তরুণেরাই এখন ভরসা by জাহীদ রেজা নূর
গাড়ি দুটি যখন শহীদ মিনারের সামনে এসে থামল, তখন বেলা সাড়ে এগারোটা। আকাশ মেঘলা। যেন ভাষাসংগ্রামীদের প্রতি ছায়ার সুশীতল পরশ দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে প্রকৃতি। গাড়ি থেকে নামলেন ছয়জন—আবদুল মতিন, সাঈদ হায়দার, আহমদ রফিক, হালিমা খাতুন, মুর্তজা বশীর ও সুফিয়া আহমেদ।
ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর পর এখানে আবার তাঁরা একসঙ্গে। সে কথাই বললেন আহমদ রফিক, ‘ভালো লাগছে। ষাট বছর পর সহযাত্রী অনেককে কাছে পেয়ে ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক। এখানেই আমরা শুরু করেছিলাম, এখানেই ফিরে এলাম, তারপর কোথায় যাওয়া, জানা নেই।’
আশির বেশি বা কাছাকাছি বয়সের ছয়জন মানুষকে দেখে পথচারী কেউ কেউ থমকে দাঁড়ায়। অনুমান করার চেষ্টা করে তাঁদের পরিচয়। তারপর কাছে আসে। ছোট একটা নীরব জটলা সৃষ্টি হয় ভাষাসংগ্রামীদের সামনে। ভাষা মতিনের কাছেই আমাদের জানতে চাওয়া, ‘আপনাদের স্বপ্ন কত দূর সফল হয়েছে? কত দিন পর আপনারা একসঙ্গে হলেন?’
‘মাঝে মাঝে কারও কারও সঙ্গে দেখা হয়। মূলত এই ভাষার মাসে। তবে জনগণের সঙ্গে একাত্ম হওয়াটা জরুরি। সব আশা তো পূরণ হয় না। যা হয়, তা অতি সামান্য। এখন একটু একটু করে হলেও কিছু কাজ হচ্ছে, সেটুকুই সান্ত্বনা। না হলেই বা কী করতাম!’
একই প্রশ্নের জবাবে আহমদ রফিক বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪০ বছরে দেশের যে পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল, তার পুরোটা হয়নি, বলব, আংশিক পরিবর্তন হয়েছে। এখনকার যারা তরুণ, তাদের ওপর আমাদের ভরসা, তাদের ওপরই এই সামাজিক দায়বদ্ধতা, তারাই বাকি কাজটুকু করবে। এটাই আমার প্রত্যাশা।’
সুফিয়া আহমেদ বললেন, ‘৬০ বছর পর মনে হচ্ছে, আমাদের ভাগ্য ভালো, এখনো বেঁচে আছি। আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। দেখেছি, পড়াশোনার মান কমে যাচ্ছে।’
আলোচনাটি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দিকে মোড় নেয় কিছুক্ষণের জন্য। হালিমা খাতুনের কণ্ঠে যেন তারই ইঙ্গিত, ‘যখনই এখানে আসি, তখনই সেদিনের কথা মনে পড়ে। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছিলাম সেই সভায়। ‘চলো চলো অ্যাসেমব্লি চলো’ স্লোগানটা এখনো কানে লেগে রয়েছে। আমরা রাষ্ট্রভাষা পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। অনেক সম্পদের মালিক এখন আমরা। কিন্তু মনে হচ্ছে, মানুষের মধ্যে একুশের চেতনা সেভাবে নেই। রাজনীতি কলুষিত হয়ে গেছে, অর্থনীতিও অমাবস্যায় ঢেকে গেছে। এগুলো সুস্থ করতে হলে মানুষকে সুস্থ করতে হবে আগে। মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে একুশে ফেব্রুয়ারি আসবে-যাবে, অনেক অঙ্গীকার করা হবে, কিন্তু কাজ কিছুই হবে না।’
মুর্তজা বশীরের কণ্ঠেও কি হতাশার সুর? তিনি বলছেন, ‘আমি একাত্তর সাল পর্যন্ত শহীদ মিনারে আসতাম। এরপর আর আসি না। এখানে এলে মনে হয় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি। মনে হয়, এখানে ভাষাশহীদ বরকত-জব্বার-শফিকেরা আমার বিচার করছেন। যে কারণে তাঁরা আত্মোৎসর্গ করলেন, আমরা যে শপথ বা অঙ্গীকার করলাম, তা থেকে কতটা সরে গেছি, সেটা যখন মনে হয়, তখন নিজেকে কাপুরুষ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। যে কারণে তাঁরা জীবন দান করেছিলেন, সেই আর্থসামাজিক মুক্তি এখনো হয়নি।’
সাঈদ হায়দার অবশ্য অতটা নিরাশাবাদী নন। বললেন, ‘কিছু যে হয়নি, তা নয়। পাকিস্তান আমলেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে, তবে তা নামকাওয়াস্তে। দেশ স্বাধীন হওয়ার বীজ প্রোথিত হয়েছিল বায়ান্ন সালে। আন্দোলনের পর আন্দোলন করে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছি আমরা। তার পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। স্বাধীন হওয়ার পর সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বাংলা হয়েছিল। আমাদের আন্দোলনটা তো শুধু ভাষার আন্দোলনই ছিল না, তার সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারও ছিল। আজকের তরুণ আমাদের প্রশ্ন করে, একটা অস্থিরতার মধ্যে আমাদের রেখে চলে যাচ্ছেন? তাদের উত্তর দিই, আমরা কি তোমাদের কিছুই দিয়ে যাইনি?’
