সরল গরল-৳ ৩৫০০ কোটি যখন কেতাবের গরু by মিজানুর রহমান খান
বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের হাতে থাকা গ্রামীণফোনের (জিপি) কাছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাওনা থাকার খবরে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা। এটা ‘ফাঁকি’, না ‘অনাদেয়’ তা অস্পষ্ট। টাকা তো এক দিনে জমেনি।
সংসদীয় কমিটি বিটিআরসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমরা খুঁজে দেখি, এর আড়ালে কত রহস্যময়, কত বিচিত্র ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে। জিপির চেয়ারম্যান সিগভে ব্রেক্কে মামলা করবেন কী, এর পানি তো ইতিমধ্যেই গড়িয়ে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে ঠেকেছে।
হাইকোর্টের রায়ে মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদের নেতৃত্বাধীন বিটিআরসি অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত। আর সেটা সেই অডিট ফার্মের (ফজল অ্যান্ড কোম্পানি) নিয়োগ নিয়ে, যাদের রিপোর্টে জিপির ওই টাকার হদিস মিলেছে। এর বিরুদ্ধে জিপির আগেই যথেষ্ট কড়া মন্তব্য করেন আমাদের হাইকোর্ট। তাই সরকারি কোষাগারে সম্ভাব্য টাকার অঙ্ক আসার খবর শুনে ভালো লাগলেও সেটা ঈষৎ তেতো ঠেকতে সময় লাগেনি।
অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজার (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) আদালতে দেওয়া বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান আত্মস্বীকৃত নিয়ম ভঙ্গকারী। তিন বছর বিটিআরসির অডিটর থাকলে ফের অডিটর হওয়া বারণ। কিন্তু নিয়ম ভেঙেছে তারা। আদালতের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নে বিটিআরসি কণ্ঠ নিচু করে। বলে, আমরা জানতাম না। আদালত তা বিশ্বাস করেননি। অতঃপর তারা বলেছে, আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু এমন আত্মস্বীকৃত এক ত্রুটিপূর্ণ অডিটর দিয়ে এখন বাংলালিংকের নিরীক্ষা চলছে।
আপিল বিভাগে এখনো মামলা বিচারাধীন। তবে লিভ মঞ্জুরির শুনানিও বিলম্বিত করা হচ্ছে। অডিট ফার্ম নিয়োগকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ভুক্ত একটি রিভিউ প্যানেল অবৈধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বিটিআরসি তা না মানলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ হয় হাইকোর্টে। এ রায়ের ওপর আপিল বিভাগের নিষেধাজ্ঞার দুই দিন হাতে থাকতে ৩ অক্টোবর জিপির কাছে তারা টাকা চেয়ে চিঠি দেয়। এসপার-ওসপার না হওয়া একটি বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা যে নিজ স্বার্থেও দরকারি, তা-ও বিটিআরসি মনে করেনি। চিঠিটি তারা মিডিয়ায় বিলি করে। এর উদ্দেশ্য কি সস্তা বাহবা নেওয়া?
