ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের পরিবারে বড়ই দুর্দিন
ষাট বছর আগে এক বসন্ত দিনে বাহান্নর মহান ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন। জেলে গিয়েছিলেন ভাষার জন্য আন্দোলন করে। আর সেই দ্রোহের উত্তাপ নিয়ে সগর্বে বেঁচে ছিলেন শেষ দিন পর্যন্ত। নিদারুণ আর্থিক অনটনে দিনাতিপাত করা সত্ত্বেও কোনো নীতিচ্যুত হননি এ মহান এ ভাষা সৈনিককে।
প্রচণ্ড আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন এ অভিমানী মানুষটি আজ আর আমাদের মঝে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়।
তবে ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের উত্তর-পুরুষদের সংসারে এখন বড়ই দুর্দিন।
প্রচ- আর্থিক অনটন আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত তার সাত সদস্যের পরিবার। আবুল হোসেনের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৬) দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার পথচলায়। দুর্ভাগ্য এ জাতির, তাদের খবর আজ আর কেউ রাখে না।
উত্তাল বাহান্ন। আবুল হোসেন তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। ২৪ ফেব্রুয়ারি চাটমোহর হাইস্কুলের কদমতলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মথুরাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ভাষা আন্দোলনের নেতা আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পাবনা জেলহাজতে দেড় মাস এবং রাজশাহী কারাগারে ১৫ দিন আটক থাকার পর মুক্তি পেয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য গ্রাম্য চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি একটি ভাঙা সাইকেলে চড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষের চিকিৎসা করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এজন্য তিনি এলাকায় নামকরা গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
দীর্ঘ ৩৭ বছর গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে সংসার চালিয়েছেন। ১৯৮৯ সালে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী হন আবুল হোসেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর তার বড় ছেলে আব্দুল আজিজ সংসারের হাল ধরেন।
আজিজ তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। সংসারের বোঝা মাথায় নেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া। কী করবেন ভেবে না পেয়ে পিতার পেশা গ্রাম্য চিকিৎসাকেই বেছে নেন।
পক্ষাগাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকা আবুল হোসেন ছেলে আজিজকে গ্রাম্য চিকিৎসা ও কবিরাজী ওষুধ তৈরির পদ্ধতি হাতেকলমে শিখিয়ে দেন।
কিছুটা সুস্থ হয়ে হাঁটাচলা শুরু করেন তিনি। কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আত্মঅভিমানী এ মানুষটি ৬৮ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
পিতার মৃত্যুর পর থেকে আব্দুল আজিজই হাল ধরেছেন সংসারের। চালিয়ে নিচ্ছেন কোনোমতে। এখন তাদের নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের মৃত্যুর পর সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি তার পরিবারের।
আবুল হোসেনের ৬ ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলে আক্তার হোসেন (৪৫) ও ডাবলু হোসেন (৪০) বিয়ে করার পর থেকে আলাদা সংসার করছেন।
তিন মেয়ের মধ্যে আকলিমা খাতুন ও আনোয়ারা খাতুনকে আবুল হোসেন মৃত্যুর অনেক আগেই বিয়ে দিয়ে দেন। তার মৃত্যুর পর ছোট মেয়ে মমতা খাতুনকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়।
অপর চার সন্তানের মধ্যে আব্দুল আজিজ (৩৩) বিভিন্ন খুচরা ব্যবসা করে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া আব্দুল আলিম (২৬) ঢাকায় এক কাপড়ের দোকানে কর্মচারী ও আরিফ (২০) ভ্যানচালক। ছোটছেলে আজিম (১৫) ঢাকার একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করে।
সম্প্রতি ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের বাড়ি চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় দু’টি দোচালা ভাঙা ঘরে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে তাদের বসবাস।
আলাপকালে তার স্ত্রী মোমেনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের খবর আর কে রাখে বাবা। ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন মরে গেছে, সেই সাথে আমরাও মরেছি। সরকারের পক্ষ থেকে কখনো কোনো খোঁজ খবর নেয় না। এ কথা কাকে বলবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাথা গোঁজার মতো একটা ভালো ঘর নাই। একটু বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা যায় না। ঝড়-বৃষ্টিতে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয় আমাদের। দুই ছেলের সামান্য আয়ে সাত সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাবার অবদানকে সবাই ভুলে গেছে। আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। বর্তমান সরকার যদি একটু সুদৃষ্টি দিয়ে আমার ছোটভাই আলিম অথবা আরিফকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে সংসারটার একটা কুল-কিনারা হতো। বাবার আত্মাও শান্তি পেতো।’
ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন সারা জীবন এলাকার মানুষের নানা সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের কাছে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন। কিন্তু ভুলেও নিজের অভাব অনটনের কথা কাউকে কখনও বলেননি। কেউ জানতেও চায়নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো সরকারই তার কোনো খোঁজ নেয়নি। তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনি।
চাটমোহরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিশির কুমার রায় ও নির্ঝর সাংস্কৃতিক সংগঠন তাকে সংবর্ধনা ও কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছিল বলে জানা যায়।
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাহলে কি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের কোনো মূল্য নেই ? প্রাপ্য সম্মানটুকু তিনি বেঁচে থাকতে পাননি।’
চাটমোহরের একমাত্র জীবিত ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট গৌর চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেইতো এসেছিল স্বাধীনতা। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু আবুল হোসেনের মতো ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করা হয় না।’
তিনি আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘মৃত্যুর পরও কি তিনি তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাবেন না?’
