খাদ্যাভ্যাস by মোঃ মোতাহের হোসেন
খাদ্য-খোরাক নিয়ে একটা প্রবাদ আছে যে, চীন দেশের লোক কী খায় আর কী খায় না? উত্তরে বলা হয়, পানিতে চলাচল করে অথচ খায় না তা হচ্ছে জাহাজ। আর ওপরে চলাচল করে কিন্তু চীনারা খায় না উড়োজাহাজ। কথাটার সত্য-মিথ্যা যাচাই করার দরকার নেই। কারণ কোনো কিছু নিয়ে কোনো প্রবাদ, বচন, উপমা হঠাৎ করে গড়ে ওঠে না।
এর পেছনে থাকে দীর্ঘ ইতিহাস, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও গোত্র বা জাতিগত বৈশিষ্ট্য। জাপানি ও চীনাদের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। দেশ ভাগ এবং স্বাধীন হওয়ার কারণে আমরা বাঙালি যেমন বাংলাদেশি হয়ে গেছি, জাপানিরাও তাই। পার্থক্য শুধু এই, আমাদের দেশে মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। তাদের মাঝে সাগর।
দুই দশক আগে প্রথম যখন জাপানে আসি তখন আমরা স্বভাবতই জাপানি খাবার তেমন কিছু খেতে পারতাম না। বাংলাদেশের মাছ, মাংস, মসলা, তরিতরকারি এখন যেভাবে জাপানে পাওয়া যায়, ক'বছর আগে সেভাবে পাওয়া যেত না। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, জিরা ছাড়া আমাদের কোনো রান্না হয় না। আর এটা ছাড়া কোনো খাবারে আমাদের কোনো রুচিও আসে না। যা-ই হোক, কাজকর্ম, ওঠাবসা, খাদ্য-খাবারের মধ্য দিয়ে জাপানিরা যখন দেখে আমি বা আমরা এটা খাই না, ওটা খাই না; তাদের মতো শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, সমুদ্রের শেওলা, অক্টোপাস, ঘোড়ার মাংস, ঘাস, লতা-পাতা কত কিছুই আমরা খাই না। দেশ-বিদেশের সমালোচনা ও পরিবেশবাদীদের সব বাধা উপেক্ষা করে জাপানিরা সেই এন্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে তিমি মাছ ধরে, খায়। জাপানিদের কথায়, আমরা এমন বোকা যে, না খেয়ে থাকি, পুষ্টিহীনতায় ভুগি তবু তিমি মাছ খাই না। এসব দেখে একবার এক জাপানির কথায়, 'তোমাদের দেশে খাবারের অভাব হবে না কেন? তোমরা তো কিছুই খাও না।' ভাবলে তা-ই, কয়েক রকমের মাছ-মাংস, কিছু সবজি ও ডাল-ভাতের মধ্যেই আমাদের শরীরের সব খাদ্য ও পুষ্টির জোগান সীমাবদ্ধ। সমুদ্রের মধ্যেই আছে ৩২ হাজার প্রকারের জলজ প্রাণী। এসব প্রাণী প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ একটার পর একটা মাছ বা খাবার হিসেবে বেছে নিচ্ছে এবং ইতিমধ্যে সমুদ্রের শত শত প্রাণী মানুষের পাতে উঠে এসেছে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন সমুদ্রের এমন অনেক মাছ খায়, যা ১৫-২০ বছর আগে খেত না। অবশ্য এটা ঠিক, একেক দেশের বা জাতির খাবার বা রুচি একেক রকম। সবাই সবকিছু খায় না, খেতে পারে না। কিন্তু তাই বলে আমাদের দেশের মতো মৌসুমে আলু পচে নষ্ট হয়ে যাবে। ভাত পায় না তবু আলু খায় না_ যা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়। বলাবাহুল্য, চালের মতো আলুও পৃথিবীর অনেক দেশের প্রধান খাদ্য এবং সেসব দেশের মানুষ যথেষ্ট সুস্থ-সবল, বুদ্ধিমান। বিবর্তন ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও অনেক পরিবর্তন আসে। কিন্তু আমাদের সহজে আসছে না। বরং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জাপানিদের যেখানে কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে, আমাদের হয়েছে তার সম্পূর্ণ উল্টো। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের বাঙালিদের বা ভারতবর্ষের মানুষের একসঙ্গে বেশি ভাত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠার পেছনে কারণ হলো, অভাব, দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা ইত্যাদি। পুরনো দিনের মানুষের মধ্যে পরে আবার কোথায় কী খাই, না খাই বা কী পাই, না পাই এই অনিশ্চয়তা বা দুশ্চিন্তা থাকার কারণে একবারে বেশি খেয়ে পেটের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখার চিন্তা মাথায় কাজ করত। প্রবাদই হোক অথবা চলতি কথাই হোক, খাবার নিয়ে কিছু বলতে গেলে আমাদের দেশের অনেকেই বলে থাকেন, মরলে খেয়েদেয়েই মরব। জাপানে অন্য বছর যেখানে ৮ মিলিয়ন টন চাল লাগত, সেখানে এ বছর ২০ হাজার টন চাল কম লাগবে_ জাপানের জনসংখ্যা কমে যাওয়া, ডায়েট করা এবং বিদেশি খাবারের প্রচলন বেড়ে যাওয়াও চাল কম লাগার আরেকটা কারণ। জাপানিরা অনেক কিছুই খায় বটে। এরপরও এদের প্রধান খাদ্য চাল এবং বছরে লাগে মাত্র ৮ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা জাপানের চেয়ে সামান্য কিছু বেশি। অথচ আমাদের চাল লাগে জাপানের চেয়ে ৩ গুণের বেশি ছাড়া কম নয়। আসলে খাদ্যাভ্যাসই এর অন্যতম কারণ।