বিটিআরসির ব্যবস্থাপনায় অতি উৎসাহ কিংবা আনাড়িপনা দেখতে পাচ্ছি। এতে জিপির কাছ থেকে সত্যি যদি আদায় করে নেওয়ার মতো কিছু থাকে, তাহলে তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সিগভে ব্রেক্কে প্রয়োজনে আইনের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি নেবেন কী, এক লড়াইয়ে বিটিআরসি তো হেরে বসে আছে।
অডিট ফার্ম বাছাইয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটিতে দুজন সদস্য থাকার কথা বিটিআরসির বাইরে থেকে। কিন্তু সবাই ছিলেন বিটিআরসির। অডিটর নিয়োগে অনিয়মের প্রতিবাদে আপিল করা হয়েছিল। তাতে প্রমাণিত হয়, বিটিআরসি আইন ভেঙেছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস পিপিআরের ৬০ ধারার ৫ উপদফা অনুযায়ী, রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্তই বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু জেনারেল জিয়া তা মানেননি। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমর্থন চেয়ে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। টেলিফোনমন্ত্রী তাঁকে সাফ বলে দেন, ওই ফার্মের নিয়োগ বাতিল করুন। রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত মেনে নিন। জেনারেলের তা মনঃপূত হয়নি। বরং তিনি তাঁদের জানিয়ে দেন যে রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য প্রযোজ্য হবে না। তাঁর খোঁড়া যুক্তি ছিল, অডিটের ‘মাসাধিককাল অতিক্রান্ত’, তাই বিধি মানতে তিনি বাধ্য নন। পরে হাইকোর্টে প্রমাণিত হয় যে রিভিউ প্যানেল ও ডাকমন্ত্রী সঠিক ছিলেন। তিনিই ভ্রান্ত। কিন্তু তিনি দমার পাত্র নন। তিনি সব কানুন ভেঙেচুরে ফজলকে দিয়েই জিপি অডিট করাবেনই এবং তা করেছেনও।
তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁকে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা আমরা জানি না। তাঁর যুক্তি ছিল, ইতিমধ্যে ওই ফার্ম ‘সরকারের বিপুল অঙ্কের প্রাপ্যযোগ্য অর্থের সন্ধান’ পেয়েছে। তাই ‘জনস্বার্থে অডিট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে’।
বিচারপতি ফরিদ আহম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের (সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত) সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত আগস্টে যে রায় দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে আমরা একমত না হয়ে পারি না। তাঁরা বলেছিলেন, ‘বিটিআরসি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। সংবিধি দ্বারা তার ওপর জনগণের ক্ষমতা আরোপ করা হয়েছে। টেলিকম বাংলাদেশের একটি বিকাশমান খাত। হাজার হাজার কোটি টাকা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদি এখানে ক্রয়-প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম অনিয়ম বা অবৈধতা প্রশ্রয় পায়, তাহলে তা দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের উৎসাহিত করবে। জনস্বার্থের হানি ঘটবে। তাই কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে আইন অনুসরণ করতে হবে।’ আদালত আরও বলেছেন, ‘আমরা জনাব রেজার (বিটিআরসির আইনজীবী) সঙ্গে একমত, যখন তিনি বলেন যে অডিটের মাধ্যমে বিটিআরসি টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু আমরা তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারি না, যখন তিনি বলেন যে জিপি অডিটরত ফজলকে এখন বিরক্ত করা ঠিক হবে না। কারণ, তারা ইতিমধ্যেই জিপির আর্থিক অনিয়ম ধরে ফেলেছে।’ আদালত এরপর যা বলেন তার সারকথা হলো, বিটিআরসির মতো প্রতিষ্ঠান প্রথমেই আইন ভাঙবে, আর তারপর তার সেই ভাঙা হাত নিয়ে টাকা আদায়ে নেমে জনস্বার্থ বিপন্ন করবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্র এ ধরনের অবৈধ পন্থায় কিছু মুনাফা আশা করতে পারে না।
হাইকোর্টের কথায়, ‘এ ধরনের অনুশীলন আদালত দ্বারা কঠোর ভাষায় নিরুৎসাহিত এবং অঙ্কুরেই এর বিনাশ হওয়া উচিত। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিটিআরসি শুধু আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলিই দেখায়নি, একই সঙ্গে তারা উদ্ধতভাবে কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।’
