সামরিক খাতে ব্যয় ও জনগণের স্বার্থ-সমকালীন প্রসঙ্গ by বদরুদ্দীন উমর
বাংলাদেশে সমস্যার কি শেষ আছে? মানুষের জন্য করণীয় কাজ কি কিছু কম আছে? এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য এসব খাতে ব্যয় বরাদ্দ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজন কি কেউ অস্বীকার করতে পারেন? এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কর্তৃক লাখ লাখ কোটি টাকার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করা কি জনস্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? এর দ্বারা রাষ্ট্র ও সরকারের
কোন মহল উপকৃত হচ্ছে এবং নিজেদের পকেট ভর্তি করছে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশের দাবি কি যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত নয়?
বাংলাদেশ সরকার রাশিয়া থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে (আমার দেশ, ১৩.২.২০১২)। বাংলাদেশ শুধু রাশিয়া থেকেই যে অস্ত্র কিনছে তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, ব্রিটেন ইত্যাদি দেশ থেকেও বাংলাদেশ হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকে। একটি দেশের সামরিক বাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনা দরকার হয়। কাজেই বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনা হচ্ছে, শুধু এটাই কোনো অস্বাভাবিক বা অসাধারণ ব্যাপার নয়। এ নিয়ে সমালোচনারও কিছু নেই। কিন্তু যখন দেখা যায়, প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরকার ক্রয় করছে, তখন এ বিষয়ে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং প্রতিবাদ না করে উপায় নেই।
প্রথমত, এ বিষয়টির দিকে লক্ষ্য করা দরকার যে, বাংলাদেশ তার স্থলভাগের তিন দিকই ভারত দ্বারা বেষ্টিত এবং দক্ষিণে সমুদ্রসীমাও ভারতীয় সমুদ্রসীমার সংলগ্ন। এ ছাড়া আছে উত্তরে নেপাল ও ভুটান এবং পূর্ব দিকে মিয়ানমার। ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের সব থেকে বড় বন্ধুদেশ। কাজেই তার বিরুদ্ধে বিশাল আকারের সমরসজ্জার কোনো প্রয়োজন আছে এটা মনে করার কারণ নেই। তাছাড়া ভারত সামরিকভাবে এতই শক্তিশালী যে, দৈবাৎ ভারতের সঙ্গে যদি বাংলাদেশের কোনো যুদ্ধ হয়, তাহলে বাংলাদেশকে সামরিকভাবে পরাজিত ও দমন করা ভারতের জন্য মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপার। নিজেকে সামরিকভাবে এমনভাবে শক্তিশালী করার কোনো সাফাই বাংলাদেশের নেই, যাতে এর কোনো অন্যথা হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব থেকে বিবেচনার বিষয় হলো, ভারত বাংলাদেশ আক্রমণ করে দখল করবে এ সম্ভাবনা সম্পূর্ণ শূন্য। ১৯৭১ সালের বিশেষ পরিস্থিতিতে যা ঘটেছিল এখন সেটা ঘটতে পারে এটা মনে করা বাস্তব জ্ঞান ও বুদ্ধির অপরিপকস্ফতা ছাড়া আর কী?
নেপাল, ভুটান এমনকি মিয়ানমারও বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এমনটি মনে করারও কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। সমুদ্রসীমা, তেলক্ষেত্রের দখল ইত্যাদি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বন্দ্ব থাকলেও এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে এ চিন্তা কোনো বুদ্ধিমান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ওয়াকিবহাল কোনো ব্যক্তিই করতে পারেন না।
তাহলে বাংলাদেশের এমন শত্রু কে, যার মোকাবেলা করা ও যার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশকে তার প্রয়োজনের থেকে বিশাল আকারে সামরিক বাহিনী রাখতে হবে, সামরিক বাহিনীর সংখ্যা সম্প্রসারণ করতে হবে এবং তাকে লাখ লাখ কোটি টাকার সমরসজ্জায় সজ্জিত করতে হবে? এসব প্রশ্ন কি বাংলাদেশের নাগরিকরা যথার্থভাবে উত্থাপন করতে পারেন না? এর জন্য কি তারা সরকারের কাছে এই বিপুল বিশাল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের লৌকিকতা দাবি করতে পারেন না?
ভারত বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। ভারত রাষ্ট্র বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কী ধরনের বন্ধু তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু ভারতের জনগণ যে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সাধারণ জনগণকে গুলিয়ে ফেলার মধ্যে জ্ঞানবুদ্ধির কোনো পরিচয় নেই। কিন্তু যুদ্ধের প্রশ্ন যখন আসে, তখন রাষ্ট্র পর্যায়ের সম্পর্কের কথাই বিশেষভাবে বিবেচনা করার কথা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধের প্রশ্ন এখন একেবারেই নেই। তাছাড়া যে দেশ নিজের সীমান্তে নিজের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা দিতেও অক্ষম, সে দেশ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করবে এটা তো ভাবাই যায় না। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে। এ নিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে, সরকারিভাবে কিছু প্রতিবাদও হচ্ছে, কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। উপরন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, সীমান্তে এইভাবে বাংলাদেশি নাগরিক নিধন চলবে!
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কোন প্রয়োজনে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়মিতভাবে কিনে চলেছে? এর দ্বারা কার স্বার্থ রক্ষিত ও পরিপুষ্ট হচ্ছে? জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে এই বিপুল ব্যয় কার কাজে লাগছে? সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে এই ব্যয় রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বে থাকা কোনো না কোনো মহলের স্বার্থ নিশ্চয় হাসিল করছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব যখন এই কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তখন এর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করার কোনো উপায় তো নেই।
লক্ষ্য ও বিবেচনা করার বিষয় যে, এই লাখ লাখ কোটি টাকা যখন সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার জন্য ব্যয় হচ্ছে তখন এ দেশের জনগণের বিপুল অধিকাংশের, গরিবদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেটুকু সামান্য ব্যবস্থা আছে সেটাও এখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে গরিবদেরও ইউজার ফি দিতে হচ্ছে, সমগ্র পরীক্ষার খরচও ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হচ্ছে। এ কারণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পূর্ববর্তী পিজি হাসপাতাল) এখন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার পরিবর্তে বিকেলে ২০০ টাকা ফি নিয়ে ডাক্তারদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে সামান্য যে সুযোগ-সুবিধা এখন গরিবদের জন্য আছে, সেটাও হরণ করার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ তো গেল রাজধানী শহর ঢাকার অবস্থা। গ্রামাঞ্চলের অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, সেখানে সামান্যতম চিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার নামে যা আছে তার সঙ্গে দোয়া-দরুদ ও জরি-বুটি দিয়ে চিকিৎসার কোনো পার্থক্য নেই।
দেশে এখন বেকারের সংখ্যা অগুনতি। যারা কাজ করে তাদের মজুরি ও বেতন প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। তারা প্রাণে বেঁচে থাকলেও তাদের দেহে পুষ্টি নেই এবং অপুষ্টিজনিত রোগে তারা সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। শিক্ষার অবস্থা শোচনীয়। প্রত্যেক বছরই গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোর পরীক্ষার ফলাফলের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয় তার থেকেও শিক্ষার অবস্থা বোঝা যায়। কোনো রকম বিনিয়োগের অভাবে এসব স্কুলে প্রায়ই পরীক্ষা দেওয়া সব ছাত্রই ফেল করে থাকে। যারা কোনোমতে পাস করে তাদের শিক্ষার মানও শোচনীয়। শহরের ব্যক্তিমালিকানাধীন বেসরকারি স্কুলগুলোতে বড় আকারের ভর্তি ফি ও বেতন নিয়ে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তার বাইরে অন্য স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান অতি নিম্ন।
বাংলাদেশে সমস্যার কি শেষ আছে? মানুষের জন্য করণীয় কাজ কি কিছু কম আছে? এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য এসব খাতে ব্যয় বরাদ্দ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজন কি কেউ অস্বীকার করতে পারেন? এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কর্তৃক লাখ লাখ কোটি টাকার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করা কি জনস্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? এর দ্বারা রাষ্ট্র ও সরকারের কোন মহল উপকৃত হচ্ছে এবং নিজেদের পকেট ভর্তি করছে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশের দাবি কি যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত নয়?
