সত্তরেও সঙ্গী ইন্টারনেট by ইমাম হাসান
‘ঘুম ভাঙে খুব সকালেই। আটটার মধ্যে নাশতার টেবিলে। নাশতা করে ল্যাপটপটি খুলে বসা। তারপর একপাক ঘুরে আসা ইন্টারনেটের জগৎ থেকে। নিজের ই-মেইল চেক করা। অন্যদের দু-চারটি মেইল করা। ফেসবুকে বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে একটু যোগাযোগের চেষ্টা। দেখতে দেখতে বড্ড বেলা হয়ে যায়।’
পাঠক, ভাবছেন কোনো তরুণ-তরুণীর কথা বলছি? না, ওপরের কথাগুলো বলছিলেন ৭০ ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা নাসরিন কবির। আর এটি তাঁর নিত্যদিনের রুটিনই বলা চলে। যেই বয়সে এসে একজন মানুষ একা হয়ে পড়েন, সেই বয়স নাসরিন কবিরের। কয়েক মাস বাদেই পা দেবেন সত্তরে। সারা বাড়িতে এক মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে ছাড়া কথা বলারও কেউ নেই। কাজের লোকটিও আসে আধা বেলা। তাই বলে নিজেকে একা মনে হয় না তাঁর। কারণ, বাড়িতে থাকা সময়টি তাঁর দিব্যি কেটে যায় কম্পিউটার আর ইন্টারনেটে। কী করেন ইন্টারনেটে? ফোকলা দাঁতে এবার একটা মিষ্টি হাসি। তিনি বললেন, ‘বিভিন্ন ধরনের রেসিপি নিয়ে রান্না করতে ভালো লাগে। ভালো থাকার নানা কৌশল জেনে নিই। সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা ধরনের টিপস নিই। ব্লগের লেখা পড়ি এবং কমেন্ট দিই। আগে বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকাও পড়তাম। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আসার পর সবচেয়ে মজা লেগেছে স্কাইপি ব্যবহারে।’ তারপর একটু থেমে, ‘আমার দুই মেয়ে। তারা আমেরিকাতেই বাস করছে। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে স্কাইপির কল্যাণেই। তাদের বেড়ে ওঠাও দেখতে পাচ্ছি। বেশ আনন্দে সময়টা কেটে যায়।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এবং ইডেন মহিলা কলেজে পড়ে ১৯৬৩ সালে বিএ পাস করেন হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে। ১৯৬৬ সালে বিয়ের পর জীবনের অনেকটা সময় তিনি কাটিয়েছেন বিদেশে। স্বামী হুমায়ুন কবিরের চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন ইসলামাবাদ, স্পেন, নিউইয়র্ক, তেহরান, জিম্বাবুয়ের হারারেসহ বিভিন্ন শহরে। চাকরি শেষ হলে ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন স্বামী ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে। ২০০১ সালে স্বামী মারা যান। কম্পিউটারের সঙ্গে সখ্য স্বামীর মৃত্যুর বছর চারেক আগে। তাই একাকী সময় কাটাতে শুরু করেন কম্পিউটারে বসেই। ই-মেইলে স্কুলজীবনের বন্ধুদের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান, সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নেন নিয়মিত। তাঁর মতে, ‘বিভিন্ন কারণে হয়তো অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয় না। যেমন আমার এক বোনের মেয়ের মেয়ে। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। নানা ধরনের পুরস্কার পাচ্ছে। কেউবা আবার বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। নিয়মিত তাদের সব খবর এবং ছবি আমি ফেসবুকে দেখছি। বিষয়টি আমার অনেক ভালো লাগে।’ অনেক দিনের অভ্যস্ততা ইদানীং একটু উল্টাপাল্টা হচ্ছে। তা নাকি দুটি কারণে। তা হলো ডেস্কটপ কম্পিউটার ছেড়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন কয়েক মাস আগে থেকে, তার ওপর আবার রান্নাঘরে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে আঘাত (ভেঙে গেছে) পেয়েছেন, যাকে বলে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। তাই বলে তো আর বসে থাকা চলে না। এক হাতেই চলছে কাজ। জানতে চাই, এমন দিন কি আছে, আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়নি? জবাবটা হেসেই, ‘হ্যাঁ। যেদিন কম্পিউটার নষ্ট হয়, সেদিন। তবে এখন একটু কম সময় পাচ্ছি। কারণ, হাতের চিকিৎসায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হয় নিয়মিত।’