আদালতের মন্তব্য যদিও বিটিআরসিকে ঘিরে, কিন্তু এর আঁচ ব্যক্তিগতভাবে প্রথমেই লাগবে জেনারেল জিয়ার। আদালতের কথায়, ‘তাঁদের ভাবখানা এমন যেন তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে কাজকারবার করছেন। তাঁদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তাঁরা জনগণের ক্ষমতার জিম্মাদার। রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত যথার্থ। অডিটর নিয়োগকে তাই অবৈধ ঘোষণা করা হলো।’
এর পরও আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে বিটিআরসির অব্যাহত বেপরোয়া মনোভাব লক্ষ করি। হাইকোর্টের দেওয়া গত ১৮ আগস্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ‘ব্যক্তিগতভাবে’ আপিল বিভাগে বিটিআরসির পক্ষে দাঁড়ান। ২৫ আগস্ট মাত্র ছয় সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়। আদেশ দেওয়া হয় নিয়মিত লিভ পিটিশন দায়েরের। এর আগে আট বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বেঞ্চ অবশ্য রিটের রায় পর্যন্ত অডিটে স্থিতাবস্থা দিয়েছিলেন। এর একটা অর্থ ছিল, রায় তুমি মেনে নিয়ো। কিন্তু মানেনি বিটিআরসি।
বিটিআরসির সঙ্গে ওই অডিট ফার্মের চুক্তি হয়েছিল গত ৫ এপ্রিল। এর ৪৭ দিন পর হাইকোর্ট প্রথম বিটিআরসির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে চেম্বার থেকে স্থগিতাদেশ নেওয়ার সময়ও আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেখি। আমরা সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুকেও দেখি। মুরাদ রেজাও ছিলেন। তবে রিভিউ প্যানেল কিংবা মন্ত্রণালয়—দুটোই খাস সরকারি। তবু আমরা অ্যাটর্নিদের ‘প্রাইভেট’ ভূমিকায় দেখলাম। এটা বিচারিক রেওয়াজের বিচ্যুতি কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে যে মামলায় রাষ্ট্রের এত বড় স্বার্থ, সেখানে আমরা রাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধিত্ব পেলাম না। যে রাষ্ট্রের জন্য টাকা জোগাড়ে বিটিআরসি মরিয়া, সেখানে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ নীরব কেন?
এ রকম একটি রহস্যজনক প্রক্রিয়ায় জিপির কাছ থেকে রাষ্ট্রের কোষাগারে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আদায়ে নেমেছে বিটিআরসি। কারও জনস্বার্থ দেখার ব্যাকুলতাকে আমরা অবশ্যই সম্মান করি। বিটিআরসিকেও করি। কিন্তু এতটা অপরিচ্ছন্ন হাতে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে দেখে অবাক হই।
৩ অক্টোবর জিপিকে দেওয়া বিটিআরসির আকস্মিক চিঠি আর জিপির উত্তর পড়ে আমরা অবশ্য বুঝতে পারি না যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দাবি সমীচীন কি সমীচীন নয়।
রাজস্ব ফাঁকি কথাটি চিঠিতে নেই। একগুচ্ছ পরিপত্রের উল্লেখ আছে। কিন্তু তার কোনটা কোথায়, কতটা কীভাবে লঙ্ঘিত হলো, তা নির্দিষ্ট করা নেই। বলা হয়, ১৯৯৬ থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত জিপি ৩৮ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা ‘সংগ্রহ’ করে বলে ‘ফজল’ চিহ্নিত করেছে। প্রকৃত রাজস্ব এ সময় দুই হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা বিটিআরসির প্রাপ্য ‘প্রতীয়মান’ হলেও পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। সুদসহ বাকি টাকা তাই ‘অপরিশোধিত’। এত বিপুল অঙ্কের পাওনা, যা মাত্র পাঁচ মাসে চিহ্নিত হলো, তা এত দিন কেন ফেলনা ছিল, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এখন আপিল বিভাগে ওই মামলার শুনানি বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে।
তবে আমাদের একটা ভরসা আছে। কারণ, জিপির সিইও জনসনের ৪ অক্টোবরের লেখা চিঠিতে দেখি, তাঁরা এই দাবি আজগুবি বলে উড়িয়ে দেননি। আমরা মর্মাহত, আমরা বিস্মিত—সেটা তিনি বলেছেন ওই টাকা দাবি করা হয়েছে বলে নয়, প্রক্রিয়াগত বিচ্যুতির জন্যই। জনসনের কথায়, ‘নিরীক্ষায় সব সময় সুযোগ থাকে হিসাব-কিতাব বিভিন্নভাবে দেখার। এ জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপ দরকার; যাতে আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি বেছে নেওয়া যায়।’
