মার্চ ১৯৫৩-প্রথম সংকলন by কাইয়ুম চৌধুরী
চরম ভুলটি করেছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলা ভাষার ওপর হাত দিয়ে। একটি জনগোষ্ঠীর কাছে তাঁর মাতৃভাষা যে কতটা জরুরি ও প্রিয়, সেটা বোঝার ক্ষমতা জিন্নাহ সাহেবের ছিল কি না, সন্দেহ। বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ নিরক্ষর থাকলেও মাতৃভাষা তাদের একটি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যম ছিল।
লোকগান, যাত্রাপালা, কবিগান প্রভৃতির সাহায্যে এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত ছিল। যে শিশু মায়ের মুখে ‘ছেলে ঘুমাল, পাড়া জুড়াল, বর্গী এল দেশে’ শুনে ঘুমিয়ে যায়, সেখানে ভাষার ওপর বর্গির হামলা সহনীয় পর্যায়ে যে থাকবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। জিন্নাহ সাহেবের মাতৃভাষা কী ছিল? উর্দু, না পার্সি? উনি তো লিংকনস ইনের ব্যারিস্টার। ইংরেজিতে কেতাদুরস্ত। রুটি-রুজি ইংরেজি ভাষার মাধ্যমেই। তাঁর পক্ষে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা দুষ্কর। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে তিনি উর্দু চাপিয়ে দিলেন আমাদের ওপর, যে উর্দু পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলেরই ভাষা নয়। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা যে বাংলা, তাকে তিনি আমলেই নিলেন না। বাংলায় সচেতন মানুষের দাবি, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হোক। জিন্নাহ সাহেবের একগুঁয়েমিতে ভেস্তে গেল সবকিছু। গড়ে উঠল আন্দোলন। যে আন্দোলনকে শাসকগোষ্ঠী জেল-জুলুমের মাধ্যমে দমাতে চেয়েছে। মুখে ভাষা না থাকলে রাষ্ট্রীয় সব কর্মকাণ্ডে বাঙালির অবস্থান থাকবে শূন্যের কোঠায়, এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে মুখরিত হলো বাংলাদেশ। তারই পরিণতিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রজনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ। শহীদ হলেন আবদুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমদ ও আবুল বরকত। দাবানলের মতো গুলির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল সারা শহরে। আমরা চারুকলার ছাত্ররা তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমাদের একটি প্রদর্শনীর জন্য নিমতলীতে ঢাকা জাদুঘরে। বড় বড় পাথরের ভাস্কর্য সরিয়ে ছবি টাঙানোর ব্যবস্থা করছিলাম। কামরুল ভাই পোস্টার আঁকছিলেন। মুর্তজা বশীর, ইমদাদ হোসেন মিছিলে। প্রদর্শনীর আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে। উদ্বোধন করবেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ফিরোজ খান নূনের পত্নী ভিকারুননিসা নূন। নিমতলী থেকে আমতলা, মেডিকেল কলেজ খুব দূরে নয়। ত্বরিত গতিতে গুলির খবর ছড়িয়ে পড়ল। কামরুল ভাই তুলি ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘প্রদর্শনী হবে না। বন্ধ করো সব।’ এরই মধ্যে মুর্তজা বশীর রক্তমাখা জামা গায়ে হাজির। আবুল বরকতের পাশেই ছিলেন তিনি। সারা শরীরে বরকতের রক্ত। থর থর করে কাঁপছিলেন। জয়নুল আবেদিন নির্দেশ দিলেন বশীরকে তাঁর বাসা বেগমবাজারে পাঠিয়ে দিতে। চতুর্দিকে কেমন একটা থমথমে ভাব নেমে এল। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি গুলি চলেছে ছাত্রজনতার ওপর। ২৪ ফেব্রুয়ারিতেও দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার। দমননীতি যত তীব্র, আন্দোলনও দানা বাঁধছে দ্রুত। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য। ছাত্ররা ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। সেই সঙ্গে আন্দোলনও ছড়িয়ে গেল সারা বাংলাদেশে।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব অপরিসীম। বিশেষ করে যাঁরা সৃষ্টিশীল, এই নতুন পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের সৃষ্টির বাঁধ খুলে গেল। চট্টগ্রাম থেকে মাহবুব উল আলম চৌধুরী প্রথম একুশের কবিতা লিখলেন, ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসীর দাবী নিয়ে এসেছি।’ চেষ্টা শুরু হলো একটি সংকলনের, যেখানে অবদমিত বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের উষ্ণ প্রস্রবণের প্রবাহ লিপিবদ্ধ করার। হাসান হাফিজুর রহমানের উদ্যোগে লেখার মাধ্যমে সবাইকে একত্র করার ব্যবস্থা। একদল তরুণ, যারা সবাই তখন ভার্সিটির ছাত্র, এই সংকলন প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মেডিকেল কলেজের উল্টো দিকে বর্তমান বুয়েটের দেয়ালের পাশে তখন মোহাম্মদ সুলতানের প্রকাশনা পুঁথিপত্রের অবস্থান। তিনি প্রকাশক। মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জড়ো হলেন শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক। কিন্তু সংকলন প্রকাশের জন্য অর্থের প্রয়োজন। অর্থ কোথায়? এ রকম একটি প্রকল্পে কে জোগাবে অর্থ? হাসান হাফিজুর রহমান গ্রামের বাড়িতে গেলেন অর্থের জন্য। ধানি জমি বিক্রি করে অর্থের জোগান দিলেন। লেখা সংগ্রহ হলো। ভাবতে অবাক লাগে, একঝাঁক তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪ এর মধ্যে, শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে এ রকম একটি ভবিষ্যৎ স্বপ্নের স্ফুলিঙ্গকে পত্রস্থিত করার প্রয়াস নিল, যা আজ ইতিহাস হয়ে আছে। এদের হাত দিয়ে কী অসম্ভব সুন্দর পঙিক্ত বেরিয়ে এসেছে, যা আজও আমাদের উদ্বেলিত করে। আলাউদ্দিন আল আজাদের কলমে ‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো/ চার কোটি পরিবার/ খাড়া রয়েছি তো।’ তেমনি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে/ নুয়ে পড়েছে লতাটা,/ সজনে ডাঁটায়/ ভরে গেছে গাছটা,/ আর, আমি ডালের বড়ি/ শুকিয়ে রেখেছি,/ খোকা তুই কবে আসবি।/ কবে ছুটি? চিঠিটা তার পকেটে ছিল/ ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।’ এ রকম অজস্র উদাহরণ। প্রতি ছত্রে, প্রতি পৃষ্ঠায়। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর একুশের অমর সংগীত ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি?’ এই সংকলনেই ছাপা হয়েছিল। মুর্তজা বশীর লিখেছিলেন ‘একটি বেওয়ারিশ ডায়েরীর কয়েকটি পাতা।’ সঙ্গে ইলাস্ট্রেশনও ছিল। তিনি কালি-কলমে স্কেচ করেছেন। ছবি তৈরি করেছেন লিনোকাটে। যে ছবি তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির রাজপথে। সঙ্গে শিল্পী ছিলেন বিজন চৌধুরী। সে সময় ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন আমিনুল ইসলাম। সাদা রঙের কভারে লাল রঙে ছাপা তারকাঁটার ছবি। তারই ওপরে একই রঙে ফেস্টুনের মতো করে ওপরে-নিচে কাত করে লম্বালম্বিভাবে বইয়ের নাম ও সম্পাদকের নাম। খুব সহজ-সরলভাবে আঁকা। সবকিছু মিলিয়ে সেই বায়ান্ন সালে ছাপাখানার সীমিত সুযোগের মধ্যে শঙ্কা আর অস্থিরতার ছাপ নিয়ে প্রকাশিত বইটি আজ তারুণ্যের বিস্ফোরণের একটি প্রতীক বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের সংস্কৃতির রূপরেখার দিকনির্দেশনাও দিয়েছিল এই গ্রন্থটিই। যেসব তরুণ লেখার তাড়নায় যে বিজয় পতাকা উড়িয়েছিল, তারাই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, কবিতা ও সংগীতের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অসাধারণ সব সৃষ্টিকর্ম দেশকে, জাতিকে উপহার দিয়েছে।
এই সংকলনটি ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয়নি। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে। বের হওয়ার পরপরই এটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় সরকার কর্তৃক। খুব সম্ভব ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ১৯৫৮ সালে আবার সামরিক শাসন জারি হলো। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলো। শুরু হলো ফেব্রুয়ারি থেকেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে একুশে সংকলন প্রকাশের জোয়ার। তার পরে বিভিন্ন হল থেকে, পাড়া-মহল্লা থেকে, সারা দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো থেকে অসংখ্য সংকলন প্রকাশিত হতে থাকে। এই সংকলনগুলোর উন্নত মানের লেখা, ছাপা, বাঁধাই দেখে মুক্তধারার স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহা সেরা সংকলনের জন্য পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই সংকলনগুলোকে কেন্দ্র করে লেখা, রেখা ও ছাপার সৌকর্য বহুগুণে বেড়ে যায় এবং অনেক নতুন লেখক ও শিল্পী বিদগ্ধ মহলে পরিচিতি পায়। সময় গড়িয়ে যায়। ছাপা কাগজের ব্যয়ভার বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে এই সব একুশের সংকলনের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। আজ সংকলনের প্রকাশনা নেই, কিন্তু একুশের বইমেলায় পুস্তক প্রকাশে আরেকটি মাত্রা যোগ হয়েছে।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব অপরিসীম। বিশেষ করে যাঁরা সৃষ্টিশীল, এই নতুন পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের সৃষ্টির বাঁধ খুলে গেল। চট্টগ্রাম থেকে মাহবুব উল আলম চৌধুরী প্রথম একুশের কবিতা লিখলেন, ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসীর দাবী নিয়ে এসেছি।’ চেষ্টা শুরু হলো একটি সংকলনের, যেখানে অবদমিত বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের উষ্ণ প্রস্রবণের প্রবাহ লিপিবদ্ধ করার। হাসান হাফিজুর রহমানের উদ্যোগে লেখার মাধ্যমে সবাইকে একত্র করার ব্যবস্থা। একদল তরুণ, যারা সবাই তখন ভার্সিটির ছাত্র, এই সংকলন প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মেডিকেল কলেজের উল্টো দিকে বর্তমান বুয়েটের দেয়ালের পাশে তখন মোহাম্মদ সুলতানের প্রকাশনা পুঁথিপত্রের অবস্থান। তিনি প্রকাশক। মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। জড়ো হলেন শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক। কিন্তু সংকলন প্রকাশের জন্য অর্থের প্রয়োজন। অর্থ কোথায়? এ রকম একটি প্রকল্পে কে জোগাবে অর্থ? হাসান হাফিজুর রহমান গ্রামের বাড়িতে গেলেন অর্থের জন্য। ধানি জমি বিক্রি করে অর্থের জোগান দিলেন। লেখা সংগ্রহ হলো। ভাবতে অবাক লাগে, একঝাঁক তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪ এর মধ্যে, শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে এ রকম একটি ভবিষ্যৎ স্বপ্নের স্ফুলিঙ্গকে পত্রস্থিত করার প্রয়াস নিল, যা আজ ইতিহাস হয়ে আছে। এদের হাত দিয়ে কী অসম্ভব সুন্দর পঙিক্ত বেরিয়ে এসেছে, যা আজও আমাদের উদ্বেলিত করে। আলাউদ্দিন আল আজাদের কলমে ‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো/ চার কোটি পরিবার/ খাড়া রয়েছি তো।’ তেমনি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে/ নুয়ে পড়েছে লতাটা,/ সজনে ডাঁটায়/ ভরে গেছে গাছটা,/ আর, আমি ডালের বড়ি/ শুকিয়ে রেখেছি,/ খোকা তুই কবে আসবি।/ কবে ছুটি? চিঠিটা তার পকেটে ছিল/ ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।’ এ রকম অজস্র উদাহরণ। প্রতি ছত্রে, প্রতি পৃষ্ঠায়। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর একুশের অমর সংগীত ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি?’ এই সংকলনেই ছাপা হয়েছিল। মুর্তজা বশীর লিখেছিলেন ‘একটি বেওয়ারিশ ডায়েরীর কয়েকটি পাতা।’ সঙ্গে ইলাস্ট্রেশনও ছিল। তিনি কালি-কলমে স্কেচ করেছেন। ছবি তৈরি করেছেন লিনোকাটে। যে ছবি তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির রাজপথে। সঙ্গে শিল্পী ছিলেন বিজন চৌধুরী। সে সময় ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন আমিনুল ইসলাম। সাদা রঙের কভারে লাল রঙে ছাপা তারকাঁটার ছবি। তারই ওপরে একই রঙে ফেস্টুনের মতো করে ওপরে-নিচে কাত করে লম্বালম্বিভাবে বইয়ের নাম ও সম্পাদকের নাম। খুব সহজ-সরলভাবে আঁকা। সবকিছু মিলিয়ে সেই বায়ান্ন সালে ছাপাখানার সীমিত সুযোগের মধ্যে শঙ্কা আর অস্থিরতার ছাপ নিয়ে প্রকাশিত বইটি আজ তারুণ্যের বিস্ফোরণের একটি প্রতীক বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের সংস্কৃতির রূপরেখার দিকনির্দেশনাও দিয়েছিল এই গ্রন্থটিই। যেসব তরুণ লেখার তাড়নায় যে বিজয় পতাকা উড়িয়েছিল, তারাই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, কবিতা ও সংগীতের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অসাধারণ সব সৃষ্টিকর্ম দেশকে, জাতিকে উপহার দিয়েছে।
এই সংকলনটি ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয়নি। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে। বের হওয়ার পরপরই এটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় সরকার কর্তৃক। খুব সম্ভব ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ১৯৫৮ সালে আবার সামরিক শাসন জারি হলো। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলো। শুরু হলো ফেব্রুয়ারি থেকেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে একুশে সংকলন প্রকাশের জোয়ার। তার পরে বিভিন্ন হল থেকে, পাড়া-মহল্লা থেকে, সারা দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো থেকে অসংখ্য সংকলন প্রকাশিত হতে থাকে। এই সংকলনগুলোর উন্নত মানের লেখা, ছাপা, বাঁধাই দেখে মুক্তধারার স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহা সেরা সংকলনের জন্য পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই সংকলনগুলোকে কেন্দ্র করে লেখা, রেখা ও ছাপার সৌকর্য বহুগুণে বেড়ে যায় এবং অনেক নতুন লেখক ও শিল্পী বিদগ্ধ মহলে পরিচিতি পায়। সময় গড়িয়ে যায়। ছাপা কাগজের ব্যয়ভার বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে এই সব একুশের সংকলনের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। আজ সংকলনের প্রকাশনা নেই, কিন্তু একুশের বইমেলায় পুস্তক প্রকাশে আরেকটি মাত্রা যোগ হয়েছে।
No comments