২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩-শহীদ মিনার by রফিকুল ইসলাম
স্বাধীনতার পরে বাহাত্তর সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকেরা তাঁদের প্রথম শহীদ দিবস পালন করেছিলেন ভগ্ন শহীদ মিনারে। বাহাত্তর সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে সভাপতি করে শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য স্থপতিদের কাছ থেকে বাহাত্তর সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নকশা ও পরিকল্পনা আহ্বান করে। শিল্পী হামিদুর রাহমান স্থপতি ছিলেন না, তাই তিনি বিশিষ্ট স্থপতি এম এস জাফরের সঙ্গে মিলিতভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য সরকারের কাছে নকশা ও পরিকল্পনা পেশ করেন। এ নকশাটি হামিদুর রাহমানের সাতান্ন সালের শহীদ মিনারের মূল পরিকল্পনাভিত্তিক ছিল।
মা এবং সন্তানের প্রতীক স্তম্ভ নিয়ে গড়ে ওঠা শহীদ মিনার এ দেশের মানুষের চেতনায় স্থায়ী আসন নিয়েছিল। হামিদুর রাহমানের ছাপান্ন সালের পরিকল্পনাতে শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো মা ও সন্তানের প্রতীক, অর্ধবৃত্তাকারে মা তাঁর শহীদ সন্তানদের অনন্তকাল ধরে রক্ষা করছেন, যাঁরা তাঁর মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজেদের বিসর্জন দিয়েছেন। আর সেই জন্য গৌরবান্বিত মা তাদের দোয়া করছেন, সন্তানদের আত্মত্যাগের মহিমায় মা ঝুঁকে পড়েছেন একটু স্নেহে, আর চারটি সন্তানের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর লক্ষকোটি সন্তানকে দেখতে পাচ্ছেন। বাহাত্তর সালের পরিকল্পনায়ও মায়ের দৃষ্টির প্রতীক স্তম্ভে চোখের নকশা ছিল। স্তম্ভগুলো বিশুদ্ধ শ্বেতমর্মরে ১৪ ফুট উঁচু মঞ্চের ওপর স্থাপিত হবে, সিঁড়ি, রেলিং, সবই সাদা মার্বেল পাথরের করা হবে, শ্বেতমর্মরে সম্পন্ন সমগ্র মিনারটিতে একটি স্বর্গীয় পবিত্রতা ফুটে উঠবে। স্তম্ভগুলোর পাদদেশে পুষ্পস্তবক দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা এবং দুই পাশের বেষ্টনীতে শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিদের অবিস্মরণীয় উদ্ধৃতি লৌহলিপিতে উৎকীর্ণ হবে, বিশেষ আলোর ব্যবস্থায় রাতেও মিনার ও স্তবক পরিদৃশ্যমান থাকবে। মিনারের প্রবেশপথে থাকবে দুটি ভাস্কর্য এবং দুটি সিঁড়িঘরে ছোট পুকুর; ভাস্কর্য দুটি থেকে অবিরাম পানি প্রবাহিত হবে ওই পুকুর দুটিতে। মিনার ছাড়াও পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট ছিল ঘড়িঘর, গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর, ভাস্কর্যসহ মিনারের চতুর্দিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃজন মিলনায়তন, শিল্পকলা ইত্যাদি। মোট কথা, শিল্পী হামিদুর রাহমান এবং স্থপতি জাফর সাতান্ন সালের শহীদ মিনারের মূল পরিকল্পনাকে অক্ষুণ্ন রেখে বাহাত্তর সালে নতুন করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে শহীদ মিনারের পরিকল্পনা পেশ করেন। দেশের খ্যাতনামা আরও অনেক স্থপতি শহীদ মিনারের জন্য এবারেও তাঁদের নকশা ও পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিয়াত্তর সালের ৫ মে বাংলাদেশ সরকারের পূর্তসচিবের দপ্তরে এক সভায় জানানো হয় যে শিল্পী হামিদুর রাহমান ও স্থপতি এম এস জাফরকৃত শহীদ মিনারের নকশা ও পরিকল্পনা সরকার চূড়ান্তভাবে অনুমোদন এবং গ্রহণ করেছে। সরকার ও তাঁদের মধ্যে শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের জন্য একটি চুক্তিপত্রের খসড়াও চূড়ান্ত হয় এবং তা তিয়াত্তর সালের ৭ ডিসেম্বর পূর্তসচিবের কাছে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ব্যাপারটি ওখানেই চাপা পড়ে যায়। ইতিমধ্যে অর্থাৎ তিয়াত্তর সালের একুশে ফেব্রুয়ারির আগে বাংলাদেশ সরকারের পূর্ত বিভাগ, ইয়াহিয়া-টিক্কা বাহিনীর ধ্বংস করা শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো তাড়াহুড়ো করে পুনর্নির্মাণ করে। জোড়াতালি দেওয়া তিয়াত্তর সালের শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো আগের মিনারের স্তম্ভগুলোর চেয়ে উচ্চতায় খাটো এবং সামনের দিকে অতিরিক্ত বেশি ঝুঁকে পড়া। সব মিলিয়ে তিয়াত্তর সালের মেরামত করা শহীদ মিনারে মঞ্চ ও স্তম্ভগুলোর আনুপাতিক সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়নি।
