প্রমিত বাংলা ভাষা হুমকির মুখে by ফজলে রাব্বী খান মামুন
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি?...।' আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কথা ও আলতাফ মাহমুদের সুরে সৃষ্ট এই গানই আমাদের মনে করিয়ে দেয় একুশে ফেব্রুয়ারি তথা ভাষা আন্দোলনের কথা, মনে করিয়ে দেয় সালাম রফিক, জব্বারদের মতো বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কথা, যাঁরা প্রাণ হাতে আন্দোলন করেছিলেন বাংলা ভাষার জন্য, তাঁদের এই জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়েই আমরা ফিরে পাই বাংলায় কথা বলার অধিকার।
এই শহীদদের সম্মানে স্থাপন করি শহীদ মীনার, প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমরা খালি পায়ে শহীদ মিনারে যাই ফুল দিতে। তাঁদের অপরিমেয় উৎসর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে, কিন্তু কালের পরিক্রমায় এই সংস্কৃতি এখন বদলে যাচ্ছে, যার প্রতিফলন সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় তরুণ সমাজের মধ্যে।
যাহোক ভাষা পরিবর্তনশীল। যুগে যুগে ভাষা লোকমুখে ব্যবহারের ফলে এর পরিবর্তন আসতে থাকে। তাই ভাষা সংরক্ষণ করা জরুরি। এর সঙ্গে কিভাবে এর সমৃদ্ধি ঘটানো যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি। ফলে ভাষা সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজন ভাষাসংক্রান্ত বই গ্রন্থাগারে সংরক্ষণের পাশাপাশি স্কুলের প্রাইমারি শাখা থেকেই ধীরে ধীরে এর সঠিক প্রচলন ও চর্চা সুনিশ্চিত করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো বড় বড় সাহিত্যিক যাঁরা বাংলা ভাষার পথিকৃৎ, তাঁদের লেখার সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিতে হবে স্কুলজীবন থেকেই।
যাতে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি এসব বই পড়ে তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে, যাতে বাংলা ভাষা শুধু বইয়ের পাতাতেই নয়, মানুষের অন্তরেও বিদ্যমান থাকে যুগ যুগ ধরে।
স্বাধীনতা অর্জন করা থেকে যেমন স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন, ঠিক তেমনি আমাদের বাংলা ভাষা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বাংলা ভাষাকে বহু কষ্টে অর্জন করেছি এটি যেমন সত্য, আমরা তার মান-মর্যাদা রক্ষা করতে পারছি না এটিও তেমন সত্য। ধীরে ধীরে এর মান কমছে। দেখা যায়, বন্ধুরা এক হলেই যে ভাষায় যেভাবে কথা বলে, তাতে করে মনে হয় প্রমিত বাংলা আজ বুঝি বিলুপ্তির পথে। আগে শুধু বন্ধুদের সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলত, এখন প্রায় সব জায়গায় এভাবে কথা বলে থাকে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান যে কারণ সেটি হল, বর্তমানে প্রচলিত কিছু ধারাবাহিক এমনকি কিছু এক ঘণ্টার নাটক। এসব নাটকে দর্শক আকর্ষণ করতে ভাষার যে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে, তাতে প্রমিত বাংলা আসলেই হুমকির মুখে পড়েছে।
তাই বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে সরকার ও গণমাধ্যম অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ভাষার সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, যেমন_স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভাষা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। এভাবে একে একে বিভিন্ন জেলায় জেলায় এ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারে। এতে পুরস্কার বিতরণীর ব্যবস্থা থাকলে সবাই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হবে। গণমাধ্যমগুলোর উচিত বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও চর্চার ওপর বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বজায় রাখা। বিশেষ করে সেসব অনুষ্ঠান, যেমন_নাটক, যেগুলো অনেক মানুষকে একসঙ্গে প্রভাবিত করতে পারে, সেসব অনুষ্ঠানে সঠিক বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, যেগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে, তাদের ভাষাও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এখানেও সরকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকা থাকতে পারে, তবে শুধু সরকার ও গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর না করে একেবারে ব্যক্তিপর্যায় থেকেই গবেষণার মাধ্যমে ভাষা সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
যেসব কারণে বাংলা ভাষা আজ হুমকির মুখে, তার অন্যতম কারণ হলো, বিদেশি ভাষার প্রভাব। আর এটা হচ্ছে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে। স্টার প্লাস, সনি টিভি, জিটিবির মতো হিন্দি চ্যানেলগুলোতে প্রতিনিয়ত যে হিন্দি সিরিয়াল হচ্ছে, শুধু সিরিয়ালগুলোই অনেক বড় কারণ হতে পারে বাঙালি নারী সমাজের বাংলা ভাষাকে প্রভাবিত করতে আর তাই হচ্ছে। প্রতিনিয়ত হিন্দি সিরিয়াল দেখতে দেখতে তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ফলে হিন্দি ভাষায় দক্ষ বা পরিচিতি থাকার কারণে অনেক সময় বাংলা বলতে গিয়েও হিন্দি ভাষা ব্যবহার করছে। শুধু যে নারী সমাজই এভাবে প্রভাবিত হচ্ছে তা নয়, যারাই প্রতিনিয়ত দেখছে তারাই এভাবে হিন্দি ভাষায় প্রভাবিত হচ্ছে।
ছোটদের কার্টুনের ক্ষেত্রেও অনেকটা এ রকম ঘটনা ঘটছে। জাপানিজ একটি কার্টুন 'Doremon', যেটা বর্তমানে হিন্দিতে অনুবাদ করে প্রচারিত হচ্ছে, ইদানীং বাচ্চারা এই কার্টুনের প্রতি ঝুঁকে গেছে। যাকেই জিজ্ঞেস করা হয় তারই প্রিয় কার্টুন এটি। ফলে বাচ্চারা এই কার্টুনের পাশাপাশি হিন্দি ভাষার প্রতিও গভীরভাবে ঝুঁকে যাচ্ছে। ফলে সব কিছু মিলিয়ে বাংলা ভাষা বিভিন্নভাবে বিদেশি ভাষা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
পরিশেষে বলতে হয়, যেখানে পুরো বিশ্বে জনসংখ্যার দিক দিয়ে প্রথম পাঁচটি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা অন্যতম, সেখানে এর আন্তর্জাতিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষা শিক্ষা, বাংলা সাহিত্য চর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। ফলে বাঙালি জাতিও প্রশংসিত হবে, আবার বিশ্ববাসীও দেখবে নতুন জ্ঞানের আলো।
যাহোক ভাষা পরিবর্তনশীল। যুগে যুগে ভাষা লোকমুখে ব্যবহারের ফলে এর পরিবর্তন আসতে থাকে। তাই ভাষা সংরক্ষণ করা জরুরি। এর সঙ্গে কিভাবে এর সমৃদ্ধি ঘটানো যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি। ফলে ভাষা সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজন ভাষাসংক্রান্ত বই গ্রন্থাগারে সংরক্ষণের পাশাপাশি স্কুলের প্রাইমারি শাখা থেকেই ধীরে ধীরে এর সঠিক প্রচলন ও চর্চা সুনিশ্চিত করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো বড় বড় সাহিত্যিক যাঁরা বাংলা ভাষার পথিকৃৎ, তাঁদের লেখার সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিতে হবে স্কুলজীবন থেকেই।
যাতে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি এসব বই পড়ে তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে, যাতে বাংলা ভাষা শুধু বইয়ের পাতাতেই নয়, মানুষের অন্তরেও বিদ্যমান থাকে যুগ যুগ ধরে।