জেনারেল জিয়া আহমেদ, যার চাকরি নবায়নের প্রশ্ন অত্যাসন্ন, তিনি প্রথম আলোকে যা বলেন, তাতে মনে হলো, তিনি যা করছেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর সায় আছে। কানাঘুষা অনেক। জনস্বার্থ রক্ষা ও একই সঙ্গে কারও কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বা কৌশলগত অভিসন্ধি কাজ করছে কি? ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অপসারিত’ ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে কিন্তু অমুনাফাভোগী গ্রামীণ টেলিকমের (যার মূল কাজ বাংলাদেশের গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন) আইনগত সম্পৃক্ততা নেই বলে জানি। জিপির ৩৪ দশমিক ২ শতাংশের মালিকানা গ্রামীণ টেলিকমের। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা গুনতে হলে টেলিনর একা গুনবে না। তার মালিকানা ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বাকিটা বাংলার জনগণ বলা যায়। তবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদকের তৎপরতা একটি উচ্চমার্গীয় রাজনৈতিক যোগসূত্রকেই নির্দেশ করে।
তবে আমরাও মনে করি, বিষয়টি নিয়ে সংলাপ দরকার। টেলিনরকে স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতে ঠেলা উচিত হবে না। কাজির গরু কেতাবে থাকে, গোয়ালে থাকে না। কিন্তু বিটিআরসির হিসাবের গরু কেতাবে থাকলে গোয়ালেও থাকবে। যাবে কোথায়। জিপি-বস টেলিনরকে ২০০১ সালে নরওয়ে সরকার ২০ লাখ ক্রনার জরিমানা করেছিল তার নব্বইয়ের দশকের অপকর্মের জন্য। সুতরাং দেরি হলে জুড়িয়ে যাওয়ার কিছু নেই। তাই বলি, প্রায় দুই-তিন কোটি টাকা নিয়ে তর্কিত ফজল যে গরুর হদিস দিতে পারল, তা কোনো শিষ্ট ফজল দিতে পারত বা পারবে না কেন। ফজল-বিতর্ক আদালতে ফয়সালা হোক। ইত্যবসরে সংসদীয় কমিটির তদারকে নতুন ফার্ম দিয়ে দ্বিতীয়বারও এর নিরীক্ষা করা যেতে পারে। কারণ, হিসাব-সূত্রটা ঠিক করাই আসল কথা। জিপির ক্ষেত্রে যা, অন্য সব টেলিকম অপারেটরের (নবাগত এয়ারটেলসহ) বেলায়ও তাই হবে। সে কারণে হিসাব-সূত্রটা আন্তর্জাতিক হওয়াটাই সংগত। এখানে ইউরেকা ইউরেকা তত্ত্ব খাটার কথা নয়।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
হাইকোর্টের রায়ে মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদের নেতৃত্বাধীন বিটিআরসি অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত। আর সেটা সেই অডিট ফার্মের (ফজল অ্যান্ড কোম্পানি) নিয়োগ নিয়ে, যাদের রিপোর্টে জিপির ওই টাকার হদিস মিলেছে। এর বিরুদ্ধে জিপির আগেই যথেষ্ট কড়া মন্তব্য করেন আমাদের হাইকোর্ট। তাই সরকারি কোষাগারে সম্ভাব্য টাকার অঙ্ক আসার খবর শুনে ভালো লাগলেও সেটা ঈষৎ তেতো ঠেকতে সময় লাগেনি।
অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজার (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) আদালতে দেওয়া বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান আত্মস্বীকৃত নিয়ম ভঙ্গকারী। তিন বছর বিটিআরসির অডিটর থাকলে ফের অডিটর হওয়া বারণ। কিন্তু নিয়ম ভেঙেছে তারা। আদালতের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নে বিটিআরসি কণ্ঠ নিচু করে। বলে, আমরা জানতাম না। আদালত তা বিশ্বাস করেননি। অতঃপর তারা বলেছে, আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু এমন আত্মস্বীকৃত এক ত্রুটিপূর্ণ অডিটর দিয়ে এখন বাংলালিংকের নিরীক্ষা চলছে।
আপিল বিভাগে এখনো মামলা বিচারাধীন। তবে লিভ মঞ্জুরির শুনানিও বিলম্বিত করা হচ্ছে। অডিট ফার্ম নিয়োগকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ভুক্ত একটি রিভিউ প্যানেল অবৈধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বিটিআরসি তা না মানলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ হয় হাইকোর্টে। এ রায়ের ওপর আপিল বিভাগের নিষেধাজ্ঞার দুই দিন হাতে থাকতে ৩ অক্টোবর জিপির কাছে তারা টাকা চেয়ে চিঠি দেয়। এসপার-ওসপার না হওয়া একটি বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা যে নিজ স্বার্থেও দরকারি, তা-ও বিটিআরসি মনে করেনি। চিঠিটি তারা মিডিয়ায় বিলি করে। এর উদ্দেশ্য কি সস্তা বাহবা নেওয়া?