স্মৃতিতে একুশের অ্যালবাম
যে তরুণ-তরুণীরা এতক্ষণ একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিল, তারা এবার এগিয়ে আসে। একজন প্রশ্ন করে, ‘কোথায় গুলি চলেছিল, আপনারা কি একটু বলবেন?’
এবার তাঁরা যেন ফিরে যান ১৯৫২ সালে। স্মৃতিতে জমা হওয়া একুশের অ্যালবামটি খুলে ধরেন ওদের সামনে। সকালে আমতলার সভা, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার কথা বলেন।
সাঈদ হায়দার: বায়ান্ন সালে আন্দোলন যখন তুঙ্গ পর্যায়ে, তখন মেডিকেল ব্যারাক থেকেই আন্দোলন পরিচালনা করা হয়েছিল। চার একর জমির ওপর ২০টা ব্যারাক ছিল। প্রতিটা ব্যারাকে পাঁচটা করে ঘর ছিল, কোনোটায় ছয়টা করে।
আহমদ রফিক: বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় ছিল, মেডিকেল কোথায় ছিল, গণপরিষদ কোথায় ছিল, তার কি কোনো অস্তিত্ব আছে এখন? ফলক তৈরি করতে কয় টাকা লাগে?
সুফিয়া আহমেদ: আমরা তিন-চার বছর আগে সরকারকে বলেছি শহীদ মিনারকে সংরক্ষিত এলাকা করতে। জনগণ এখানে আসবে, কিন্তু তারও একটা নিয়ম থাকবে। এটা কিন্তু পবিত্র স্থান।
আহমদ রফিক: শোনো, গুলি কোথায় হয়েছিল এই বরাবর যদি তাকাও, তাহলে দেখবে রাস্তার দুপাশেই ব্যারাক ছিল। তিনি হাত দিয়ে দেখান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের দিকে। বলেন, ‘গেট দিয়ে ঢুকতেই ১২ নম্বর ব্যারাক ছিল ডান দিকে। তার সামনে বরকত গুলিবিদ্ধ হন। লম্বালম্বি এই দিকটায় ছিল ২০ নম্বর ব্যারাক, এর সামনে আবদুল জব্বার গুলিবিদ্ধ হন। আরেকটু সামনে এখন যে মেডিকেল গেটটা, এর মাঝামাঝি জায়গায় ১৪ নম্বর ব্যারাকের সামনে রফিকের শরীরে গুলি লাগে। তারও সামনে ৬ নম্বর ব্যারাকের কাছে সালাম গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হন। এখানে দুটি রাস্তা ছিল—সেক্রেটারিয়েট রোড আর ফুলার রোড। এখনকার জগন্নাথ হলের জায়গাটায় ছিল পরিষদ ভবন।’
সুফিয়া আহমেদ: এখন যেটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, সেখানেই ছিল আমতলা। সেই গেটেই ব্যারিকেড ছিল। সেখান দিয়েই আমরা বের হয়েছিলাম। সেখানে এখনো ফলক নেই।
সাঈদ হায়দার: হামিদুর রহমান যে পরিকল্পনাটি করেছিলেন, সেই পরিকল্পনায় অনেক কিছু ছিল। একটা জাদুঘরও ছিল। কিন্তু সেটা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
যোগসূত্রের সন্ধানে
আবদুল মতিন: আমরা এখনকার তরুণদের জানি না, তারাও আমাদের জানে না। আমাদের মধ্যে যোগসূত্র নেই।
হালিমা খাতুন: ইতিবাচক চেষ্টাটা থাকতেই হবে। তরুণদের ক্লাস নেওয়ার সময় সেই ইতিবাচক দিকগুলো জানাতে হবে। সেভাবেই সমাজটাকে গড়ে তুলতে হবে। ওদের শেখাতে হবে। যিনি শেখাবেন, তাঁকেও শেখাতে হবে।
মুর্তজা বশীর: বাঙালি জাতির অহংকারকে আমরা শিক্ষার বিষয় করে তুলিনি। আমাদের পাঠ্যক্রমেও জাতির অহংকার নিয়ে লেখা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল শিশুরা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে জানবে।
সময় গড়িয়ে যেতে থাকে। ফাগুনের লাল পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ায় বাতাস এসে দোল দিয়ে যায়। একটু একটু বৃষ্টি শুরু হয়। উপস্থিত তরুণদের কাছ থেকে বিদায় নেন ভাষাসংগ্রামীরা। এবার তাঁদের চলার পথ সহজ করে দিতে এই তরুণদেরই কেউ কেউ তাঁদের হাত ধরে। ভাষাসংগ্রামীদের একজন বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই।’
ওরা বলে, ‘আসলে আমরা আপনাদের একটু স্পর্শ চাই। স্পর্শ।’
এভাবেই বুঝি তৈরি হয় যোগসূত্র।
‘মাঝে মাঝে কারও কারও সঙ্গে দেখা হয়। মূলত এই ভাষার মাসে। তবে জনগণের সঙ্গে একাত্ম হওয়াটা জরুরি। সব আশা তো পূরণ হয় না। যা হয়, তা অতি সামান্য। এখন একটু একটু করে হলেও কিছু কাজ হচ্ছে, সেটুকুই সান্ত্বনা। না হলেই বা কী করতাম!’