স্বাধীনতা অর্জন করা থেকে যেমন স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন, ঠিক তেমনি আমাদের বাংলা ভাষা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বাংলা ভাষাকে বহু কষ্টে অর্জন করেছি এটি যেমন সত্য, আমরা তার মান-মর্যাদা রক্ষা করতে পারছি না এটিও তেমন সত্য। ধীরে ধীরে এর মান কমছে। দেখা যায়, বন্ধুরা এক হলেই যে ভাষায় যেভাবে কথা বলে, তাতে করে মনে হয় প্রমিত বাংলা আজ বুঝি বিলুপ্তির পথে। আগে শুধু বন্ধুদের সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলত, এখন প্রায় সব জায়গায় এভাবে কথা বলে থাকে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান যে কারণ সেটি হল, বর্তমানে প্রচলিত কিছু ধারাবাহিক এমনকি কিছু এক ঘণ্টার নাটক। এসব নাটকে দর্শক আকর্ষণ করতে ভাষার যে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে, তাতে প্রমিত বাংলা আসলেই হুমকির মুখে পড়েছে।
তাই বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে সরকার ও গণমাধ্যম অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ভাষার সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, যেমন_স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভাষা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। এভাবে একে একে বিভিন্ন জেলায় জেলায় এ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারে। এতে পুরস্কার বিতরণীর ব্যবস্থা থাকলে সবাই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হবে। গণমাধ্যমগুলোর উচিত বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও চর্চার ওপর বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বজায় রাখা। বিশেষ করে সেসব অনুষ্ঠান, যেমন_নাটক, যেগুলো অনেক মানুষকে একসঙ্গে প্রভাবিত করতে পারে, সেসব অনুষ্ঠানে সঠিক বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, যেগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে, তাদের ভাষাও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এখানেও সরকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকা থাকতে পারে, তবে শুধু সরকার ও গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর না করে একেবারে ব্যক্তিপর্যায় থেকেই গবেষণার মাধ্যমে ভাষা সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
যেসব কারণে বাংলা ভাষা আজ হুমকির মুখে, তার অন্যতম কারণ হলো, বিদেশি ভাষার প্রভাব। আর এটা হচ্ছে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে। স্টার প্লাস, সনি টিভি, জিটিবির মতো হিন্দি চ্যানেলগুলোতে প্রতিনিয়ত যে হিন্দি সিরিয়াল হচ্ছে, শুধু সিরিয়ালগুলোই অনেক বড় কারণ হতে পারে বাঙালি নারী সমাজের বাংলা ভাষাকে প্রভাবিত করতে আর তাই হচ্ছে। প্রতিনিয়ত হিন্দি সিরিয়াল দেখতে দেখতে তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ফলে হিন্দি ভাষায় দক্ষ বা পরিচিতি থাকার কারণে অনেক সময় বাংলা বলতে গিয়েও হিন্দি ভাষা ব্যবহার করছে। শুধু যে নারী সমাজই এভাবে প্রভাবিত হচ্ছে তা নয়, যারাই প্রতিনিয়ত দেখছে তারাই এভাবে হিন্দি ভাষায় প্রভাবিত হচ্ছে।
ছোটদের কার্টুনের ক্ষেত্রেও অনেকটা এ রকম ঘটনা ঘটছে। জাপানিজ একটি কার্টুন 'Doremon', যেটা বর্তমানে হিন্দিতে অনুবাদ করে প্রচারিত হচ্ছে, ইদানীং বাচ্চারা এই কার্টুনের প্রতি ঝুঁকে গেছে। যাকেই জিজ্ঞেস করা হয় তারই প্রিয় কার্টুন এটি। ফলে বাচ্চারা এই কার্টুনের পাশাপাশি হিন্দি ভাষার প্রতিও গভীরভাবে ঝুঁকে যাচ্ছে। ফলে সব কিছু মিলিয়ে বাংলা ভাষা বিভিন্নভাবে বিদেশি ভাষা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
পরিশেষে বলতে হয়, যেখানে পুরো বিশ্বে জনসংখ্যার দিক দিয়ে প্রথম পাঁচটি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা অন্যতম, সেখানে এর আন্তর্জাতিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষা শিক্ষা, বাংলা সাহিত্য চর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। ফলে বাঙালি জাতিও প্রশংসিত হবে, আবার বিশ্ববাসীও দেখবে নতুন জ্ঞানের আলো।
No comments