পবিত্র কোরআনের আলো-তাওরাত কিতাবেও মানব সমাজের বিচার-ফয়সালার বিধিবিধান ছিল
৪২. ছাম্মা-ঊনা লিলকাযিবি আক্কা-লূনা লিচ্ছুহতি; ফাইন জা-ঊকা ফাহ্কুম বাইনাহুম আও 'আরিদ্ব 'আনহুম; ওয়া ইন তু'রিদ্ব 'আনহুম ফালান ইয়াদুর্রূকা শাইআন; ওয়া ইন হাকামতা ফাহ্কুম বাইনাহুম বিলকি্বছতি্ব; ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুক্বছিত্বীন।
৪৩. ওয়া কাইফা ইউহাক্কিমূনাকা ওয়া ই'নদাহুমুত্ তাওরাতু ফীহা হুক্মুল্লাহি ছুম্মা ইয়াতাওয়াল্লাওনা মিম্ বা'দি যা-লিকা; ওয়া মা উলা-য়িকা বিলমু'মিনীন।
৪৪. ইন্না আনযালনাত্ ত্বাওরাতা ফীহা হুদান ওয়া নূর; ইয়াহ্কুমু বিহান্ নাবিয়ূ্যনাল্লাযীনা আছলামু লিল্লাযীনা হা-দূ ওয়ার্রাব্বানিয়ূ্যনা ওয়ালআহবা-রু বিমাছ্ তুহ্ফিযূ মিন কিতাবিল্লাহি ওয়া কা-নূ 'আলাইহি শুহাদা-আ; ফালা-তাখশাউন না-ছা ওয়াখ্শাওনি, ওয়া লা তাশতারূ বিআ-ইয়াতী ছামানান ক্বালীলা; ওয়া মান লাম ইয়াহ্কুম্ বিমা- আন্যালাল্লা-হু ফাউলা-য়িকা হুমুল কা-ফিরূন।
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৪২-৪৪]
অনুবাদ : ৪২. এরা (ইহুদি) মিথ্যা কথা শুনতে পছন্দ করে, এরা অবৈধ মাল খেতেও ওস্তাদ। অতএব এরা যদি কোনো বিচার-ফয়সালার জন্য আপনার কাছে আসে, তবে চাইলে আপনি তাদের বিচার-ফয়সালা করতে পারেন অথবা এড়িয়ে যেতে পারেন। যদি তাদের এড়িয়ে যান, তবে এরা আপনার কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না। যদি আপনি তাদের বিচার-ফয়সালা করতে চান, তবে অবশ্যই ন্যায়বিচার করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ন্যায়বিচারকদের ভালোবাসেন।
৪৩. এরা কিভাবে আপনার কাছে বিচারের দায়িত্ব অর্পণ করতে চায়, যেখানে তাদের নিজেদের কাছেই আল্লাহর কিতাব তাওরাত মজুদ রয়েছে; যার মধ্যে আল্লাহর বিধান আছে। মনে রাখবেন, অতঃপর এরা একটু পরেই আপনার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এরা তো আসলে মুমিনদের সঙ্গে নেই।
৪৪. নিঃসন্দেহে আমি তাওরাত নাজিল করেছিলাম, যাতে পথনির্দেশ ও আলো ছিল। আমার নবীরা যাঁরা আমার বিধান অনুসরণ করতেন তাঁরা ইহুদি জাতিকে এ পথরেখা মোতাবেকই আইন-কানুন প্রদান করতেন। এ ছাড়া অনুসরণ করতেন জ্ঞান-সাধক ও ধর্মীয় আলেমরা। কেননা আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণ করার দায়িত্ব তাঁদেরই ছিল এবং তাঁরা ছিল প্রত্যক্ষ সাক্ষী। সুতরাং তোমরা মানুষদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো। আর আমার আয়াতগুলো অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিও না। যারা আল্লাহর নাজিল করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না, তারাই কাফের।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে মূলত ইহুদি সম্প্রদায়কে উপলক্ষ করে এবং তাওরাত কিতাবে বর্ণিত বিচার-ফয়সালার বিধিবিধান স্মরণ করিয়ে দিয়ে। ৪২ নম্বর আয়াতে ইহুদিদের অসততা ও উন্নাসিকতা বর্ণনা করে রাসুল (সা.)-কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে ইহুদিদের বিচার-ফয়সালা করত পারেন। আবার ইচ্ছা করলে প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন। তিনি যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করেন বা এড়িয়ে চলেন, তবে তারা মুসলমানদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তবে ওই আয়াতে রাসুলকে আবার এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে_যদি তিনি তাদের কোনো বিচার-ফয়সালা করেন, তবে অবশ্যই যেন তা ন্যায়বিচারের পথ অনুসরণ করে করেন।