১৩.২.২০১২
বাংলাদেশ সরকার রাশিয়া থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে (আমার দেশ, ১৩.২.২০১২)। বাংলাদেশ শুধু রাশিয়া থেকেই যে অস্ত্র কিনছে তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, ব্রিটেন ইত্যাদি দেশ থেকেও বাংলাদেশ হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম কিনে থাকে। একটি দেশের সামরিক বাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনা দরকার হয়। কাজেই বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনা হচ্ছে, শুধু এটাই কোনো অস্বাভাবিক বা অসাধারণ ব্যাপার নয়। এ নিয়ে সমালোচনারও কিছু নেই। কিন্তু যখন দেখা যায়, প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরকার ক্রয় করছে, তখন এ বিষয়ে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং প্রতিবাদ না করে উপায় নেই।
প্রথমত, এ বিষয়টির দিকে লক্ষ্য করা দরকার যে, বাংলাদেশ তার স্থলভাগের তিন দিকই ভারত দ্বারা বেষ্টিত এবং দক্ষিণে সমুদ্রসীমাও ভারতীয় সমুদ্রসীমার সংলগ্ন। এ ছাড়া আছে উত্তরে নেপাল ও ভুটান এবং পূর্ব দিকে মিয়ানমার। ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের সব থেকে বড় বন্ধুদেশ। কাজেই তার বিরুদ্ধে বিশাল আকারের সমরসজ্জার কোনো প্রয়োজন আছে এটা মনে করার কারণ নেই। তাছাড়া ভারত সামরিকভাবে এতই শক্তিশালী যে, দৈবাৎ ভারতের সঙ্গে যদি বাংলাদেশের কোনো যুদ্ধ হয়, তাহলে বাংলাদেশকে সামরিকভাবে পরাজিত ও দমন করা ভারতের জন্য মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপার। নিজেকে সামরিকভাবে এমনভাবে শক্তিশালী করার কোনো সাফাই বাংলাদেশের নেই, যাতে এর কোনো অন্যথা হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব থেকে বিবেচনার বিষয় হলো, ভারত বাংলাদেশ আক্রমণ করে দখল করবে এ সম্ভাবনা সম্পূর্ণ শূন্য। ১৯৭১ সালের বিশেষ পরিস্থিতিতে যা ঘটেছিল এখন সেটা ঘটতে পারে এটা মনে করা বাস্তব জ্ঞান ও বুদ্ধির অপরিপকস্ফতা ছাড়া আর কী?
নেপাল, ভুটান এমনকি মিয়ানমারও বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এমনটি মনে করারও কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। সমুদ্রসীমা, তেলক্ষেত্রের দখল ইত্যাদি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বন্দ্ব থাকলেও এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে এ চিন্তা কোনো বুদ্ধিমান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ওয়াকিবহাল কোনো ব্যক্তিই করতে পারেন না।
তাহলে বাংলাদেশের এমন শত্রু কে, যার মোকাবেলা করা ও যার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশকে তার প্রয়োজনের থেকে বিশাল আকারে সামরিক বাহিনী রাখতে হবে, সামরিক বাহিনীর সংখ্যা সম্প্রসারণ করতে হবে এবং তাকে লাখ লাখ কোটি টাকার সমরসজ্জায় সজ্জিত করতে হবে? এসব প্রশ্ন কি বাংলাদেশের নাগরিকরা যথার্থভাবে উত্থাপন করতে পারেন না? এর জন্য কি তারা সরকারের কাছে এই বিপুল বিশাল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের লৌকিকতা দাবি করতে পারেন না?