বিটিআরসির ব্যবস্থাপনায় অতি উৎসাহ কিংবা আনাড়িপনা দেখতে পাচ্ছি। এতে জিপির কাছ থেকে সত্যি যদি আদায় করে নেওয়ার মতো কিছু থাকে, তাহলে তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সিগভে ব্রেক্কে প্রয়োজনে আইনের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি নেবেন কী, এক লড়াইয়ে বিটিআরসি তো হেরে বসে আছে।
অডিট ফার্ম বাছাইয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটিতে দুজন সদস্য থাকার কথা বিটিআরসির বাইরে থেকে। কিন্তু সবাই ছিলেন বিটিআরসির। অডিটর নিয়োগে অনিয়মের প্রতিবাদে আপিল করা হয়েছিল। তাতে প্রমাণিত হয়, বিটিআরসি আইন ভেঙেছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস পিপিআরের ৬০ ধারার ৫ উপদফা অনুযায়ী, রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্তই বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু জেনারেল জিয়া তা মানেননি। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমর্থন চেয়ে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। টেলিফোনমন্ত্রী তাঁকে সাফ বলে দেন, ওই ফার্মের নিয়োগ বাতিল করুন। রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত মেনে নিন। জেনারেলের তা মনঃপূত হয়নি। বরং তিনি তাঁদের জানিয়ে দেন যে রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য প্রযোজ্য হবে না। তাঁর খোঁড়া যুক্তি ছিল, অডিটের ‘মাসাধিককাল অতিক্রান্ত’, তাই বিধি মানতে তিনি বাধ্য নন। পরে হাইকোর্টে প্রমাণিত হয় যে রিভিউ প্যানেল ও ডাকমন্ত্রী সঠিক ছিলেন। তিনিই ভ্রান্ত। কিন্তু তিনি দমার পাত্র নন। তিনি সব কানুন ভেঙেচুরে ফজলকে দিয়েই জিপি অডিট করাবেনই এবং তা করেছেনও।
তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁকে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা আমরা জানি না। তাঁর যুক্তি ছিল, ইতিমধ্যে ওই ফার্ম ‘সরকারের বিপুল অঙ্কের প্রাপ্যযোগ্য অর্থের সন্ধান’ পেয়েছে। তাই ‘জনস্বার্থে অডিট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে’।
বিচারপতি ফরিদ আহম্মদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের (সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত) সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত আগস্টে যে রায় দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে আমরা একমত না হয়ে পারি না। তাঁরা বলেছিলেন, ‘বিটিআরসি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। সংবিধি দ্বারা তার ওপর জনগণের ক্ষমতা আরোপ করা হয়েছে। টেলিকম বাংলাদেশের একটি বিকাশমান খাত। হাজার হাজার কোটি টাকা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদি এখানে ক্রয়-প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম অনিয়ম বা অবৈধতা প্রশ্রয় পায়, তাহলে তা দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের উৎসাহিত করবে। জনস্বার্থের হানি ঘটবে। তাই কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে আইন অনুসরণ করতে হবে।’ আদালত আরও বলেছেন, ‘আমরা জনাব রেজার (বিটিআরসির আইনজীবী) সঙ্গে একমত, যখন তিনি বলেন যে অডিটের মাধ্যমে বিটিআরসি টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু আমরা তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারি না, যখন তিনি বলেন যে জিপি অডিটরত ফজলকে এখন বিরক্ত করা ঠিক হবে না। কারণ, তারা ইতিমধ্যেই জিপির আর্থিক অনিয়ম ধরে ফেলেছে।’ আদালত এরপর যা বলেন তার সারকথা হলো, বিটিআরসির মতো প্রতিষ্ঠান প্রথমেই আইন ভাঙবে, আর তারপর তার সেই ভাঙা হাত নিয়ে টাকা আদায়ে নেমে জনস্বার্থ বিপন্ন করবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্র এ ধরনের অবৈধ পন্থায় কিছু মুনাফা আশা করতে পারে না।
হাইকোর্টের কথায়, ‘এ ধরনের অনুশীলন আদালত দ্বারা কঠোর ভাষায় নিরুৎসাহিত এবং অঙ্কুরেই এর বিনাশ হওয়া উচিত। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিটিআরসি শুধু আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলিই দেখায়নি, একই সঙ্গে তারা উদ্ধতভাবে কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।’
আদালতের মন্তব্য যদিও বিটিআরসিকে ঘিরে, কিন্তু এর আঁচ ব্যক্তিগতভাবে প্রথমেই লাগবে জেনারেল জিয়ার। আদালতের কথায়, ‘তাঁদের ভাবখানা এমন যেন তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে কাজকারবার করছেন। তাঁদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তাঁরা জনগণের ক্ষমতার জিম্মাদার। রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত যথার্থ। অডিটর নিয়োগকে তাই অবৈধ ঘোষণা করা হলো।’
এর পরও আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে বিটিআরসির অব্যাহত বেপরোয়া মনোভাব লক্ষ করি। হাইকোর্টের দেওয়া গত ১৮ আগস্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ‘ব্যক্তিগতভাবে’ আপিল বিভাগে বিটিআরসির পক্ষে দাঁড়ান। ২৫ আগস্ট মাত্র ছয় সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়। আদেশ দেওয়া হয় নিয়মিত লিভ পিটিশন দায়েরের। এর আগে আট বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বেঞ্চ অবশ্য রিটের রায় পর্যন্ত অডিটে স্থিতাবস্থা দিয়েছিলেন। এর একটা অর্থ ছিল, রায় তুমি মেনে নিয়ো। কিন্তু মানেনি বিটিআরসি।
বিটিআরসির সঙ্গে ওই অডিট ফার্মের চুক্তি হয়েছিল গত ৫ এপ্রিল। এর ৪৭ দিন পর হাইকোর্ট প্রথম বিটিআরসির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে চেম্বার থেকে স্থগিতাদেশ নেওয়ার সময়ও আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেখি। আমরা সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুকেও দেখি। মুরাদ রেজাও ছিলেন। তবে রিভিউ প্যানেল কিংবা মন্ত্রণালয়—দুটোই খাস সরকারি। তবু আমরা অ্যাটর্নিদের ‘প্রাইভেট’ ভূমিকায় দেখলাম। এটা বিচারিক রেওয়াজের বিচ্যুতি কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে যে মামলায় রাষ্ট্রের এত বড় স্বার্থ, সেখানে আমরা রাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধিত্ব পেলাম না। যে রাষ্ট্রের জন্য টাকা জোগাড়ে বিটিআরসি মরিয়া, সেখানে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ নীরব কেন?
