চরাচর-চা চাষের ইতিবৃত্ত by আজিজুর রহমান
চীনে সর্বপ্রথম খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩৭ অব্দে সম্রাট শেনঙের পৃষ্ঠপোষকতায় চায়ের প্রচলন শুরু হয়। এর বহু বছর পর ১৭ শতকে চায়ের ব্যবহার শুরু হয় ইউরোপ মহাদেশে। আর এখন তো নন-অ্যালকোহলিক অর্থাৎ অ-মাদকজাতীয় পানীয় হিসেবে চা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
১৮ শতকের প্রথমার্ধে দক্ষিণ চীনের স্থানীয়দের উচ্চারিত 'টে' শব্দটি পর্যায়ক্রমে 'টি' (ঞবধ) শব্দে রূপ নেয়। পাঁচ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অধিকারী চা-শিল্প এখন অনেক দেশের অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকার অন্যতম উপায়। আজ থেকে ১৭০ বছর আগে বাংলাদেশে প্রথম ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ব্যক্তি-উদ্যোগে চা চাষ শুরু হয়। কাস্টমস কালেক্টর মি. স্কোনসের উদ্যোগে গড়ে ওঠে পাইওনিয়র টি-গার্ডেন নামে চা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। চীন ও আসাম বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তিনি চা-গাছের চারা সংগ্রহ করে এনেছিলেন। কিন্তু তাঁর সে প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এরপর খ্যাতনামা ব্রিটিশ চা-শিল্প উদ্যোক্তা মি. জে হেগ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালিয়ায় চা উৎপাদন শুরু করেন। ১৮৪৩ সালে সেখান থেকে চা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হয়। এরপর সিলেটের অদূরে মালিনীছড়ায় ১৮৫৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ি জমিতে চা আবাদের পর ক্রমশ চা বাগানের বিস্তার লাভ করে এবং দেশের মানুষ ধীরে ধীরে চা পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের সাতটি জেলায় মোট ১৬৪টি চা বাগান রয়েছে। মোট এক লাখ ১৫ হাজার ৭৫৭ হেক্টর জমিতে এ বাগানগুলো চা উৎপাদন করছে। যেসব জেলায় এসব বাগান রয়েছে তা হচ্ছে_মৌলভীবাজারে ৯৩টি, সিলেটে ২০টি, হবিগঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রামে ২১টি, রাঙ্গামাটিতে একটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ও পঞ্চগড়ে আটটি। ইতিমধ্যে পার্বত্য তিন জেলায় ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্মল হোল্ডিং টি কাল্টিভেশন অ্যান্ড চিটাগং হিলট্রাক্ট নামে বাংলাদেশ চা বোর্ড একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ক্ষুদ্র চাষিদের চা-গাছের চারাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ২০টি, বান্দরবানে ৮৮টি এবং খাগড়াছড়িতে ৪৬টি প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। আগামীতে এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া দেশের উত্তরের শেষ সীমানায় পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় এক যুগ আগে চা চাষ শুরু হয়েছে। এস্টেট, ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রায়তন পদ্ধতিতে ১৩টি চা-বাগান এক হাজার ৩৮৭.৬৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। চা বোর্ডের সমীক্ষা থেকে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলায় চা চাষের উপযোগী অন্তত ৪০ হাজার একর জমি রয়েছে। পঞ্চগড়ের চা বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং ভ্যারাইটি মানের। বোর্ডের সমীক্ষা থেকে আরো জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি, গজনি, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এবং নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে চা চাষ করে প্রচুর উৎপাদন বাড়ানো ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের চা-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রায় দেড় লাখ জনবল।
আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান
No comments