রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-সেবার মান ও দক্ষতা বাড়াতেই হবে
মাত্র তিন দশক আগেও বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবার একক নিয়ন্তা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। লাখ লাখ আমানতকারী অর্থ জমা করত এসব ব্যাংকে। ঋণগ্রহীতাদেরও বিকল্প ছিল না। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় তিন লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে মাত্র এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে, যা মোট আমানতের এক-তৃতীয়াংশ। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ আমানত জমা রয়েছে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে। ওই সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ-অগ্রিম দিয়েছে প্রায় দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত সরকারি ব্যাংকের হিস্যা ছিল প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। সহজ কথায় বলা যায়, 'রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, তোমার দিন গিয়াছে।' এ অবস্থার পরিবর্তন কি সম্ভব?
চার দশক আগে স্বাধীন দেশের যাত্রার সূচনা থেকেই বিদেশি ব্যাংকের অস্তিত্ব ছিল। এখন তার সংখ্যা বেড়েছে, ব্যবসাও তাদের রমরমা। মুনাফার হার কখনও কখনও অকল্পনীয় মাত্রায় পেঁৗছায়। দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় তাদের আমানতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু দক্ষতা ও সেবা দিয়ে তারা আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাদের মন জয় করেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোও শুরু থেকেই বিদেশি ব্যাংকগুলোকে সেবার মানের মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং দ্রুতই এর সুফল ঘরে তুলতে পারছে। মাত্র তিন দশকে মোট আমানতের ৬৫ শতাংশের বেশি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার তথ্য তারই সাক্ষ্য দেয়। সরকারি ব্যাংকগুলোকে এ থেকে শিক্ষা নিতেই হবে। তাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে অতিমাত্রায় খবরদারি তাদের স্বাধীন উদ্যোগ ব্যাহত করে। সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারকেও প্রাধান্য দিতে হয়। যেমন, কৃষি খাতে ঋণ প্রদান। এক সময় লোকসানি সরকারি শিল্প ও বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসব ব্যাংক আদায়ের নিশ্চয়তা না থাকার পরও ঢালাও ঋণ দিয়েছে। বেসরকারি খাতের অনেক উদ্যোক্তারও এ মনোভাব ছিল যে, সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দিলেও চলে। ফলে খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো। এ অনাদায়ী ঋণ রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে। কিন্তু এখন তো তাদের অস্তিত্বের সংকট। তাদের ব্যবসার প্রধান উৎস চলে গেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে। তা উদ্ধার করতে হলে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতার আস্থা বাড়াতে হবে সর্বাগ্রে। এ জন্য মনোযোগ দিতে হবে সেবার মানের প্রতি। তাদের জন্য সুবিধার দিক হচ্ছে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা শত শত শাখা। সরকারের এক ধরনের গ্যারান্টি সুবিধাও তারা ভোগ করে। জনসাধারণের ধারণা, সরকারি ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রাখা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। কিন্তু আধুনিক যুগের নাগরিকদের ব্যাংক থেকে অনেক ধরনের সেবা গ্রহণ করতে হয়। এ জন্য উত্তম সেবা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে একদিকে চাই দক্ষ জনশক্তি, অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। দক্ষ জনশক্তি পেতে হলে তাদের প্রতিযোগিতায় নামতে হয় বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে। এতে জয়ী হওয়ার একটিই শর্ত_ আকর্ষণীয় বেতন ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা। একটা সময় ছিল যখন সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রবল। বেতন-ভাতার পরিমাণের চেয়েও জোর পড়ত মাসের শেষে নিশ্চিত বেতন পাওয়ার ওপর। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। বেসরকারি খাতই হয়ে উঠেছে অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের প্রয়োজনেই বেসরকারি ব্যাংকিং খাত নিজের শক্তি-সামর্থ্য বাড়িয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে, অর্থনীতির জন্য সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোরও শক্তিশালী অবস্থান অপরিহার্য। এ বিষয়টি সরকারকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তাদের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে এবং জোর দিতে হবে পেশাদারিত্বের ওপর। অন্যথায় সরকারি ব্যাংকগুলো আরও প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যেতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে কেবল ট্রেজারি ফাংশনের মতো কিছু কার্যক্রমের মধ্যে নিজেদের গুটিতে নিতে বাধ্য হবে। অর্থনীতির স্বার্থে এমন পরিস্থিতি কাম্য।
