নরওয়েতেও সন্ত্রাসের থাবা-শান্তির ভূমি ফিরে পাক নিজ ঐতিহ্য
শান্তির ভূমি নরওয়েতেও সন্ত্রাসের থাবা বিস্তৃত হয়েছে। এমন একটি দেশে ঘটনাটি ঘটল, যা কখনোই চিন্তা করা যায় না। সে দেশের মানুষ রাজনৈতিক কোনো সন্ত্রাস তাদের দেশে দেখেনি। তাদের পক্ষে এ ঘটনাকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনো ঘটনা বলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তেমন একটি শান্তিপ্রিয় দেশের রাজধানী অসলোতে শুক্রবার ছুটির দিন সরকারের প্রধান দপ্তরের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ও ওটেয়ায় গুলিবর্ষণে প্রায় ১০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যু কিংবা ঘটনা অসলোতেই থেমে থাকেনি। নরওয়ের মানুষকে আতঙ্কিত করে দিয়ে অসলো থেকে ৪০ মিনিটের দূরত্বের ওটেয়া দ্বীপে বড় আরেকটি ঘটনা ঘটে যায়। লেবার পার্টির যুব সদস্যদের বড় একটি সমাবেশ চলছিল সেখানে। পুলিশের পোশাকধারী বন্দুকধারী এক যুবক নির্বিচারে গুলি চালায় সেখানে। ওখানে ৮০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতদের সবাই ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিজ দলীয় সদস্য। এই হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত নরওয়েসহ বিশ্বের তাবৎ মানুষ। শুক্রবারের ঘটনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সংবাদ বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে। ওটেয়া ঘটনার নায়ক ৩২ বছরের এক তরুণ চরম ডানপন্থীদের অনুসারী বলেও সেখানকার পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এ ঘটনার আগে সে ফেসবুকে নানা রকম বক্তব্য প্রকাশ করেছে। সেখানকার পুলিশপ্রধান এ তথ্য নিশ্চিত করার পরই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, পুলিশ তখন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন? সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক সন্ত্রাস সম্পর্কে কোনো ধারণা না রাখলেও তা পুলিশের নজর এড়িয়ে যাওয়াটা অবাক করার মতোই। এ ক্ষেত্রে দেশটির নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতিকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুলিশের এই সন্দেহের পাশাপাশি ইসলামী জঙ্গিদের প্রতিও দৃষ্টি পড়েছে বিশ্লেষকদের। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য তথা ইসলামী জঙ্গিদের কোনো সংযোগ আছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। ১০ লক্ষাধিক মানুষের শহর অসলোর সামাজিক পরিবেশও বিচার্য। এখানকার এক-চতুর্থাংশ মানুষই অভিবাসী। ফলে বিদেশ থেকে আসা মানুষগুলোও সন্দেহের মধ্যে পড়ে কি না তাও দেখার বিষয়। ইউরোপের মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল এই শহরটিতে ঘটে যাওয়া এ সন্ত্রাসী ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি অভিবাসীদের ওপর সন্দেহের দৃষ্টি পড়ে, তাহলে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ ঘটনা প্রমাণ করে, গণতান্ত্রিক কোনো দেশই সন্ত্রাসীদের আওতার বাইরে নয়। অশান্তি সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকারও কোনো সুযোগ নেই। নরওয়ের এই অস্বাভাবিক ঘটনা যেন পৃথিবীর সব শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী মানসিকতা তৈরি করে_এটাও প্রত্যাশিত।
No comments