hossainbj786@yahoo.com
দুই দশক আগে প্রথম যখন জাপানে আসি তখন আমরা স্বভাবতই জাপানি খাবার তেমন কিছু খেতে পারতাম না। বাংলাদেশের মাছ, মাংস, মসলা, তরিতরকারি এখন যেভাবে জাপানে পাওয়া যায়, ক'বছর আগে সেভাবে পাওয়া যেত না। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, জিরা ছাড়া আমাদের কোনো রান্না হয় না। আর এটা ছাড়া কোনো খাবারে আমাদের কোনো রুচিও আসে না। যা-ই হোক, কাজকর্ম, ওঠাবসা, খাদ্য-খাবারের মধ্য দিয়ে জাপানিরা যখন দেখে আমি বা আমরা এটা খাই না, ওটা খাই না; তাদের মতো শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, সমুদ্রের শেওলা, অক্টোপাস, ঘোড়ার মাংস, ঘাস, লতা-পাতা কত কিছুই আমরা খাই না। দেশ-বিদেশের সমালোচনা ও পরিবেশবাদীদের সব বাধা উপেক্ষা করে জাপানিরা সেই এন্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে তিমি মাছ ধরে, খায়। জাপানিদের কথায়, আমরা এমন বোকা যে, না খেয়ে থাকি, পুষ্টিহীনতায় ভুগি তবু তিমি মাছ খাই না। এসব দেখে একবার এক জাপানির কথায়, 'তোমাদের দেশে খাবারের অভাব হবে না কেন? তোমরা তো কিছুই খাও না।' ভাবলে তা-ই, কয়েক রকমের মাছ-মাংস, কিছু সবজি ও ডাল-ভাতের মধ্যেই আমাদের শরীরের সব খাদ্য ও পুষ্টির জোগান সীমাবদ্ধ। সমুদ্রের মধ্যেই আছে ৩২ হাজার প্রকারের জলজ প্রাণী। এসব প্রাণী প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ একটার পর একটা মাছ বা খাবার হিসেবে বেছে নিচ্ছে এবং ইতিমধ্যে সমুদ্রের শত শত প্রাণী মানুষের পাতে উঠে এসেছে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন সমুদ্রের এমন অনেক মাছ খায়, যা ১৫-২০ বছর আগে খেত না। অবশ্য এটা ঠিক, একেক দেশের বা জাতির খাবার বা রুচি একেক রকম। সবাই সবকিছু খায় না, খেতে পারে না। কিন্তু তাই বলে আমাদের দেশের মতো মৌসুমে আলু পচে নষ্ট হয়ে যাবে। ভাত পায় না তবু আলু খায় না_ যা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়। বলাবাহুল্য, চালের মতো আলুও পৃথিবীর অনেক দেশের প্রধান খাদ্য এবং সেসব দেশের মানুষ যথেষ্ট সুস্থ-সবল, বুদ্ধিমান। বিবর্তন ও পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও অনেক পরিবর্তন আসে। কিন্তু আমাদের সহজে আসছে না। বরং অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জাপানিদের যেখানে কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে, আমাদের হয়েছে তার সম্পূর্ণ উল্টো। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের বাঙালিদের বা ভারতবর্ষের মানুষের একসঙ্গে বেশি ভাত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠার পেছনে কারণ হলো, অভাব, দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা ইত্যাদি। পুরনো দিনের মানুষের মধ্যে পরে আবার কোথায় কী খাই, না খাই বা কী পাই, না পাই এই অনিশ্চয়তা বা দুশ্চিন্তা থাকার কারণে একবারে বেশি খেয়ে পেটের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখার চিন্তা মাথায় কাজ করত। প্রবাদই হোক অথবা চলতি কথাই হোক, খাবার নিয়ে কিছু বলতে গেলে আমাদের দেশের অনেকেই বলে থাকেন, মরলে খেয়েদেয়েই মরব। জাপানে অন্য বছর যেখানে ৮ মিলিয়ন টন চাল লাগত, সেখানে এ বছর ২০ হাজার টন চাল কম লাগবে_ জাপানের জনসংখ্যা কমে যাওয়া, ডায়েট করা এবং বিদেশি খাবারের প্রচলন বেড়ে যাওয়াও চাল কম লাগার আরেকটা কারণ। জাপানিরা অনেক কিছুই খায় বটে। এরপরও এদের প্রধান খাদ্য চাল এবং বছরে লাগে মাত্র ৮ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা জাপানের চেয়ে সামান্য কিছু বেশি। অথচ আমাদের চাল লাগে জাপানের চেয়ে ৩ গুণের বেশি ছাড়া কম নয়। আসলে খাদ্যাভ্যাসই এর অন্যতম কারণ।
hossainbj786@yahoo.com
No comments