তবে ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের উত্তর-পুরুষদের সংসারে এখন বড়ই দুর্দিন।
প্রচ- আর্থিক অনটন আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত তার সাত সদস্যের পরিবার। আবুল হোসেনের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৬) দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার পথচলায়। দুর্ভাগ্য এ জাতির, তাদের খবর আজ আর কেউ রাখে না।
উত্তাল বাহান্ন। আবুল হোসেন তখন দশম শ্রেণির ছাত্র। ২৪ ফেব্রুয়ারি চাটমোহর হাইস্কুলের কদমতলায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মথুরাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ভাষা আন্দোলনের নেতা আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পাবনা জেলহাজতে দেড় মাস এবং রাজশাহী কারাগারে ১৫ দিন আটক থাকার পর মুক্তি পেয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য গ্রাম্য চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি একটি ভাঙা সাইকেলে চড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষের চিকিৎসা করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এজন্য তিনি এলাকায় নামকরা গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
দীর্ঘ ৩৭ বছর গ্রাম্য চিকিৎসক হিসেবে সংসার চালিয়েছেন। ১৯৮৯ সালে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী হন আবুল হোসেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর তার বড় ছেলে আব্দুল আজিজ সংসারের হাল ধরেন।
আজিজ তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র। সংসারের বোঝা মাথায় নেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় তার লেখাপড়া। কী করবেন ভেবে না পেয়ে পিতার পেশা গ্রাম্য চিকিৎসাকেই বেছে নেন।
পক্ষাগাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকা আবুল হোসেন ছেলে আজিজকে গ্রাম্য চিকিৎসা ও কবিরাজী ওষুধ তৈরির পদ্ধতি হাতেকলমে শিখিয়ে দেন।
কিছুটা সুস্থ হয়ে হাঁটাচলা শুরু করেন তিনি। কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আত্মঅভিমানী এ মানুষটি ৬৮ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
পিতার মৃত্যুর পর থেকে আব্দুল আজিজই হাল ধরেছেন সংসারের। চালিয়ে নিচ্ছেন কোনোমতে। এখন তাদের নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের মৃত্যুর পর সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি তার পরিবারের।
আবুল হোসেনের ৬ ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলে আক্তার হোসেন (৪৫) ও ডাবলু হোসেন (৪০) বিয়ে করার পর থেকে আলাদা সংসার করছেন।
তিন মেয়ের মধ্যে আকলিমা খাতুন ও আনোয়ারা খাতুনকে আবুল হোসেন মৃত্যুর অনেক আগেই বিয়ে দিয়ে দেন। তার মৃত্যুর পর ছোট মেয়ে মমতা খাতুনকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়।
অপর চার সন্তানের মধ্যে আব্দুল আজিজ (৩৩) বিভিন্ন খুচরা ব্যবসা করে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া আব্দুল আলিম (২৬) ঢাকায় এক কাপড়ের দোকানে কর্মচারী ও আরিফ (২০) ভ্যানচালক। ছোটছেলে আজিম (১৫) ঢাকার একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করে।
সম্প্রতি ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের বাড়ি চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় দু’টি দোচালা ভাঙা ঘরে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে তাদের বসবাস।
আলাপকালে তার স্ত্রী মোমেনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের খবর আর কে রাখে বাবা। ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন মরে গেছে, সেই সাথে আমরাও মরেছি। সরকারের পক্ষ থেকে কখনো কোনো খোঁজ খবর নেয় না। এ কথা কাকে বলবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাথা গোঁজার মতো একটা ভালো ঘর নাই। একটু বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা যায় না। ঝড়-বৃষ্টিতে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয় আমাদের। দুই ছেলের সামান্য আয়ে সাত সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাবার অবদানকে সবাই ভুলে গেছে। আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। বর্তমান সরকার যদি একটু সুদৃষ্টি দিয়ে আমার ছোটভাই আলিম অথবা আরিফকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে সংসারটার একটা কুল-কিনারা হতো। বাবার আত্মাও শান্তি পেতো।’
ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন সারা জীবন এলাকার মানুষের নানা সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের কাছে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন। কিন্তু ভুলেও নিজের অভাব অনটনের কথা কাউকে কখনও বলেননি। কেউ জানতেও চায়নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো সরকারই তার কোনো খোঁজ নেয়নি। তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনি।
চাটমোহরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিশির কুমার রায় ও নির্ঝর সাংস্কৃতিক সংগঠন তাকে সংবর্ধনা ও কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছিল বলে জানা যায়।
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাহলে কি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ভাষা সৈনিক আবুল হোসেনের কোনো মূল্য নেই ? প্রাপ্য সম্মানটুকু তিনি বেঁচে থাকতে পাননি।’
চাটমোহরের একমাত্র জীবিত ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট গৌর চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেইতো এসেছিল স্বাধীনতা। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু আবুল হোসেনের মতো ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করা হয় না।’
তিনি আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘মৃত্যুর পরও কি তিনি তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাবেন না?’
No comments