চার দশক আগে স্বাধীন দেশের যাত্রার সূচনা থেকেই বিদেশি ব্যাংকের অস্তিত্ব ছিল। এখন তার সংখ্যা বেড়েছে, ব্যবসাও তাদের রমরমা। মুনাফার হার কখনও কখনও অকল্পনীয় মাত্রায় পেঁৗছায়। দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় তাদের আমানতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু দক্ষতা ও সেবা দিয়ে তারা আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাদের মন জয় করেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোও শুরু থেকেই বিদেশি ব্যাংকগুলোকে সেবার মানের মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং দ্রুতই এর সুফল ঘরে তুলতে পারছে। মাত্র তিন দশকে মোট আমানতের ৬৫ শতাংশের বেশি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার তথ্য তারই সাক্ষ্য দেয়। সরকারি ব্যাংকগুলোকে এ থেকে শিক্ষা নিতেই হবে। তাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে অতিমাত্রায় খবরদারি তাদের স্বাধীন উদ্যোগ ব্যাহত করে। সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারকেও প্রাধান্য দিতে হয়। যেমন, কৃষি খাতে ঋণ প্রদান। এক সময় লোকসানি সরকারি শিল্প ও বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসব ব্যাংক আদায়ের নিশ্চয়তা না থাকার পরও ঢালাও ঋণ দিয়েছে। বেসরকারি খাতের অনেক উদ্যোক্তারও এ মনোভাব ছিল যে, সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দিলেও চলে। ফলে খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো। এ অনাদায়ী ঋণ রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে। কিন্তু এখন তো তাদের অস্তিত্বের সংকট। তাদের ব্যবসার প্রধান উৎস চলে গেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে। তা উদ্ধার করতে হলে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতার আস্থা বাড়াতে হবে সর্বাগ্রে। এ জন্য মনোযোগ দিতে হবে সেবার মানের প্রতি। তাদের জন্য সুবিধার দিক হচ্ছে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা শত শত শাখা। সরকারের এক ধরনের গ্যারান্টি সুবিধাও তারা ভোগ করে। জনসাধারণের ধারণা, সরকারি ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রাখা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। কিন্তু আধুনিক যুগের নাগরিকদের ব্যাংক থেকে অনেক ধরনের সেবা গ্রহণ করতে হয়। এ জন্য উত্তম সেবা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে একদিকে চাই দক্ষ জনশক্তি, অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। দক্ষ জনশক্তি পেতে হলে তাদের প্রতিযোগিতায় নামতে হয় বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে। এতে জয়ী হওয়ার একটিই শর্ত_ আকর্ষণীয় বেতন ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা। একটা সময় ছিল যখন সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রবল। বেতন-ভাতার পরিমাণের চেয়েও জোর পড়ত মাসের শেষে নিশ্চিত বেতন পাওয়ার ওপর। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। বেসরকারি খাতই হয়ে উঠেছে অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের প্রয়োজনেই বেসরকারি ব্যাংকিং খাত নিজের শক্তি-সামর্থ্য বাড়িয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে, অর্থনীতির জন্য সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোরও শক্তিশালী অবস্থান অপরিহার্য। এ বিষয়টি সরকারকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তাদের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে এবং জোর দিতে হবে পেশাদারিত্বের ওপর। অন্যথায় সরকারি ব্যাংকগুলো আরও প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যেতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে কেবল ট্রেজারি ফাংশনের মতো কিছু কার্যক্রমের মধ্যে নিজেদের গুটিতে নিতে বাধ্য হবে। অর্থনীতির স্বার্থে এমন পরিস্থিতি কাম্য।
No comments