এরপর ৪৩ নম্বর আয়াতে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছে, তারা কি আদৌ কোনো সৎ নিয়তে তাদের বিচার-ফয়সালার জন্য রাসুলের কাছে যায়? এতে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ তাদের তাওরাত কিতাবে এসব বিচার-ফয়সালার বিধিবিধান বর্ণিত আছে। কিন্তু তারা রাসুলের কাছে যায় তাদের মনগড়া বিধিবিধানগুলো কৌশলে অনুমোদন করানোর জন্য। তারা রাসুলের কাছে যায় তাদের কার্যসিদ্ধির জন্য। কিন্তু পরক্ষণেই তারা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তারা আসলে মুমিনদের দলভুক্ত হয়নি এবং হবেও না। ৪৪ নম্বর আয়াতে তাওরাত কিতাবের ঐতিহাসিক পটভূমি বর্ণনা করা হয়েছে। এই কিতাব মানব জাতির জন্য পথনির্দেশ ও আলোকবর্তিকা ছিল। আল্লাহর নবীরা এ কিতাবে বর্ণিত বিধিবিধান অনুযায়ী সমাজকে পরিচালিত করতেন। বিশেষ করে ইহুদি জাতির নবী-রাসুল, জ্ঞানতাপস ও আলেমরা তাঁদের জাতিকে এ কিতাবের রূপরেখা অনুযায়ী পরিচালিত করতেন। কিন্তু ইহুদি জাতির পরবর্তী প্রজন্ম তাওরাতের এ শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে থাকে। তারা তাওরাতকে বিকৃত করে, জাতিকে বিভ্রান্ত করে এবং আল্লাহর আয়াতগুলোকে অল্পমূল্যে বিক্রি করতে থাকে। ওই আয়াতে তাদের বিভ্রান্তিকর পথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ আয়াতগুলোর পটভূমি হিসেবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইহুদি সমাজে তৎকালে সংঘটিত হত্যা, ব্যভিচারসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিচার-ফয়সালার প্রশ্ন নিয়ে তখন তারা রাসুলের সামনে হাজির হতো। তাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিতর্ক সৃষ্টি করা। এ পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.) তাওরাত কিতাবের বিধান অনুযায়ীই ফয়সালা দিতেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী৪৪. ইন্না আনযালনাত্ ত্বাওরাতা ফীহা হুদান ওয়া নূর; ইয়াহ্কুমু বিহান্ নাবিয়ূ্যনাল্লাযীনা আছলামু লিল্লাযীনা হা-দূ ওয়ার্রাব্বানিয়ূ্যনা ওয়ালআহবা-রু বিমাছ্ তুহ্ফিযূ মিন কিতাবিল্লাহি ওয়া কা-নূ 'আলাইহি শুহাদা-আ; ফালা-তাখশাউন না-ছা ওয়াখ্শাওনি, ওয়া লা তাশতারূ বিআ-ইয়াতী ছামানান ক্বালীলা; ওয়া মান লাম ইয়াহ্কুম্ বিমা- আন্যালাল্লা-হু ফাউলা-য়িকা হুমুল কা-ফিরূন।
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৪২-৪৪]
অনুবাদ : ৪২. এরা (ইহুদি) মিথ্যা কথা শুনতে পছন্দ করে, এরা অবৈধ মাল খেতেও ওস্তাদ। অতএব এরা যদি কোনো বিচার-ফয়সালার জন্য আপনার কাছে আসে, তবে চাইলে আপনি তাদের বিচার-ফয়সালা করতে পারেন অথবা এড়িয়ে যেতে পারেন। যদি তাদের এড়িয়ে যান, তবে এরা আপনার কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না। যদি আপনি তাদের বিচার-ফয়সালা করতে চান, তবে অবশ্যই ন্যায়বিচার করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ন্যায়বিচারকদের ভালোবাসেন।
৪৩. এরা কিভাবে আপনার কাছে বিচারের দায়িত্ব অর্পণ করতে চায়, যেখানে তাদের নিজেদের কাছেই আল্লাহর কিতাব তাওরাত মজুদ রয়েছে; যার মধ্যে আল্লাহর বিধান আছে। মনে রাখবেন, অতঃপর এরা একটু পরেই আপনার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এরা তো আসলে মুমিনদের সঙ্গে নেই।
