সাংবাদিক দম্পতি হত্যা-হত্যার কারণ একাধিক, নতুন করে আটক নেই

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার পেছনে একাধিক উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের ভাষায়, জটিল এই মামলার তদন্ত এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। হত্যা মামলার তদন্ত তদারককারী পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইমাম হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।


এদিকে, হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, তদন্তে অতিরিক্ত গুরুত্বারোপের কৌশল হিসেবে রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। গুজবে কান না দিয়ে তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, এই খুনের ঘটনা নিয়ে বেশি আলোচনার কারণে খুনিরা দ্রুত সটকে পড়ছে। আরেকটা বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আমরা সংশ্লিষ্ট অনেকের ফোন বন্ধ পাচ্ছি। এমনকি অনেক মিডিয়া-কর্মীও ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। কেউ হয়তো বিব্রত হওয়ার ভয়ে, কেউ আবার আতঙ্কে।’
কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ইমাম হোসেন বলেন, ঘটনার পর ওই ভবনের দুই নিরাপত্তাকর্মী ও একজন ব্যবস্থাপককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বাইরে আর কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে আটক-গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। হত্যাকাণ্ডে কোনো গণমাধ্যমকর্মীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তারও ধারণা পাওয়া যায়নি।
উপকমিশনার বলেন, গত সোমবার রাতে পুলিশ মাছরাঙা টেলিভিশনে সাগর সরওয়ারের ডেস্ক ও কম্পিউটারে তল্লাশি চালিয়েছে। এটিএন বাংলা অফিসেও তল্লাশি চালানো হবে। এ ছাড়া সরওয়ার কী ধরনের প্রতিবেদন বা অনুষ্ঠান করতেন, জ্বালানি বিটে তাঁর প্রতিবেদন, তাঁর লেখা বই—এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁদের প্রতিবেদনে কোনো মহল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। বিদেশ থেকে কেউ কেউ ফোন করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। কেউ আবার তথ্যও দিচ্ছেন। খুনিরা দেশত্যাগের চেষ্টা করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ইমাম হোসেন বলেন, নিহত দম্পতির ছেলে মাহির সরওয়ারের নিরাপত্তার জন্য ঘটনার দিন থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন ছিল। এখন সেখানে পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
এদিকে গত রোববার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন বলে জানান শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন মোল্লা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ বলেন, নিহত সরওয়ারের শরীরে ২০টির বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সরওয়ারের বুকের ডান পাশে বাঁটবিহীন অবস্থায় একটি ছুরির ফলা বিঁধে ছিল। তাঁর পিঠে ১১টি, বুকে পাঁচ-ছয়টি, গলার দুই পাশে পাঁচটি, হাতে ও মাথায় একটি করে গভীর ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া মেহেরুনের পেটে ছিল দুটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। তাঁর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গিয়েছিল এবং চোখের পাতার ওপর আরও দুটি আঘাতের চিহ্ন ছিল।
ধৈর্য ধরতে বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস জানায়, গতকাল কোস্টগার্ডের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের তদন্তকাজ অনেক দূর এগিয়েছে, বেশ অগ্রগতিও হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যেকোনো মুহূর্তে দেশবাসী সুসংবাদ শুনতে পাবে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আমাকে এটা বলতে হয়েছে। আর এটা তো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেই বলেছি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বেশ অগ্রগতিও হয়েছে।’
এদিকে গতকাল বিকেলে ইন্দিরা রোডে মেহেরুনের মায়ের বাসায় সরওয়ার-রুনির কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাঁদের স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা অংশ নিয়ে নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন। এ ছাড়া নিহতদের স্মরণে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সমিতি ভবনের নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ দাবি জানান।
গত শনিবার সকালে রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সরওয়ার ও মেহেরুনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফ্ল্যাটে তখন তাঁদের পাঁচ বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার ছিল।
পরিবারের কৃতজ্ঞতা
শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির পরিবার।
গতকাল এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাগর ও মেহেরুনের সহকর্মী, সাংবাদিকদের পেশাজীবী সংগঠন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। এতে শিশু মেঘের দায়িত্ব গ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ‘সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.