শুধু কি কম্পিউটার আর ইন্টারনেট! চল্লিশোর্ধ্ব মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়মিত খাবার খাওয়ানো, তাঁর দেখাশোনা, টুকটাক রান্নাবান্না করা সবই চলে নিজের হাতে। প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান ‘সোসাইটি ফর দি এডুকেশন অব দি ইন্টেলেকচুয়ালি ডিজেবল’-এ নিজের সন্তান ছাড়াও আরও পাঁচটি বাচ্চার খরচ দেন তিনি। আর এসবের ফাঁকে ফাঁকেই সকাল, দুপুর, বিকেল, রাতে বসে পড়েন ইন্টারনেটে। নাসরিন কবির বলেন, ‘বয়স যা-ই হোক, প্রযুক্তির সঙ্গে তো আর বিরোধ নেই। নিজের প্রয়োজনে তাকে আমি ব্যবহার করতে পারছি। কোনো লোকেশন বা দ্রব্যের দরকার পড়লে সহজে তা ইন্টারনেটে পেয়ে যাচ্ছি। আমার দৈনন্দিন কাজ সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এবং ইডেন মহিলা কলেজে পড়ে ১৯৬৩ সালে বিএ পাস করেন হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে। ১৯৬৬ সালে বিয়ের পর জীবনের অনেকটা সময় তিনি কাটিয়েছেন বিদেশে। স্বামী হুমায়ুন কবিরের চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন ইসলামাবাদ, স্পেন, নিউইয়র্ক, তেহরান, জিম্বাবুয়ের হারারেসহ বিভিন্ন শহরে। চাকরি শেষ হলে ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন স্বামী ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে। ২০০১ সালে স্বামী মারা যান। কম্পিউটারের সঙ্গে সখ্য স্বামীর মৃত্যুর বছর চারেক আগে। তাই একাকী সময় কাটাতে শুরু করেন কম্পিউটারে বসেই। ই-মেইলে স্কুলজীবনের বন্ধুদের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান, সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নেন নিয়মিত। তাঁর মতে, ‘বিভিন্ন কারণে হয়তো অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয় না। যেমন আমার এক বোনের মেয়ের মেয়ে। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। নানা ধরনের পুরস্কার পাচ্ছে। কেউবা আবার বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। নিয়মিত তাদের সব খবর এবং ছবি আমি ফেসবুকে দেখছি। বিষয়টি আমার অনেক ভালো লাগে।’ অনেক দিনের অভ্যস্ততা ইদানীং একটু উল্টাপাল্টা হচ্ছে। তা নাকি দুটি কারণে। তা হলো ডেস্কটপ কম্পিউটার ছেড়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন কয়েক মাস আগে থেকে, তার ওপর আবার রান্নাঘরে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে আঘাত (ভেঙে গেছে) পেয়েছেন, যাকে বলে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। তাই বলে তো আর বসে থাকা চলে না। এক হাতেই চলছে কাজ। জানতে চাই, এমন দিন কি আছে, আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়নি? জবাবটা হেসেই, ‘হ্যাঁ। যেদিন কম্পিউটার নষ্ট হয়, সেদিন। তবে এখন একটু কম সময় পাচ্ছি। কারণ, হাতের চিকিৎসায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হয় নিয়মিত।’
শুধু কি কম্পিউটার আর ইন্টারনেট! চল্লিশোর্ধ্ব মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়মিত খাবার খাওয়ানো, তাঁর দেখাশোনা, টুকটাক রান্নাবান্না করা সবই চলে নিজের হাতে। প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করতে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান ‘সোসাইটি ফর দি এডুকেশন অব দি ইন্টেলেকচুয়ালি ডিজেবল’-এ নিজের সন্তান ছাড়াও আরও পাঁচটি বাচ্চার খরচ দেন তিনি। আর এসবের ফাঁকে ফাঁকেই সকাল, দুপুর, বিকেল, রাতে বসে পড়েন ইন্টারনেটে। নাসরিন কবির বলেন, ‘বয়স যা-ই হোক, প্রযুক্তির সঙ্গে তো আর বিরোধ নেই। নিজের প্রয়োজনে তাকে আমি ব্যবহার করতে পারছি। কোনো লোকেশন বা দ্রব্যের দরকার পড়লে সহজে তা ইন্টারনেটে পেয়ে যাচ্ছি। আমার দৈনন্দিন কাজ সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি।’
No comments