শহীদ মিনারের পুনরায় সংস্কার সাধন করা হয় লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে। আশির দশকে শহীদ মিনারের মূল মঞ্চ ও স্তম্ভগুলো অবিকৃত রেখে মঞ্চ ও সোপানগুলো সম্মুখ দিকে সম্প্রসারিত আর শহীদ মিনারের নিচের ঘরগুলো বন্ধ এবং সম্মুখ প্রাঙ্গণকে উঁচু করে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়, সামনের রাস্তাটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার সংলগ্ন করে। এই সংস্কারের ফলে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের আয়তন এবং সোপানসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু মূল মঞ্চ ও স্তম্ভগুলো আরও উঁচু না করে মিনারের মঞ্চ ও স্তম্ভগুলোকে উঁচু ও সম্মুখে প্রসারিত করায় তা সোপান ও প্রাঙ্গণের তুলনায় সংগতিবিহীন হয়ে পড়েছে।
বর্তমান শহীদ মিনারের যে পরিবেশ তা কাঙ্ক্ষিত নয়, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহীদ দিবসের আনুষ্ঠানিকতার জন্য শহীদ মিনারে যে পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, বছরের বাকি ৩৬৪ দিন তা রক্ষিত হয় না। ফলে বছরের অধিকাংশ দিন শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য লঙ্ঘিত হয়।
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং ২০০০ সাল থেকে সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। শিক্ষক সমিতিকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি মধ্যাহ্ন পর্যন্ত প্রতিবছর শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকে কিন্তু তারপর বছরের বাকি দিনগুলো শহীদ মিনার এলাকাটি থাকে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কিন্তু সাভারে অবস্থিত ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধ’ বা সেনানিবাসের ‘শিখা অনির্বাণ’-এর মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো সরকারি ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে শহীদ মিনার বছরব্যাপী বিভিন্ন সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহূত হলেও দিবারাত্রি থাকে অরক্ষিত। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পর ২০০৫ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ৫৩ বছর, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ৪০ বছর চলে গেছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণার পর ১২ বছর কেটে গেছে কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো সরকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মনে হয় ওই শহীদ স্মারক স্তম্ভগুলো বছরের ৩৬৩ দিন আত্মবিস্মৃত বাঙালি জাতির স্মারকরূপে দণ্ডায়মান থাকে!
মা এবং সন্তানের প্রতীক স্তম্ভ নিয়ে গড়ে ওঠা শহীদ মিনার এ দেশের মানুষের চেতনায় স্থায়ী আসন নিয়েছিল। হামিদুর রাহমানের ছাপান্ন সালের পরিকল্পনাতে শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো মা ও সন্তানের প্রতীক, অর্ধবৃত্তাকারে মা তাঁর শহীদ সন্তানদের অনন্তকাল ধরে রক্ষা করছেন, যাঁরা তাঁর মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজেদের বিসর্জন দিয়েছেন। আর সেই জন্য গৌরবান্বিত মা তাদের দোয়া করছেন, সন্তানদের আত্মত্যাগের মহিমায় মা ঝুঁকে পড়েছেন একটু স্নেহে, আর চারটি সন্তানের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর লক্ষকোটি সন্তানকে দেখতে পাচ্ছেন। বাহাত্তর সালের পরিকল্পনায়ও মায়ের দৃষ্টির প্রতীক স্তম্ভে চোখের নকশা ছিল। স্তম্ভগুলো বিশুদ্ধ শ্বেতমর্মরে ১৪ ফুট উঁচু মঞ্চের ওপর স্থাপিত হবে, সিঁড়ি, রেলিং, সবই সাদা মার্বেল পাথরের করা হবে, শ্বেতমর্মরে সম্পন্ন সমগ্র মিনারটিতে একটি স্বর্গীয় পবিত্রতা ফুটে উঠবে। স্তম্ভগুলোর পাদদেশে পুষ্পস্তবক দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা এবং দুই পাশের বেষ্টনীতে শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিদের অবিস্মরণীয় উদ্ধৃতি লৌহলিপিতে উৎকীর্ণ হবে, বিশেষ আলোর ব্যবস্থায় রাতেও মিনার ও স্তবক পরিদৃশ্যমান থাকবে। মিনারের প্রবেশপথে থাকবে দুটি ভাস্কর্য এবং দুটি সিঁড়িঘরে ছোট পুকুর; ভাস্কর্য দুটি থেকে অবিরাম পানি প্রবাহিত হবে ওই পুকুর দুটিতে। মিনার ছাড়াও পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট ছিল ঘড়িঘর, গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর, ভাস্কর্যসহ মিনারের চতুর্দিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃজন মিলনায়তন, শিল্পকলা ইত্যাদি। মোট কথা, শিল্পী হামিদুর রাহমান এবং স্থপতি জাফর সাতান্ন সালের শহীদ মিনারের মূল পরিকল্পনাকে অক্ষুণ্ন রেখে বাহাত্তর সালে নতুন করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে শহীদ মিনারের পরিকল্পনা পেশ করেন। দেশের খ্যাতনামা আরও অনেক স্থপতি শহীদ মিনারের জন্য এবারেও তাঁদের নকশা ও পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিয়াত্তর সালের ৫ মে বাংলাদেশ সরকারের পূর্তসচিবের দপ্তরে এক সভায় জানানো হয় যে শিল্পী হামিদুর রাহমান ও স্থপতি এম এস জাফরকৃত শহীদ মিনারের নকশা ও পরিকল্পনা সরকার চূড়ান্তভাবে অনুমোদন এবং গ্রহণ করেছে। সরকার ও তাঁদের মধ্যে শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের জন্য একটি চুক্তিপত্রের খসড়াও চূড়ান্ত হয় এবং তা তিয়াত্তর সালের ৭ ডিসেম্বর পূর্তসচিবের কাছে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ব্যাপারটি ওখানেই চাপা পড়ে যায়। ইতিমধ্যে অর্থাৎ তিয়াত্তর সালের একুশে ফেব্রুয়ারির আগে বাংলাদেশ সরকারের পূর্ত বিভাগ, ইয়াহিয়া-টিক্কা বাহিনীর ধ্বংস করা শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো তাড়াহুড়ো করে পুনর্নির্মাণ করে। জোড়াতালি দেওয়া তিয়াত্তর সালের শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো আগের মিনারের স্তম্ভগুলোর চেয়ে উচ্চতায় খাটো এবং সামনের দিকে অতিরিক্ত বেশি ঝুঁকে পড়া। সব মিলিয়ে তিয়াত্তর সালের মেরামত করা শহীদ মিনারে মঞ্চ ও স্তম্ভগুলোর আনুপাতিক সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়নি।
শহীদ মিনারের পুনরায় সংস্কার সাধন করা হয় লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে। আশির দশকে শহীদ মিনারের মূল মঞ্চ ও স্তম্ভগুলো অবিকৃত রেখে মঞ্চ ও সোপানগুলো সম্মুখ দিকে সম্প্রসারিত আর শহীদ মিনারের নিচের ঘরগুলো বন্ধ এবং সম্মুখ প্রাঙ্গণকে উঁচু করে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়, সামনের রাস্তাটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার সংলগ্ন করে। এই সংস্কারের ফলে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের আয়তন এবং সোপানসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু মূল মঞ্চ ও স্তম্ভগুলো আরও উঁচু না করে মিনারের মঞ্চ ও স্তম্ভগুলোকে উঁচু ও সম্মুখে প্রসারিত করায় তা সোপান ও প্রাঙ্গণের তুলনায় সংগতিবিহীন হয়ে পড়েছে।
বর্তমান শহীদ মিনারের যে পরিবেশ তা কাঙ্ক্ষিত নয়, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহীদ দিবসের আনুষ্ঠানিকতার জন্য শহীদ মিনারে যে পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, বছরের বাকি ৩৬৪ দিন তা রক্ষিত হয় না। ফলে বছরের অধিকাংশ দিন শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য লঙ্ঘিত হয়।
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং ২০০০ সাল থেকে সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। শিক্ষক সমিতিকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি মধ্যাহ্ন পর্যন্ত প্রতিবছর শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকে কিন্তু তারপর বছরের বাকি দিনগুলো শহীদ মিনার এলাকাটি থাকে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কিন্তু সাভারে অবস্থিত ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধ’ বা সেনানিবাসের ‘শিখা অনির্বাণ’-এর মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো সরকারি ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে শহীদ মিনার বছরব্যাপী বিভিন্ন সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহূত হলেও দিবারাত্রি থাকে অরক্ষিত। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পর ২০০৫ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ৫৩ বছর, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ৪০ বছর চলে গেছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণার পর ১২ বছর কেটে গেছে কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো সরকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মনে হয় ওই শহীদ স্মারক স্তম্ভগুলো বছরের ৩৬৩ দিন আত্মবিস্মৃত বাঙালি জাতির স্মারকরূপে দণ্ডায়মান থাকে!
No comments