একই প্রশ্নের জবাবে আহমদ রফিক বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪০ বছরে দেশের যে পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল, তার পুরোটা হয়নি, বলব, আংশিক পরিবর্তন হয়েছে। এখনকার যারা তরুণ, তাদের ওপর আমাদের ভরসা, তাদের ওপরই এই সামাজিক দায়বদ্ধতা, তারাই বাকি কাজটুকু করবে। এটাই আমার প্রত্যাশা।’
সুফিয়া আহমেদ বললেন, ‘৬০ বছর পর মনে হচ্ছে, আমাদের ভাগ্য ভালো, এখনো বেঁচে আছি। আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। দেখেছি, পড়াশোনার মান কমে যাচ্ছে।’
আলোচনাটি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দিকে মোড় নেয় কিছুক্ষণের জন্য। হালিমা খাতুনের কণ্ঠে যেন তারই ইঙ্গিত, ‘যখনই এখানে আসি, তখনই সেদিনের কথা মনে পড়ে। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছিলাম সেই সভায়। ‘চলো চলো অ্যাসেমব্লি চলো’ স্লোগানটা এখনো কানে লেগে রয়েছে। আমরা রাষ্ট্রভাষা পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। অনেক সম্পদের মালিক এখন আমরা। কিন্তু মনে হচ্ছে, মানুষের মধ্যে একুশের চেতনা সেভাবে নেই। রাজনীতি কলুষিত হয়ে গেছে, অর্থনীতিও অমাবস্যায় ঢেকে গেছে। এগুলো সুস্থ করতে হলে মানুষকে সুস্থ করতে হবে আগে। মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে একুশে ফেব্রুয়ারি আসবে-যাবে, অনেক অঙ্গীকার করা হবে, কিন্তু কাজ কিছুই হবে না।’
মুর্তজা বশীরের কণ্ঠেও কি হতাশার সুর? তিনি বলছেন, ‘আমি একাত্তর সাল পর্যন্ত শহীদ মিনারে আসতাম। এরপর আর আসি না। এখানে এলে মনে হয় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি। মনে হয়, এখানে ভাষাশহীদ বরকত-জব্বার-শফিকেরা আমার বিচার করছেন। যে কারণে তাঁরা আত্মোৎসর্গ করলেন, আমরা যে শপথ বা অঙ্গীকার করলাম, তা থেকে কতটা সরে গেছি, সেটা যখন মনে হয়, তখন নিজেকে কাপুরুষ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। যে কারণে তাঁরা জীবন দান করেছিলেন, সেই আর্থসামাজিক মুক্তি এখনো হয়নি।’
সাঈদ হায়দার অবশ্য অতটা নিরাশাবাদী নন। বললেন, ‘কিছু যে হয়নি, তা নয়। পাকিস্তান আমলেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে, তবে তা নামকাওয়াস্তে। দেশ স্বাধীন হওয়ার বীজ প্রোথিত হয়েছিল বায়ান্ন সালে। আন্দোলনের পর আন্দোলন করে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছি আমরা। তার পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। স্বাধীন হওয়ার পর সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বাংলা হয়েছিল। আমাদের আন্দোলনটা তো শুধু ভাষার আন্দোলনই ছিল না, তার সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারও ছিল। আজকের তরুণ আমাদের প্রশ্ন করে, একটা অস্থিরতার মধ্যে আমাদের রেখে চলে যাচ্ছেন? তাদের উত্তর দিই, আমরা কি তোমাদের কিছুই দিয়ে যাইনি?’