এ রকম একটি রহস্যজনক প্রক্রিয়ায় জিপির কাছ থেকে রাষ্ট্রের কোষাগারে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আদায়ে নেমেছে বিটিআরসি। কারও জনস্বার্থ দেখার ব্যাকুলতাকে আমরা অবশ্যই সম্মান করি। বিটিআরসিকেও করি। কিন্তু এতটা অপরিচ্ছন্ন হাতে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে দেখে অবাক হই।
৩ অক্টোবর জিপিকে দেওয়া বিটিআরসির আকস্মিক চিঠি আর জিপির উত্তর পড়ে আমরা অবশ্য বুঝতে পারি না যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দাবি সমীচীন কি সমীচীন নয়।
রাজস্ব ফাঁকি কথাটি চিঠিতে নেই। একগুচ্ছ পরিপত্রের উল্লেখ আছে। কিন্তু তার কোনটা কোথায়, কতটা কীভাবে লঙ্ঘিত হলো, তা নির্দিষ্ট করা নেই। বলা হয়, ১৯৯৬ থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত জিপি ৩৮ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা ‘সংগ্রহ’ করে বলে ‘ফজল’ চিহ্নিত করেছে। প্রকৃত রাজস্ব এ সময় দুই হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা বিটিআরসির প্রাপ্য ‘প্রতীয়মান’ হলেও পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। সুদসহ বাকি টাকা তাই ‘অপরিশোধিত’। এত বিপুল অঙ্কের পাওনা, যা মাত্র পাঁচ মাসে চিহ্নিত হলো, তা এত দিন কেন ফেলনা ছিল, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এখন আপিল বিভাগে ওই মামলার শুনানি বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে।
তবে আমাদের একটা ভরসা আছে। কারণ, জিপির সিইও জনসনের ৪ অক্টোবরের লেখা চিঠিতে দেখি, তাঁরা এই দাবি আজগুবি বলে উড়িয়ে দেননি। আমরা মর্মাহত, আমরা বিস্মিত—সেটা তিনি বলেছেন ওই টাকা দাবি করা হয়েছে বলে নয়, প্রক্রিয়াগত বিচ্যুতির জন্যই। জনসনের কথায়, ‘নিরীক্ষায় সব সময় সুযোগ থাকে হিসাব-কিতাব বিভিন্নভাবে দেখার। এ জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সংলাপ দরকার; যাতে আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি বেছে নেওয়া যায়।’
জেনারেল জিয়া আহমেদ, যার চাকরি নবায়নের প্রশ্ন অত্যাসন্ন, তিনি প্রথম আলোকে যা বলেন, তাতে মনে হলো, তিনি যা করছেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর সায় আছে। কানাঘুষা অনেক। জনস্বার্থ রক্ষা ও একই সঙ্গে কারও কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বা কৌশলগত অভিসন্ধি কাজ করছে কি? ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অপসারিত’ ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে কিন্তু অমুনাফাভোগী গ্রামীণ টেলিকমের (যার মূল কাজ বাংলাদেশের গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন) আইনগত সম্পৃক্ততা নেই বলে জানি। জিপির ৩৪ দশমিক ২ শতাংশের মালিকানা গ্রামীণ টেলিকমের। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা গুনতে হলে টেলিনর একা গুনবে না। তার মালিকানা ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বাকিটা বাংলার জনগণ বলা যায়। তবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদকের তৎপরতা একটি উচ্চমার্গীয় রাজনৈতিক যোগসূত্রকেই নির্দেশ করে।
তবে আমরাও মনে করি, বিষয়টি নিয়ে সংলাপ দরকার। টেলিনরকে স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতে ঠেলা উচিত হবে না। কাজির গরু কেতাবে থাকে, গোয়ালে থাকে না। কিন্তু বিটিআরসির হিসাবের গরু কেতাবে থাকলে গোয়ালেও থাকবে। যাবে কোথায়। জিপি-বস টেলিনরকে ২০০১ সালে নরওয়ে সরকার ২০ লাখ ক্রনার জরিমানা করেছিল তার নব্বইয়ের দশকের অপকর্মের জন্য। সুতরাং দেরি হলে জুড়িয়ে যাওয়ার কিছু নেই। তাই বলি, প্রায় দুই-তিন কোটি টাকা নিয়ে তর্কিত ফজল যে গরুর হদিস দিতে পারল, তা কোনো শিষ্ট ফজল দিতে পারত বা পারবে না কেন। ফজল-বিতর্ক আদালতে ফয়সালা হোক। ইত্যবসরে সংসদীয় কমিটির তদারকে নতুন ফার্ম দিয়ে দ্বিতীয়বারও এর নিরীক্ষা করা যেতে পারে। কারণ, হিসাব-সূত্রটা ঠিক করাই আসল কথা। জিপির ক্ষেত্রে যা, অন্য সব টেলিকম অপারেটরের (নবাগত এয়ারটেলসহ) বেলায়ও তাই হবে। সে কারণে হিসাব-সূত্রটা আন্তর্জাতিক হওয়াটাই সংগত। এখানে ইউরেকা ইউরেকা তত্ত্ব খাটার কথা নয়।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments