওঠেন পরবর্তী প্রজন্মের প্রেরণা। আমাদের গৌরবের একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা বারবার তার বীরত্বগাথা স্মরণ করেছে, তার নামে শপথ নিয়েছে। তার ডিগ্রির সার্টিফিকেট গ্রহণ এবং সেটি উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ উপলক্ষে আমরা তাকে এবং সে সঙ্গে মুক্তির মন্দির সোপানতলে যারা আত্মদান করেছেন তাদেরও স্মরণ করতে পারি। দুর্ভাগ্য যে, বীণা দাস ও প্রীতিলতার সার্টিফিকেটের জন্য এত বছর পরে আবেদন করতে হচ্ছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জ্ঞানের আলো জ্বালানো প্রতিষ্ঠান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ করেনি। এখন কেবল একটিই প্রত্যাশা, দ্রুত তারা সিদ্ধান্তে আসুক। প্রীতিলতার সার্টিফিকেটটি যেন তার প্রিয় চট্টগ্রামে আসে সে জন্য সাধ্যমতো সবকিছু করা হবে, এটাও চাইব।
No comments