স্মৃতিতে একুশের অ্যালবাম
যে তরুণ-তরুণীরা এতক্ষণ একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিল, তারা এবার এগিয়ে আসে। একজন প্রশ্ন করে, ‘কোথায় গুলি চলেছিল, আপনারা কি একটু বলবেন?’
এবার তাঁরা যেন ফিরে যান ১৯৫২ সালে। স্মৃতিতে জমা হওয়া একুশের অ্যালবামটি খুলে ধরেন ওদের সামনে। সকালে আমতলার সভা, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার কথা বলেন।
সাঈদ হায়দার: বায়ান্ন সালে আন্দোলন যখন তুঙ্গ পর্যায়ে, তখন মেডিকেল ব্যারাক থেকেই আন্দোলন পরিচালনা করা হয়েছিল। চার একর জমির ওপর ২০টা ব্যারাক ছিল। প্রতিটা ব্যারাকে পাঁচটা করে ঘর ছিল, কোনোটায় ছয়টা করে।
আহমদ রফিক: বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় ছিল, মেডিকেল কোথায় ছিল, গণপরিষদ কোথায় ছিল, তার কি কোনো অস্তিত্ব আছে এখন? ফলক তৈরি করতে কয় টাকা লাগে?
সুফিয়া আহমেদ: আমরা তিন-চার বছর আগে সরকারকে বলেছি শহীদ মিনারকে সংরক্ষিত এলাকা করতে। জনগণ এখানে আসবে, কিন্তু তারও একটা নিয়ম থাকবে। এটা কিন্তু পবিত্র স্থান।
আহমদ রফিক: শোনো, গুলি কোথায় হয়েছিল এই বরাবর যদি তাকাও, তাহলে দেখবে রাস্তার দুপাশেই ব্যারাক ছিল। তিনি হাত দিয়ে দেখান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের দিকে। বলেন, ‘গেট দিয়ে ঢুকতেই ১২ নম্বর ব্যারাক ছিল ডান দিকে। তার সামনে বরকত গুলিবিদ্ধ হন। লম্বালম্বি এই দিকটায় ছিল ২০ নম্বর ব্যারাক, এর সামনে আবদুল জব্বার গুলিবিদ্ধ হন। আরেকটু সামনে এখন যে মেডিকেল গেটটা, এর মাঝামাঝি জায়গায় ১৪ নম্বর ব্যারাকের সামনে রফিকের শরীরে গুলি লাগে। তারও সামনে ৬ নম্বর ব্যারাকের কাছে সালাম গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হন। এখানে দুটি রাস্তা ছিল—সেক্রেটারিয়েট রোড আর ফুলার রোড। এখনকার জগন্নাথ হলের জায়গাটায় ছিল পরিষদ ভবন।’
সুফিয়া আহমেদ: এখন যেটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, সেখানেই ছিল আমতলা। সেই গেটেই ব্যারিকেড ছিল। সেখান দিয়েই আমরা বের হয়েছিলাম। সেখানে এখনো ফলক নেই।
সাঈদ হায়দার: হামিদুর রহমান যে পরিকল্পনাটি করেছিলেন, সেই পরিকল্পনায় অনেক কিছু ছিল। একটা জাদুঘরও ছিল। কিন্তু সেটা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
যোগসূত্রের সন্ধানে
আবদুল মতিন: আমরা এখনকার তরুণদের জানি না, তারাও আমাদের জানে না। আমাদের মধ্যে যোগসূত্র নেই।
হালিমা খাতুন: ইতিবাচক চেষ্টাটা থাকতেই হবে। তরুণদের ক্লাস নেওয়ার সময় সেই ইতিবাচক দিকগুলো জানাতে হবে। সেভাবেই সমাজটাকে গড়ে তুলতে হবে। ওদের শেখাতে হবে। যিনি শেখাবেন, তাঁকেও শেখাতে হবে।
মুর্তজা বশীর: বাঙালি জাতির অহংকারকে আমরা শিক্ষার বিষয় করে তুলিনি। আমাদের পাঠ্যক্রমেও জাতির অহংকার নিয়ে লেখা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল শিশুরা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে জানবে।
সময় গড়িয়ে যেতে থাকে। ফাগুনের লাল পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ায় বাতাস এসে দোল দিয়ে যায়। একটু একটু বৃষ্টি শুরু হয়। উপস্থিত তরুণদের কাছ থেকে বিদায় নেন ভাষাসংগ্রামীরা। এবার তাঁদের চলার পথ সহজ করে দিতে এই তরুণদেরই কেউ কেউ তাঁদের হাত ধরে। ভাষাসংগ্রামীদের একজন বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই।’
ওরা বলে, ‘আসলে আমরা আপনাদের একটু স্পর্শ চাই। স্পর্শ।’
এভাবেই বুঝি তৈরি হয় যোগসূত্র।
No comments