রাজধানীতে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা-সবাইকে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে

রাজধানীতে আবার ব্যাপক হারে ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। চলতি জুলাই মাসে সরকারি হিসাবেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১৬১ জন। তার মধ্যে গত সোমবার মাফরুহা সুমি (৩২) নামে সরকারি চাকরিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব হলেও ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) মশকনিধন অভিযান নেই বললেই চলে।


ডেঙ্গুজ্বর অতীতেও ছিল। কিন্তু এক দশক ধরে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ২০০০ সালে এই জ্বর ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। সে বছর ৯৩ জন মারা গিয়েছিল এবং আক্রান্ত হয়েছিল সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি। গত চার বছর এ রোগে মারা যাওয়ার কোনো রেকর্ড না থাকলেও এবার ইতিমধ্যে একজন ডেঙ্গুরোগী মারা গেছেন।
অবশ্য সরকারি নথিতে আক্রান্ত হওয়ার কিংবা মারা যাওয়ার সব তথ্য যোগ হয় না বলেই অনেকের ধারণা। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এ-সংক্রান্ত তথ্য দেয় না। তার পরও ২৪ দিনে রাজধানীতে ১৬১ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসার খবরটি অবশ্যই আমাদের উৎকণ্ঠায় ফেলে।
এ ক্ষেত্রে ডিসিসির ব্যর্থতার পাশাপাশি আমাদের সচেতনতার অভাবও বহুলাংশে দায়ী। আমরা ডাবের খোসা, পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যাগ, ক্যান, পাত্রসহ বহু জিনিস ব্যবহারের পর যেখানে-সেখানে ফেলে দিই। বর্ষায় সেগুলোতে পানি জমে এবং তাতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা বংশবিস্তার করে। ফ্রিজের পেছনে জমে থাকা পানিতেও মশা বংশবিস্তার করতে পারে। আবার অনেকের বাসায় বাগান করার শখ আছে, কিন্তু তাঁরা টবে বৃষ্টির পানি জমে থাকে কি না সেদিকে খেয়াল করেন না। এ সমস্যা অভিজাত এলাকাগুলোতেই বেশি দেখা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপমতে, ধানমণ্ডি ও গুলশান ক্লাবের আশপাশের এলাকায় ৫০ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজে পাওয়া গেছে। আবার দেখা যায়, যেসব কর্মী মশকনিধন অভিযানে যায়, তাদের অভিজাত পরিবারের বাড়িঘরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি অবাধ গতিতে চলতে থাকে। অথচ ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করা।
ডেঙ্গুজ্বরে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুরোধে রোগী-ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর বেশি দিন স্থায়ী হলে রোগীর শরীরে স্বাভাবিক রক্তের প্রবাহ কমে যায় এবং একসময় রোগী মারা যায়। রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে রোগীর শরীরে রক্ত-উপাদান পরিপূরণের প্রয়োজন হয়। তাই ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য ডেঙ্গুরোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কিন্তু গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার এবং প্রচুর লেখালেখি ও আলোচনার পরও এ ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা আগের তুলনায় বাড়লেও এখনো তা খুবই কম। এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব লক্ষ করা যায়। জানা যায়, সোমবার যে চিকিৎসক মারা গেছেন তিনি আগে একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখান থেকে শেষ মুহূর্তে তাঁকে আনা হয় ল্যাবএইড হাসপাতালে। সেখানে আনার পরদিনই তাঁর মৃত্যু হয়। রোগীর অবস্থা বুঝে আরো আগেই তাঁকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো যেত।
আমরা ডেঙ্গুজ্বরে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আর দেখতে চাই না। এ জন্য ডিসিসিকে দ্রুত ও ব্যাপক আকারে মশকনিধন অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণকেও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। এডিস মশার বংশবিস্তার হতে পারে, এমন যেকোনো উৎস তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সে রকম উৎস থাকলে নিজেদের উদ্যোগে তা ধ্বংস করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.