ভারত বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। ভারত রাষ্ট্র বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কী ধরনের বন্ধু তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু ভারতের জনগণ যে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সাধারণ জনগণকে গুলিয়ে ফেলার মধ্যে জ্ঞানবুদ্ধির কোনো পরিচয় নেই। কিন্তু যুদ্ধের প্রশ্ন যখন আসে, তখন রাষ্ট্র পর্যায়ের সম্পর্কের কথাই বিশেষভাবে বিবেচনা করার কথা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধের প্রশ্ন এখন একেবারেই নেই। তাছাড়া যে দেশ নিজের সীমান্তে নিজের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা দিতেও অক্ষম, সে দেশ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করবে এটা তো ভাবাই যায় না। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে। এ নিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে, সরকারিভাবে কিছু প্রতিবাদও হচ্ছে, কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। উপরন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, সীমান্তে এইভাবে বাংলাদেশি নাগরিক নিধন চলবে!
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কোন প্রয়োজনে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়মিতভাবে কিনে চলেছে? এর দ্বারা কার স্বার্থ রক্ষিত ও পরিপুষ্ট হচ্ছে? জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে এই বিপুল ব্যয় কার কাজে লাগছে? সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে এই ব্যয় রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বে থাকা কোনো না কোনো মহলের স্বার্থ নিশ্চয় হাসিল করছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব যখন এই কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তখন এর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করার কোনো উপায় তো নেই।
লক্ষ্য ও বিবেচনা করার বিষয় যে, এই লাখ লাখ কোটি টাকা যখন সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার জন্য ব্যয় হচ্ছে তখন এ দেশের জনগণের বিপুল অধিকাংশের, গরিবদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেটুকু সামান্য ব্যবস্থা আছে সেটাও এখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে গরিবদেরও ইউজার ফি দিতে হচ্ছে, সমগ্র পরীক্ষার খরচও ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হচ্ছে। এ কারণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পূর্ববর্তী পিজি হাসপাতাল) এখন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার পরিবর্তে বিকেলে ২০০ টাকা ফি নিয়ে ডাক্তারদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে সামান্য যে সুযোগ-সুবিধা এখন গরিবদের জন্য আছে, সেটাও হরণ করার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ তো গেল রাজধানী শহর ঢাকার অবস্থা। গ্রামাঞ্চলের অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, সেখানে সামান্যতম চিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার নামে যা আছে তার সঙ্গে দোয়া-দরুদ ও জরি-বুটি দিয়ে চিকিৎসার কোনো পার্থক্য নেই।
দেশে এখন বেকারের সংখ্যা অগুনতি। যারা কাজ করে তাদের মজুরি ও বেতন প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। তারা প্রাণে বেঁচে থাকলেও তাদের দেহে পুষ্টি নেই এবং অপুষ্টিজনিত রোগে তারা সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। শিক্ষার অবস্থা শোচনীয়। প্রত্যেক বছরই গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোর পরীক্ষার ফলাফলের যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয় তার থেকেও শিক্ষার অবস্থা বোঝা যায়। কোনো রকম বিনিয়োগের অভাবে এসব স্কুলে প্রায়ই পরীক্ষা দেওয়া সব ছাত্রই ফেল করে থাকে। যারা কোনোমতে পাস করে তাদের শিক্ষার মানও শোচনীয়। শহরের ব্যক্তিমালিকানাধীন বেসরকারি স্কুলগুলোতে বড় আকারের ভর্তি ফি ও বেতন নিয়ে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তার বাইরে অন্য স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান অতি নিম্ন।
বাংলাদেশে সমস্যার কি শেষ আছে? মানুষের জন্য করণীয় কাজ কি কিছু কম আছে? এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য এসব খাতে ব্যয় বরাদ্দ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজন কি কেউ অস্বীকার করতে পারেন? এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কর্তৃক লাখ লাখ কোটি টাকার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করা কি জনস্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? এর দ্বারা রাষ্ট্র ও সরকারের কোন মহল উপকৃত হচ্ছে এবং নিজেদের পকেট ভর্তি করছে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশের দাবি কি যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত নয়?
১৩.২.২০১২
No comments