৪৪. নিঃসন্দেহে আমি তাওরাত নাজিল করেছিলাম, যাতে পথনির্দেশ ও আলো ছিল। আমার নবীরা যাঁরা আমার বিধান অনুসরণ করতেন তাঁরা ইহুদি জাতিকে এ পথরেখা মোতাবেকই আইন-কানুন প্রদান করতেন। এ ছাড়া অনুসরণ করতেন জ্ঞান-সাধক ও ধর্মীয় আলেমরা। কেননা আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণ করার দায়িত্ব তাঁদেরই ছিল এবং তাঁরা ছিল প্রত্যক্ষ সাক্ষী। সুতরাং তোমরা মানুষদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো। আর আমার আয়াতগুলো অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিও না। যারা আল্লাহর নাজিল করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না, তারাই কাফের।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে মূলত ইহুদি সম্প্রদায়কে উপলক্ষ করে এবং তাওরাত কিতাবে বর্ণিত বিচার-ফয়সালার বিধিবিধান স্মরণ করিয়ে দিয়ে। ৪২ নম্বর আয়াতে ইহুদিদের অসততা ও উন্নাসিকতা বর্ণনা করে রাসুল (সা.)-কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে ইহুদিদের বিচার-ফয়সালা করত পারেন। আবার ইচ্ছা করলে প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন। তিনি যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করেন বা এড়িয়ে চলেন, তবে তারা মুসলমানদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তবে ওই আয়াতে রাসুলকে আবার এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে_যদি তিনি তাদের কোনো বিচার-ফয়সালা করেন, তবে অবশ্যই যেন তা ন্যায়বিচারের পথ অনুসরণ করে করেন।
এরপর ৪৩ নম্বর আয়াতে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছে, তারা কি আদৌ কোনো সৎ নিয়তে তাদের বিচার-ফয়সালার জন্য রাসুলের কাছে যায়? এতে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ তাদের তাওরাত কিতাবে এসব বিচার-ফয়সালার বিধিবিধান বর্ণিত আছে। কিন্তু তারা রাসুলের কাছে যায় তাদের মনগড়া বিধিবিধানগুলো কৌশলে অনুমোদন করানোর জন্য। তারা রাসুলের কাছে যায় তাদের কার্যসিদ্ধির জন্য। কিন্তু পরক্ষণেই তারা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তারা আসলে মুমিনদের দলভুক্ত হয়নি এবং হবেও না। ৪৪ নম্বর আয়াতে তাওরাত কিতাবের ঐতিহাসিক পটভূমি বর্ণনা করা হয়েছে। এই কিতাব মানব জাতির জন্য পথনির্দেশ ও আলোকবর্তিকা ছিল। আল্লাহর নবীরা এ কিতাবে বর্ণিত বিধিবিধান অনুযায়ী সমাজকে পরিচালিত করতেন। বিশেষ করে ইহুদি জাতির নবী-রাসুল, জ্ঞানতাপস ও আলেমরা তাঁদের জাতিকে এ কিতাবের রূপরেখা অনুযায়ী পরিচালিত করতেন। কিন্তু ইহুদি জাতির পরবর্তী প্রজন্ম তাওরাতের এ শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে থাকে। তারা তাওরাতকে বিকৃত করে, জাতিকে বিভ্রান্ত করে এবং আল্লাহর আয়াতগুলোকে অল্পমূল্যে বিক্রি করতে থাকে। ওই আয়াতে তাদের বিভ্রান্তিকর পথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ আয়াতগুলোর পটভূমি হিসেবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইহুদি সমাজে তৎকালে সংঘটিত হত্যা, ব্যভিচারসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিচার-ফয়সালার প্রশ্ন নিয়ে তখন তারা রাসুলের সামনে হাজির হতো। তাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিতর্ক সৃষ্টি করা। এ পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.) তাওরাত কিতাবের বিধান অনুযায়ীই ফয়সালা দিতেন।
No comments